সিংগাইর : হাত কাটা ও গুলি করার হুমকিদাতার বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

নৌকা নেই, তাই আমেজ কম

পরের সংবাদ

হেলমুট স্মিথ : শেখ মুজিবের মতো দেশপ্রেমিক দেখিনি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘আমি যখন চ্যান্সেলর ছিলাম বিশ্বের অনেক নেতার সঙ্গেই তখন আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। কিন্তু তোমাদের শেখ মুজিবের মতো এত বড় দেশপ্রেমিক কাউকে দেখিনি আমি।’ কথাগুলো বলেছিলেন তদানীন্তন পশ্চিম জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) লিডার ড. হেলমুট স্মিথ।
১৯৮৪ সালের মে মাসের কথা। আমি তখন বাংলাদেশ বেতারের কর্মী হিসেবে বৃত্তি নিয়ে পশ্চিম জার্মান বেতার কেন্দ্র ডয়চে ভেলেতে প্রশিক্ষণরত। সেই বেতার কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে হেলমুট স্মিথের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন নর্থ-সাউথ ডায়ালগ বিষয়ে। বিরোধী দলে থাকলেও হেলমুট স্মিথ এসডিপির প্রধান হিসেবে ওই সম্মেলন আহ্বান করেন এবং তিনিই প্রধান বক্তা। তার বক্তব্যের ওপর আলোচনা করার জন্য নির্ধারিত বক্তা এসডিপির অন্য একজন নেতা, সরকারি দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন সিডিইউর একজন নেতা, একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, একজন ধর্মীয় নেতা এবং উপস্থিত দর্শকদের মধ্য থেকে আগ্রহী কেউ।
সেই সম্মেলনে আমাদের (৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী) নেয়া হলো দর্শক হিসেবে এবং বসতে দেয়া হলো এক সঙ্গে। সেখানে অনেকের সঙ্গে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও পরবর্তীকালে বিএনপি নেতা লে. জেনারেল মির শওকত আলী। সেখানে হেলমুট স্মিথের বক্তৃতার পর একে একে নির্ধারিত বক্তারা বক্তব্য রাখলেন। পরে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মির শওকত আলীও। তিনি বক্তৃতা করে নিজ আসনে ফিরে এলে আমি উঠে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচিত হই। তিনি সুবিধা মতো সময়ে এক দিন বনে দূতাবাসে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। সম্মেলন শেষে চা-চক্র। চা তৈরি করা রয়েছে। যার যার ইচ্ছা গিয়ে চা পান করতে পারেন।
এদিকে বক্তৃতা শুনতে শুনতে আমি ভাবছিলাম আমার ট্রেনিংয়ের কাজে ব্যবহার করার জন্য হেলমুট স্মিথের একটা ইন্টারভিউ নিতে পারব কিনা বা তিনি আমাকে সেই সুযোগ দেবেন কিনা। চা-চক্রের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি স্মিথ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চা পান করছেন। তাকে ঘিরে কয়েকজন চা পান করছেন এবং তার কথা শুনছেন। আমিও চায়ের কাপ নিয়ে তার কাছে এগিয়ে গেলাম এবং সালাম ও পরিচয় দিয়ে আমার আগ্রহের কথা জানালাম। তিনি শুনে বললেন, এখানে তো সম্ভব না, এক দিন বনে আমাদের পার্টির হেড অফিসে আস। আমাকে একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বললেন, আসার আগে আমাকে একটা ফোন করবে। আমি ফ্রি হয়ে থাকব। আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দাঁড়িয়ে তার কথা শুনছিলাম।
এ সময় হাতে চায়ের কাপ নিয়ে মির শওকতও সেখানে এসে হাজির। আমি হেলমুট স্মিথের সঙ্গে মির শওকতকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম, তিনি এ দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত লে. জেনারেল মির শওকত আলী। তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে স্মিথ শওকতকে জিজ্ঞাসা করলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট তুমি কি সার্ভিসে ছিলে? জবাবে শওকত বললেন, হ্যাঁ, সার্ভিসে ছিলাম স্যার। সঙ্গে সঙ্গে স্মিথ বলে বসলেন, তাহলে শেখ মুজিবকে রক্ষা করতে পারলে না কেন? শওকত আমতা আমতা করে বললেন, এটা একটা ষড়যন্ত্র ছিল স্যার। শেখ মুজিবদের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দুনিয়ার সবখানেই হয়। সেই ষড়যন্ত্র ঠেকাতে পারলে না কেন তোমরা। মনে হয় তোমরাই হত্যা করেছ তাকে।
ক্ষোভের সঙ্গেই স্মিথ বললেন শোন, আমি যখন এ দেশের চ্যান্সেলর ছিলাম তখন বিশ্বের অনেক নেতার সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। তোমাদের শেখ মুজিবের সঙ্গেও হয়েছে। তার মতো এত বড় দেশপ্রেমিক (প্যাট্রিয়ট) আমি আর দেখিনি। ১৯৭৪ সালে তোমাদের দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। সেই দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। দুর্ভিক্ষ তো আর শেখ মুজিবের জন্য হয়নি। কিন্তু তার কী আকুতি, বললেন আমাকে কিছু খাবার দিন, আমার মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। আমি বললাম, আমার তো খাদ্যে ঘাটতি দেশ। আমি খাবার আনি বিদেশ থেকে। আমি দেব কীভাবে? আমেরিকার কাছে চাও। তাদের তো প্রচুর খাবার রয়েছে। তারা দিতে পারবে। শেখ মুজিব বললেন, চেয়েছি। ওরা বলল টাকা দাও। আমার তো টাকা নেই। খাদ্য না হলে তুমি আমাকে কিছু টাকা দাও। আমি কিছু টাকা দিলাম, অন্য দেশকেও দিতে বললাম। শুনেছি সেই টাকা দিয়ে আমেরিকা থেকে খাদ্য কেনা হয়েছিল। সেই খাদ্য বাংলাদেশে পৌঁছেছে মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর। তার মতো নেতাকে তোমরা হারালে! অনেক দুঃখ আছে তোমাদের কপালে। পাঠক, সেই দুঃখ কি আমরা এখনো পোহাচ্ছি না?

মো. আবদুল মোতালেব : মফস্বল সম্পাদক, ভোরের কাগজ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়