রাজউক : তথ্য অধিকার আইন ও সিটিজেন চার্টার বিষয়ক কর্মশালা

আগের সংবাদ

মাথা নত করি না, তাই চক্রান্ত : নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী > যাদের নর্দমা থেকে তুলে এনেছি, তারা টাকা ছড়াচ্ছে

পরের সংবাদ

নাশকতার জবাব ভোটে দিন : ঢাকায় নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সিলেট, রংপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের পর এবার ঢাকা মহানগরীতে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তুললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর কলাবাগান মাঠের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকায় ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। ৭ জানুয়ারি পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের উপযুক্ত জবাব দেয়ারও অনুরোধ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বহু আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা মানুষের ভোটাধিকার অর্জন করেছি। জনগণের সেই ভোটের অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে- এতো সাহস তাদের (বিএনপি-জামায়াতের) নেই, করতেও পারবে না। আসলে এরা দেশের সর্বনাশ করতে চায়। তাই প্রত্যেক ভোটার সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তার জবাব দেবেন। আপনারা ভোট দেবেন, ভোট রক্ষাও করবেন। বাংলাদেশের অগ্রগতি কেউ ঠেকাতে পারবে না।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত বিশাল এ নির্বাচনী জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ কামালের সঞ্চালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী নায়ক ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান, প্রবীণ অভিনেত্রী সুজাতা আজিম, স্বেচ্ছ¡াসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষের জন্য কাজ করে তাদের হৃদয় জয় করে নৌকা মার্কায় ভোট পাই, আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না। আর জিয়া-এরশাদ ভোট চুরি করে, এটা হাইকোর্টের রায়ে আছে। জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখলও অবৈধ। এবারো বিএনপি ভোট চুরি করতে পারবে না বলে নির্বাচনে আসেনি। কারণ জনগণের ভোট চুরি করাই তাদের চরিত্র। চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের (বিএনপি) সৃষ্টি। ক্ষমতা চুরি, ক্ষমতা দখল, ভোট চুরি এছাড়া আর কিছুই পারে না। সেজন্য নির্বাচন করতে চায় না, নির্বাচন বানচাল করতে চায়।

কিছু বুদ্ধিজীবী ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার জবাবও আমি দেব। কারণ তারা মানুষকে মিথ্যা তথ্য বলে বিভ্রান্ত করে। তাদের কাজই বিভ্রান্ত করা। গণতন্ত্র ব্যবস্থা বজায় থাকলে নাকি তাদের মূল্য থাকে না। আর যদি অস্বাভাবিক সরকার থাকে তাদের মূল্য নাকি বেড়ে যায়। কার কত মূল্য এখন দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখতে হবে, সেটা দেখতে চাই।
নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নূহ নবীর নৌকা মহাপ্লাবনে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকাই মানুষের প্রাণ বাঁচায়। নৌকাই উন্নতি দেয়। নৌকা নিশ্চিত জীবন দেয়। শান্তি দেয়, সমৃদ্ধি দেয়। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছেন। নৌকায় ভোট দেবেন। ৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।
নির্বাচনের ৫ দিন আগে এবং ইংরেজি বছরের প্রথম দিন রাজধানীতে জনতার ঢল নামিয়ে নির্বাচনী শোডাউন করে সাংগঠনিক শক্তি দেখাল আওয়ামী লীগ। বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে জনসভা স্থলে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মঞ্চে উঠেই জাতীয় পতাকা হাতে উপস্থিত জনতাকে শুভেচ্ছা জানান ও অভিবাদনের জবাব দেন তিনি। ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতেই দলের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে বসার পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। তিনি তা উপভোগও করেন। বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বছরে সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগরীর ১৫টি আসনের নৌকার প্রার্থী ঢাকা-২ আসনে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৪ সানজিদা খানম, ঢাকা-৫ হারুনুর রশীদ মুন্না, ঢাকা-৬ সাঈদ খোকন, ঢাকা-৭ সোলায়মান সেলিম ঢাকা-৮ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা-৯ সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১০ চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা-১১ ওয়াকিল উদ্দিন, ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৪ মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও ঢাকা-১৭ আসনে মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে পরিচয় করিয়ে দেন। শেখ হাসিনা তাদেরকে নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই ১৫টি রতœকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম, এরা বিজয়ী হলে আপনাদের সেবক হয়ে কাজ করবে। এ সময় বিশাল জনসমুদ্র থেকে হাত উঁচিয়ে ও কন্ঠে নৌকা মার্কার স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেন উপস্থিত জনতা।
বিএনপির নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা নির্বাচন বর্জন করছে। বর্জন করাটা স্বাভাবিক। কারণ ভোট চুরি করতে পারবে না, তাই নির্বাচন করছে না। তারা তো ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের সৃষ্টি। ক্ষমতা চুরি, ক্ষমতা দখল, ভোট চুরি, এছাড়া আর কিছু পারে না তারা। সেজন্য নির্বাচন করবে না। নির্বাচন বানচাল করবে। মানুষের ভোটের অধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি। সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস তাদের নেই, তারা পারবে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে চলে গিয়েছিল রাজনীতি করবে না বলে। সেখানে (লন্ডনে) বসে যত চোরা টাকা মানি লন্ডারিং করে পাঠিয়েছে, সেটা দিয়ে দেশের ক্ষতি করছে। শুনেছি সে নাকি ক্যাসিনো খেলে অর্থাৎ জুয়া খেলে টাকা কামাই করে। সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশে আবারো অরাজকতা অগ্নিসন্ত্রাস এগুলো শুরু করেছে।
বিএনপির নমিনেশন বাণিজ্যের কারণে ২০১৮ সালে তাদের ভরাডুবি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই নির্বাচনে তারা এসেছিল। নির্বাচন হয়ে গেল বাণিজ্য। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারেক লন্ডন থেকে দেয় নমিনেশন, এদিকে গুলশান থেকে ফখরুল (ফখরুল ইসলাম আলমগীর) দেয় নমিনেশন, অন্যদিকে পল্টন থেকে রিজভী দেয় নমিনেশন। সকালে বলে এ আমাদের প্রার্থী তো বিকালে বলে আরেকজন প্রার্থী। তারেক রহমানের কথাই ছিল কে কত টাকা দেবেন, নমিনেশন নেবেন। টাকা দেবেন না নমিনেশন বাদ। এভাবে বিক্রির ফলে নির্বাচন ভেস্তে যায়। আর দোষ দেয় আওয়ামী লীগের ওপর।
আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে, জেল খেটেছে। আমরাই নির্বাচনের সংস্কার করেছি। নির্বাচন কমিশন এখন আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ওপর ন্যস্ত ছিল। আমরা স্বাধীন করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা আওয়ামী লীগই করে দিয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তরুণদের বিশেষ করে প্রথম ভোটারদের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে নতুন নতুন আয়ের পথ খুলে দিতে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পায়, ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না।
আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীতে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, যানজট নিরসনসহ নাগরিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঢাকায় পানির অভাব ছিল। যাত্রাবাড়িতে পানি-বিদ্যুতের অভাবে বিএনপির এমপি সালাউদ্দিনকে জনতা যে ধাওয়া দিয়েছে, তাতে সেই এমপির নাম হয়ে গেছে দৌড় সালাউদ্দিন। আমরা ঢাকায় পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করেছি। সারাদেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ঢাকার যানজট দূর করতে মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এই ঢাকায় মোট ৬টা মেট্রোরেল আমরা করব। এক্সপ্রেসওয়ে করে দিয়েছি। নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। এ সময় ঢাকায় অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ভবিষ্যতে নান্দনিক ঢাকা গড়তে তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু জনগণের জন্য কিছু করেনি। তবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। জিয়া মরে যাওয়ার পর টিভিতে দেখাত সে নাকি ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। পরবর্তীতে আমরা দেখলাম, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে তারা। তাহলে ভাঙা স্যুটকেস কি জাদুর বাক্স হয়ে গেল! সেখান থেকে টাকা বের হয়। এভাবেই তারা ক্ষমতার জাদুর বাক্স পেয়ে নিজেরা বিপুল টাকার মালিক হয়েছে, দেশকে কিছু দেয়নি।
৬ বছর রিফিউজি হিসেবে থাকার পর দেশে ফেরার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন বাংলাদেশে ফিরে আসি, আমার রেখে যাওয়া বাবা-মা, ভাইসহ আপনজনদের পাইনি। পেয়েছি, হাজার হাজার মানুষ। সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলাম, এ বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। তাদের মধ্যেই আমি খুঁজে পাব, বাবা-মা ভাইবোনের স্নেহ। এটা পেয়েছি। দেশের জনগণই আমার পরিবার, একমাত্র শক্তি। একটা প্রত্যয় ছিল, সবার মুখে খাদ্য তুলে দেব। কেউ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে উন্নত জীবন দেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়