৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি : দুই রাজস্ব কর্মকর্তা ফের রিমান্ডে

আগের সংবাদ

নিরাপত্তার চাদরে পুরো দেশ : মাঠে সাড়ে ৯ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, মনিটরিং সেলে ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট

পরের সংবাদ

মাথা নত করি না, তাই চক্রান্ত : নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী > যাদের নর্দমা থেকে তুলে এনেছি, তারা টাকা ছড়াচ্ছে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : এবার ফরিদপুরে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তুললেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৌর শহরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকায় ভোট চাইলেন তিনি। এ সময় ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়নি, তাদের চক্রান্ত এখনো থেমে যায়নি। আর যেহেতু তারা জানে আমরা কারো কাছে মাথা নত করি না। সেজন্য চক্রান্ত আরো বেশি। তিনি বলেন, আমি জাতির পিতার কন্যা। কারো কাছে মাথা নত করবো না। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল এ নির্বাচনী জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে আবারো নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। ফরিদপুরের মাটি বঙ্গবন্ধুর ঘাঁটি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ মাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাটি, এই মাটি খাঁটি মাটি। কাজেই একমাত্র নৌকা; এই নৌকা মার্কা- সেই দেবে আপনাদের সব সমস্যার সমাধান। কাজেই সেই কথাটাই সবাইকে মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, নুহু নবীর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এই নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের উন্নতি হয়। অস্ত্র হাতে নিয়ে অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারীরা ক্ষমতায় এলেও দেশের কোনো উন্নতি হয়নি। হয়েছে একমাত্র যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র নৌকা মার্কা ভোট পেলেই আমি সরকারে আসতে পারব। আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে পারব। বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে যাবে না।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী শামীম হকের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনের প্রার্থী শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরী, মাগুরা-১ আসনের প্রার্থী সাকিব আল হাসান, রাজবাড়ী-১ আসনের প্রার্থী কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ আসনের প্রার্থী জিল্লুল হাকিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আরিফ, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস।
পদ্মা সেতুর সুফলের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে ঢাকায় যাতায়াত করতে আগে নদীপথের ঝক্কি পোহাতে হতো। এখন আর সেটা করতে হয় না। নিজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার পর রওনা হয়ে ফরিদপুর চলে এসেছি মাত্র দুই ঘণ্টায়, সোয়া দুই ঘণ্টার মধ্যে ফরিদপুর আর ঢাকা। আমাদের শুধু ফরিদপুর নয়, গোটা দক্ষিণ অঞ্চল- প্রত্যেক জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ ব্যাপকভাবে করে দিয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে যাচ্ছি, আরো কাজ বাকি। আমাদের এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অতিমারির সময় খেটে খাওয়া মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা টিসিবির মাধ্যমে ৫ কোটি মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য দেয়া শুরু করেছি, যা এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়াও আমরা বিধবা, বয়স্ক, মাতৃকালীন, প্রতিবন্ধীদের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে ভাতার ব্যবস্থা করেছি। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নিজের থাকার ব্যবস্থা করেছি, যা পৃথিবীতে মডেল। বর্তমানে দেশের ৩৩টি জেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত, পর্যায়ক্রমে সব জেলাও এর আওতায় আসবে।
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সরকার দেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছিল, দেশের গ্যাস সম্পদ বিক্রি করেই তারা ক্ষমতায় এসেছিল। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, ২০১৮ সালে মনোনয়ন বাণিজ্য করে নিজ দলের ভরাডুবি হয়েছিল।
নির্বাচনে প্রার্থীদের কেউ কেউ টাকা ছড়াচ্ছে- এমন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের দেশে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ব্যবসাবাণিজ্য করার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। অনেককে একেবারে বলতে গেলে নর্দমা থেকে টেনে তোলা হয়েছে। তাদের পয়সা বানানো, ব্যবসাবাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছি। মিডিয়া চালানোর সুযোগ দিয়েছি। এখন তারা টাকা ছড়ায়। তারা মনে করে টাকা দিয়েই সব কেনা যাবে। আমি এই টাকাওয়ালাদের টাকা ছড়ানো…খুব ভালো কথা। টাকা তারা ছড়াক। কারণ যত টাকা বানিয়েছে, তা জনগনের হাতে যাবে। তবে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ওই টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায় না। টাকা দিয়ে ফরিদুপরের জনগণকে কেউ কিনতে পারেনি, পারবে না। কারণ এ মাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাটি। এ মাটি খাঁটি মাটি। কাজেই একমাত্র নৌকা। এই নৌকা মার্কা, সেই দেবে আপনাদের সমাধান। সেই কথাটাই সবাইকে মনে রাখতে হবে।
এ সময় ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাগুরার নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই তিন জেলা খুবই কাছাকাছি। আমাদের প্রার্থীরা এখানে এসেছে। ফরিদপুর-১ আব্দুর রহমান। তিনি ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ফরিদপুর-২ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাজেদা চৌধুরী খুব দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। আমি আসার পর আমাকে তিনি ¯েœহ দিয়েছিলেন, ভালোবাসা দিয়েছিলেন। আজকে তিনি নেই। ফরিদপুর-২ থেকে তিনি বারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। নহরকান্দা-সালথা উপজেলা। এখানে সাজেদা চৌধুরীর সন্তান শাহদাব আকবর, তাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ফরিদপুর-৩ (সদর) এখানে শামীম হক। এ সময় শামীম হক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর আমরা যখন বিদেশে রিফিউজি হিসেবে ছিলাম। ৮০ সালে আমি লন্ডনে যাই। শুধু তাই না, এরপর যতবার গিয়েছি, নেদারল্যান্ডে যেতাম। সেখানে আমার ফুফাতো বোন শেলি থাকত। আমি সেখানে যাই। আমি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে আওয়ামী লীগ সংগঠন করেছি সে সময়। যেখানে যেখানে যেতে পেরেছি। ৮১ সালে দেশে আসার পরও আমি গিয়েছি। শেলি জামানকে সভাপতি আর শামীম হককে সাধারণ সম্পাদক করে নেদারল্যান্ডস আওয়ামী লীগ আমি গড়েছিলাম। সেই থেকে আমি জানি শামীম আওয়ামী লীগের অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ একজন কর্মী। বিদেশে থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে সে সেখানে সংগঠন গড়ে তোলে। এরপর সে বাংলাদেশে আসে। এখন সে ফরিদপুরে কাজ করছে। তাকেই আমরা নৌকার নমিনেশন দিয়েছি। তাকে আমি ফরিদপুর বাসীর কাছে তুলে দিলাম। ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাশন, সদরপুর) কাজী জাফরউল্লাকে নমিনেশন দিয়েছি। রাজবাড়ী-১ কাজী কেরামত আলী। তার বাবা আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। বারবার সে জয়ী হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী ছিল। রাজবাড়ী-২ (পাংশা,কালুখালী-বালিয়াকান্দি) অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এই সিটট নৌকা মার্কায় সে বারবার জয়ী করেছে। এখনো আমি মনে করি নৌকায় ভোট পেয়ে সে জয়ী হবে।
মাগুরা জেলার প্রার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় সাকিব আল হাসান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আপনাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেব। আমাদের একটা রতœ আছে। এই রতœটা ক্রিকেট রতœ। মাগুরা-১ (শ্রীপুর ও সদর) এখানে আমরা এবার নমিনেশন দিয়েছি সাকিব আল হাসান। সে বলছে, আমি বক্তৃতা দিতে পারি না, আমি বলেছি বক্তৃতা দেয়ার দরকার নেই। তুমি খালি বলবা.. যে তুমি ছক্কা মারতে পারো আর বল করে উইকেট ফেলে দিতে পারো। তাহলেই হবে। এইবারও ইলেকশনে ছক্কা মেরে দিও। মাগুরা-২ আসনে বীরেন শিকদার।
তরুণ সমাজের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের জন্য ২০৪১ সাল। ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব। স্মার্ট বাংলাদেশ কী। আমাদের ছেলেমেয়ে তরুণ সমাজ। তারা এই ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার সেইগুলি শিখবে। নিজেদের দক্ষ-জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলবে। শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত হবে। প্রত্যেকে কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং বিভিন্নভাবে শিক্ষা দেবে। সবাই দক্ষ হবে। শিক্ষার কারিকুলামেও শুরু থেকেই আমরা এধরনের দক্ষ যাতে গড়ে উঠে। সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট গভর্নমেন্ট হবে, স্মার্ট ইকোনমি হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে। সমাজ ব্যবস্থাটা স্মার্ট হবে। সেইভাবেই ৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
তারণ্যের শক্তি, বাংলাদেশে অগ্রগতি- সেই স্লোগান নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের যুবক, তরুণ এবং যে শিশু জন্ম নেবে সেও যেন একটা সুন্দর জীবন পায়। আর জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায়। সেজন্য আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সালের বাংলাদেশ কীভাবে উন্নত হবে, সেই পরিকল্পনাও আমি প্রনয়ণ করে দিয়েছি। যাতে এই বাংলাদেশ সামনের দিতে এগিয়ে যাবে। তারণ্যের শক্তি, বাংলাদেশে অগ্রগতি- সেই স্লোগান নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
দেশের ফেরার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন বাংলাদেশে ফিরে আসি, আমার রেখে যাওয়া বাবা-মা, ভাইসহ আপনজনদের পাইনি। পেয়েছি, হাজার হাজার মানুষ। সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলাম, এ বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। তাদের মধ্যেই আমি খুঁজে পাব, বাবা-মা ভাইবোনের স্নেহ। এটা পেয়েছি। দেশের জনগণই আমার পরিবার। কাজেই আমার যা কিছু আছে, দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়