গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

সরকারের তিন অগ্রাধিকার

পরের সংবাদ

স্মার্ট মন্ত্রিসভার যাত্রা হলো শুরু : ব্যাপক রদবদল ঘটিয়ে নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন, স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার, কাল টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : নতুন রক্ত সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট মন্ত্রিসভার। দক্ষ, যোগ্য, ক্লিন ইমেজের একঝাঁক নবীন-প্রবীণের মিশেলে স্মার্ট মন্ত্রিসভার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছর জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করবে সরকার। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কাজ করবে নতুন মন্ত্রিসভা। পৌষের হিমেল ঠাণ্ডায় রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে গতকাল বৃহস্পতিবার শপথ নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জনগণকে দেয়া ম্যান্ডেট রক্ষার পাশাপাশি আবারো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন তাদের অনুভূতি প্রকাশে।
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বঙ্গভবন। শপথের পর পরই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উচ্ছ¡াস, আনন্দ ছুঁয়ে যায় পুরো বঙ্গভবন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণ অভিবাদন জানান। শপথের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জড়িয়ে ধরেন ছোট বোন শেখ রেহানাকে। আনন্দ উদ্বেলিত নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের অভিষিক্ত শুভেচ্ছার কাছে ¤øান হয়ে পড়ে বঙ্গভবনের লাল-সবুজ-হলুদ রঙের ঝাড়বাতির আলো। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অভিনন্দন আর শুভেচ্ছায় ভাসছেন প্রধানমন্ত্রী এবং নতুন সরকার।
শপথগ্রহণ এবং দায়িত্ব বণ্টনের পর আগামীকাল শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
এদিকে শপথ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং ফার্স্টলেডির আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমন্ত্রিতরা। অন্যদিকে বঙ্গভবনের বাইরের দুপাশের রাস্তা ধরে হাজারো মানুষের ভিড়। নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে শীতের রাতের ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ফুল নিয়ে উপস্থিত ছিলেন অনেকেই।
৪ মন্ত্রণালয় ও দুটি বিভাগের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর : গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসন থেকে অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারটি মন্ত্রণালয় ও দুটি বিভাগের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্ত্রণালয়গুলো নিজের হাতে রেখেছেন সেগুলো হলো- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ তার হাতে থাকবে।
অপরিবর্তিত রইল ওবায়দুল কাদেরের মন্ত্রণালয় : আবারো সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ এবং সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন ওবায়দুল কাদের। শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন কাদের।
ব্যাপক রদবদল ঘটিয়ে নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে রয়েছেন ২৫ মন্ত্রী এবং ১১ প্রতিমন্ত্রী। এদের মধ্যে ১৪ জন নতুন মুখ। আর গতবারের আগের কোনো সময় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এমন পাঁচজনকে এবার ফেরানো হয়েছে। আগের মন্ত্রীদের দপ্তরে ব্যাপক রদবদল ঘটিয়ে নতুন সরকারের মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন পেশাদার কূটনীতিক এ এইচ মাহমুদ আলী,

যিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে পাঁচ বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পড়ে পরে সেখানেই কিছুদিন শিক্ষকতা করেন তিনি। সাবেক এই শিক্ষক এবার সামলাবেন অর্থ মন্ত্রণালয়। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব পেয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। গত পাঁচ বছর তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে আসা হাছান মাহমুদ ২০০৯ সালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তবে তখন অল্প কিছুদিন পর তাকে সরিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী করা হয়। বাণিজ্যে পূর্ণমন্ত্রী দেয়া হয়নি। প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটুকে। টাঙ্গাইলের এই সংসদ সদস্যের পিতা ছিলেন রাজধানী মোহাম্মদপুর এলাকার জনপ্রিয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন। তথ্য ও স¤প্রচার প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে। ঢাকা-১৭ আসনের তরুণ এই সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। আর উপমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলে আসা মহিবুল হাসান চৌধুরীকে করা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে তরুণ নওফেলকে একাই সামলাতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে আ ক ম মোজাম্মেল হক, আনিসুল হক, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, আসাদুজ্জামান খান (কামাল) মো. তাজুল ইসলাম, সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং ইয়াফেস ওসমানকে একই দপ্তরে রাখা হয়েছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককেও একই দপ্তরে রাখা হয়েছে। এদিকে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী করে একই দপ্তর দেয়া হয়েছে ফরিদুল হক খান এবং ফরহাদ হোসেনকে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানকে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়, মেজর (অব.) আবদুস সালামকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে ভূমি মন্ত্রণালয়, সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, মো. আবদুর রহমানকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মো. আবদুস শহীদকে কৃষি মন্ত্রণালয়, ডা. সামন্ত লাল সেনকে (টেকনোক্র্যাট) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক সচিব, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মো. জিল্লুল হাকিমকে রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং নাজমুল হাসানকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ১১ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে নসরুল হামিদকে বিদ্যুৎ বিভাগ; খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; জুনাইদ আহমেদকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; জাহিদ ফারুককে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; সিমিন হোসেন রিমিকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়; কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়; মহিববুর রহমানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়; শফিকুর রহমান চৌধুরীকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; রুমানা আলীকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আহসানুল ইসলামকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ৩৭ জন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া পূর্ণ মন্ত্রী ২৫ জন। এর মধ্যে দুজন টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন)। এছাড়া ১১ জন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। প্রথমে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা শপথ নেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়