সিংগাইর : হাত কাটা ও গুলি করার হুমকিদাতার বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

নৌকা নেই, তাই আমেজ কম

পরের সংবাদ

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ঘটনাবহুল এক বছর : ফিরে দেখা ২০২৩

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বছর তো শেষ হয়েই এলো। আর মাত্র একদিন পরই বিদায় জানাতে হবে ২০২৩ সালকে। আগামীকাল ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানাবে সবাই। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ২০২৩ সালটা ছিল ঘটনাবহুল এক বছর। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও ঘটেছে অনেক ঘটনা।
সব মিলিয়ে আমাদের আজকের এ প্রতিবেদন। বছর সব আলো কেড়ে নিয়েছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আর্জেন্টাইন মহাতারকা জিতেছেন নিজের ক্যারিয়ারের অষ্টম ব্যালন ডি’অর। ইউরোপ অধ্যায় শেষ করেছেন চলতি বছরেই। তবুও তার বাঁ পায়ের ধার কমেনি এতটুকুও। ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময়ই বার্সোলোনার জার্সিতে কাটিয়েছেন লিওনেল মেসি।
বছরের শুরুতেই রোনালদোর কারণে আলোচনায় আসে সৌদি প্রো লিগ। রোনালদোর পর মেসি-এমবাপ্পেদের পেতে হাত বাড়ায় সৌদি লিগের ক্লাবগুলো। এ দুজনকে শেষ পর্যন্ত না পেলেও দলবদলে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর কাঁপন ধরিয়ে দেয় প্রো লিগ।
রোনালদোর সৌদি যাত্রা ছিল মূলত ডমিনো ইফেক্টের (ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকা প্রভাব) মতো। রোনালদোর পর করিম বেনজেমা, সাদিও মানে, রবার্তো ফিরমিনো, জর্ডান হেন্ডারসন এবং রিয়াদ মাহরেজরা গিয়ে হাজির হন সৌদি লিগে।
অর্থের হাতছানি পেয়ে ফুটবলারদের সৌদিমুখী হওয়া নিয়ে নিজেদের আতঙ্কের কথা জানান পেপ গার্দিওলা-ইয়ুর্গেন ক্লপের মতো বিশ্বসেরা কোচরা। এমনকি দলবদলেও ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোকে টেক্কা দিয়ে ওপরের দিকে উঠে আসে সৌদি লিগ। তবে এ বছরের দলবদল ইউরোপের জন্য স্রেফ ‘ট্রেলার’ ছিল। সামনের দিনগুলোয় হয়তো ফুটবল আরো বড় সুনামি হয়ে হাজির হবে সৌদি ক্লাবগুলো।
এ বছর টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৪৮ ম্যাচের ২০টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ২টি-টোয়েন্টি বাদে)। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০২৩ সালটা খুব একটা ভালো যায়নি বাংলাদেশের।
২০২৩ সালে ৩২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১১টিতে জয় এসেছে বাংলাদেশের। শেষ হতে যাওয়া বছরটাতে নিজেদের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩২টি ওয়ানডে ম্যাচে অংশ নিয়েছে সাকিব-শান্তরা।
টি-টোয়েন্টিতে উন্নতির দৃশ্যটা স্পষ্ট নয়। পুরো বছরে চারটি সিরিজ মিলিয়ে মোট ১২ ম্যাচে মাত্র ৮টি জয় এসেছে বাংলাদেশের (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ২টি-টোয়েন্টি বাদে)।
বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ সিরিজ জয়টাই যেন বড় সফলতা। টেস্টে বছরের শুরুতেই দুর্বল প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় এসেছে।
এছাড়া আফগানদের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ে জয়। আর বছরের শেষে ঘরের মাঠে টেস্টে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে হারানো। ফলে ২০২৩ সালে ক্রিকেটের বড় পরিসরে টাইগারদের নেই কোনো সামগ্রিক রেকর্ড।
২০২৩ সালের এশিয়া কাপে ভালো করার আভাস নিয়ে তৃতীয় হয়ে ফিরেছে টাইগাররা। সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়া দূরের কথা, বিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে ফল করে হতাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন ক্রিকেটাররা। বিশ্বকাপে মোট ৯ ম্যাচ খেলে কেবল দুই জয় বাংলাদেশ। যা আগের কোনো বিশ্বকাপে এমন হয়নি লাল-সবুজদের।
এর মধ্যে ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় চোখে পড়ার মতো। সিনিয়ররা ব্যর্থ হলেও জুনিয়র টাইগাররা আরব আমিরাতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জয় করেছে যুবা টাইগাররা।
গত মৌসুমজুড়েই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে ম্যানচেস্টার সিটি। তবুও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কিছুটা হলেও স্নায়ুচাপে ভুগছিল সিটিজেনরা। অন্যদিকে ইন্টার খেলেছে নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে। তাতে ম্যাচটা হয়ে উঠেছিল অনেক বেশি ট্যাকটিকাল।
স্প্যানিশ কোচে পেপ গার্দিওলার হাত ধরে শেষ হাসিটা হেসেছে সিটিজেনরাই। আর তাতে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা উঁচিয়ে ধরে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নরা।
এর আগে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপও জিতেছিল তারা। একই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়ে ক্লাবটি।
বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অর্জনের দৌড়ে সবাইকে ছাড়িয়ে নোভাক জকোভিচ। জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন দিয়ে শুরু, মাঝে ফ্রেঞ্চ ওপেন, আর সেপ্টেম্বরে ইউএস ওপেন দিয়ে শেষ।
তিন গ্র্যান্ডস্লাম আর সাত এটিপি টাইটেল জয়ের বছরে গড়েছেন চারশ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকার রেকর্ড। রাগবিতে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চতুর্থবার বিশ্বসেরা স্প্রিংবক্স।
দাবায় মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখেছেন ম্যাগনাস কার্লসেন। আগস্টে ভারতের রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দকে হারিয়ে জিতেছেন বিশ্বকাপ। র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ থেকে শেষ করছেন আরো একটি বছর। টানা একযুগ। চীনের আধিপত্যে কেটেছে বছরের মেগা ইভেন্ট এশিয়ান গেমস। রেকর্ড ২০১ স্বর্ণ গেছে স্বাগতিকদের ঝুলিতে।
সিডনিতে স্প্যানিশ নারীদের বিশ্বকাপ জয়ের ঘটনা দ্রুত ¤øান হয়ে যায় বিতর্কিত এক চুমু-কাণ্ডে। ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে স্প্যানিশ ফুটবলার হেনি হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু খান স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি রুবিয়ালেস। এরপরই ফুটবল বিশ্বে বিতর্কের ঝড় ওঠে।
একপর্যায়ে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকেই শুধু নয়, উয়েফার নির্বাহী কমিটির সহসভাপতির পদ থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। ফিফাও তাকে ফুটবলীয় কার্যক্রম থেকে বরখাস্ত করে। বছরের আলোচিত ‘খলনায়ক’এর তালিকাতেও ঠাঁই পেয়েছেন রুবিয়ালেস।
দারুণ ফুটবল খেলে ১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। এরপর ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ের প্রথম রাউন্ড পেরোনোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে নজর কাড়েন ১৮ বছরের তরুণ ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন।
বাংলাদেশ ফুটবলের তরুণ প্রতিভা মোরসালিন, জিকোরা ক্লাব ফুটবলে ন্যক্কার কাণ্ডও ঘটিয়েছেন এ বছর।
ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফে নেপালকে ফাইনালে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।
ত্রয়োদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের উত্তেজনা শেষ হয়েছে। এই আসরের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্য দিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তোলে অজিরা।
গত ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতকে ছয় উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান করে স্বাগতিকরা। জবাবে ৪২ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে অজিরা।
২০২৩ সালে ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ছিল আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এবারের আসরটি গড়িয়েছিল ভারতের মাটিতে। এর মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো উপমহাদেশের মাটিতে পর্দা উঠেছিল বিশ্বক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরের। ত্রয়োদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কার জায়গা হলেও ছিটকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময়ই বার্সোলোনার জার্সিতে কাটিয়েছেন লিওনেল মেসি।
তবে ২০২১ সালে ক্লাবটির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয় তার। স্প্যানিশ জায়ান্টদের সঙ্গে দীর্ঘ ২০ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ভালোবাসার শহর প্যারিসে পাড়ি দেন তিনি। সেখানে দুই মৌসুম কাটিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলকে বিদায় বলেন আর্জেন্টাইন লিটল ম্যাজিশিয়ান।
২০২৩ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে সব জল্পনাকল্পনা গুঁড়িয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন মেসি। সেখানে মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে নিজের নাম লেখান লিও।
সকার লিগে পাড়ি দেয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছেদ করেন এ আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়