শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাল মিসর ও ইতালি : নির্বাচনের প্রশংসা স্কটিশ এমপির, আরো কয়েক বিদেশি নেতার শুভেচ্ছা

আগের সংবাদ

অবশেষে পশ্চিমাদের ইউটার্ন : সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে রাজি যুক্তরাষ্ট্র > নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক

পরের সংবাদ

‘স্বতন্ত্র’ নিয়ে কী ভাবছে দল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, উৎসবমুখর নির্বাচন শেষে সরকার গঠনও শেষ করেছে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বসতে যাচ্ছে (৩০ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। তবে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভবিষ্যত এখনো অস্পষ্ট। তারা তাকিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। স্বতন্ত্র লড়ে সংসদ সদস্য হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা সংসদেও আওয়ামী লীগের হয়েই থাকতে চান; তবে তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ কি চায়- এর ওপর। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ‘স্বতন্ত্র’ হয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগ হিসেবেই থাকবেন। এতে কোনো আইনি জটিলতা নেই। আর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখনো এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সংসদ অধিবেশন শুরুর পর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু করতে গত সোমবার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সংসদ সচিবালয় থেকে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে ৩০ জানুয়ারি বিকাল ৩টায়। এর আগে গত বুধবার শপথ নিয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যরা। তবে এবার সংসদের প্রধান বিরোধী দল কারা হবে এবং বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন- তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের আসন ৬২টি। এর মধ্যে চারজন ছাড়া বাকি সবাই হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির পদধারী নেতা, নয়তো সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
গাইডলাইন দেবে দল, বিশ্বাস স্বতন্ত্রদের : ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী), যুবলীগের প্রেসডিয়াম সদস্য। মাদারীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম। তিনি কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কেয়া চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। ময়মনসিংহ-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবিএম আনিছুজ্জামান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য। বরগুনা-১ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু। বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদেও ছিলেন। স্বতন্ত্র একাধিক সংসদ সদস্য ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, বিরোধী দলে যাব কীভাবে? আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমাদের দলীয় পদ-পদবি রয়েছে। নির্বাচনের কৌশলগত কারণে স্বতন্ত্র হলেও আমরা আওয়ামী লীগেরই এমপি। এলাকার

মানুষের কাছে উন্নয়নের প্রতিশ্রæতি আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করব।
জানতে চাইলে গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, কৌশলগত কারণে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমরা তো আওয়ামী লীগেরই মনোনয়ন চেয়েছি। কিন্তু দল সবাইকে মনোনয়ন দিতে পারে না। একজনজনকে দিয়েছে। কিন্তু কোনো আসনেই কেউ যেন প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছাড়া নির্বাচিত না হতে পারে, সেজন্য আমরা অংশ নিয়েছি। দলের কৌশল বাস্তবায়নের জন্য আমরা নির্বাচন করেছি। আমাদের অংশগ্রহণে দলের কৌশল সফল হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের লোক। যে কৌশল অবলম্বন করে নির্বাচন হওয়ার কারণে নির্বাচন জমজমাট হয়েছে, সফল হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। তিনি বলেন, সংসদে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আমরা কীভাবে অংশগ্রহণ করব, কীভাবে দায়িত্ব বাস্তবায়ন করব, আমাদের দল একটা গাইডলাইন দেবে। আমরা তাই বাস্তবায়ন করব। আর দলের ভেতরে আমাদের মধ্যে যে বিভক্তি ছিল, তা মিটে গেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই দলের জন্য একটা গাইড লাইন দিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচনের পর দলের সবাই এক। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আমার এলাকায় আমি বলে দিয়েছি, নির্বাচনের পর আমরা সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী। আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই।
হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, তার রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা, আমার আদর্শিক জায়গা যেটা আওয়ামী লীগের নির্দেশনার বাইরে আমি কোনো চিন্তা করি না। কারণ আমার আইডেন্টিটি আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত এমপি করেছেন। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু না পেয়ে পরে দলের অনুমোদনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই মেনেই ভূমিকা পালন করব।
ময়মনসিংহ-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামান বলেন, আমি আওয়ামী লীগের লোক। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, যাদের নৌকা প্রতীক দিতে পারিনি, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়াবেন। এখন দল আমাদের যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবে কাজ করব। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভূমিকা কী হবে, সেটা দল ঠিক করবে।
সংসদ অধিবেশন শুরু হলে বোঝা যাবে : নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংসদে বিরোধী দল কে হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এর কিছুক্ষণ পরই বিদেশি সাংবাদিক-পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধী দলকে তাদের নিজেদের সংগঠিত করতে হবে। আপনি আমাকে বিরোধী দল পছন্দ করতে বলতে পারেন না। অবশ্য আপনি চাইলে আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা আসলে বিরোধী দল হবে না।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এবং তারা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা কী করবেন, বিরোধী দল কারা হবে, সেসব সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল থেকেই আসবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, এখনো স্বতন্ত্র বা বিরোধী দল- এসব নিয়ে আলোচনা হয়নি। অধিবেশন শুরুর পর দলীয় ফোরামে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
চিফ হুইফ নূর ই আলম চৌধুরী লিটন ভোরের কাগজকে বলেন, এখনো এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সংসদ অধিবেশন শুরু হলে বোঝা যাবে। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।
আইনি জটিলতা নেই : সংসদে বিরোধী দল কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা স্পিকারের। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২(১) (ট) ধারায় বলা হয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতা অর্থ হলো, ‘স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা।’ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত ক্ষেত্রমতো দল বা অধিসংঘের নেতা।’ এ ছাড়া ‘বিরোধী দলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার)’ আইনেও একই সংজ্ঞা দেয়া আছে।
এর আগে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী ১৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে হাজী সেলিমের নেতৃত্বে একটি জোট তৈরি করতে দেখা গিয়েছিল। সেই জোটকে আনুপাতিকহারে তিনজন সংরক্ষিত নারী সদস্যের কোটাও দেয়া হয়েছিল। সাড়ে তিন বছর পর অবশ্য সেই জোটের নেতা হাজী সেলিমসহ বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবার আওয়ামী লীগে ফিরে যান।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চারজন ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় সংসদে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে কোনো আইনি জটিলতা নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, স্বতন্ত্র এমপিদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের। নির্বাচন জমজমাট ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য দলীয় অনুমতি নিয়েই তারা নির্বাচনে গেছেন। স্বতন্ত্র এমপি হলেও তাদের দলীয় পদ-পদবি রয়েছে। তারা যদি এখন সংসদে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে চান, এতে আইনি কোনো বাধা নেই। কারণ স্বতন্ত্র থেকে পাস করলেও তারা মূলত আওয়ামী লীগের। দলীয় আদর্শ এক। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়