বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা : ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট

আগের সংবাদ

আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক : বেপরোয়া প্রার্থীরা > সংঘর্ষে নিহত ২, অফিস-গাড়ি ভাঙচুর > শো’কজেই সীমাবদ্ধ ইসি

পরের সংবাদ

দুই শতাধিক আসনেই মূল প্রতিদ্ব›দ্বী আ.লীগের ‘স্বতন্ত্র’

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে আওয়ামী লীগের নৌকার সঙ্গে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। প্রায় দুই শতাধিক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। যাদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া বর্তমান ২৮ জন সংসদ সদস্য। স্বতন্ত্র তালিকায় আছেন জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, জেলা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। স্থানীয়ভাবে এসব নেতার অনেকেই প্রভাবশালী ও জনপ্রিয়। যদিও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৭টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বেশকিছু আসনে স্ব স্ব দলের প্রতীকে প্রার্থী দিলেও গোটা কয়েকজন আসন ছাড়া কোথাও প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার মতো অবস্থানে নেই কোনো দলই। জাতীয় পার্টিও সরকারের সঙ্গে অনেকটা সমঝোতা করেই নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছে। কাজেই নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে এবার মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হচ্ছে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীদের। যেসব আসনে নৌকা নেই সেখানেও আওয়ামী লীগের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরাই মূল প্রতিদ্ব›দ্বী। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও রাখেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কেউ কেউ। ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার নির্বাচনে ২২১ আসনে মূল প্রতিদ্ব›দ্বী ৩৮২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
যেসব আসনে নৌকার চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্তিশালী, সেসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে স্বতন্ত্ররা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চান। সরকার আর নির্বাচন কমিশন এবার কোনোভাবেই নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চায় না। সেজন্য নেয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকটা নির্বিঘেœ তাদের প্রচার কার্যক্রম চালাতে পারছেন। কারণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বয়ং দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহিত করেছেন। নৌকার প্রার্থীরা যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের কোনোভাবেই বাঁধা কিংবা হয়রানি না করে, সেজন্যও দলের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। এমন সিগন্যাল পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তাদের কারো কারো মধ্যে জয়লাভের সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে। ফলে দলটির অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীরাও এবার নিজেদের জয়ের ব্যাপারে অনিশ্চিত। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগরই বড় একটি অংশ।
ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। নিক্সন বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জাফর উল্লাহর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে

লড়াই করে জিতেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তার পক্ষে কাজ করছে। এবারো আসনটিতে নিক্সনের জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। এখানে তার মূল প্রতিদ্ব›দ্বী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম। জানা গেছে, এখানে তাহমিনা বেগম খুব শক্ত অবস্থানে ঈগল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তাহমিনার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কাজেই গোলাপের জয়ের পথে তাহমিনা বড় বাধা। স্থানীয়দের মতে আসনটিতে গোলাপ-তাহমিনার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস ড. আওলাদ হোসেন। তিনি ট্রাক প্রতীকে লড়ছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ আওলাদের পক্ষে মাঠে কাজ করছে। লাঙ্গল প্রতীকে এখানে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তবে নৌকার সঙ্গে এখানে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে আওলাদের ঈগল প্রতীকের। ঢাকা-৫ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না। এখানে তার মূল প্রতিদ্ব›দ্বী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল মোল্লা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন। সজল লড়ছেন ট্রাক প্রতীকে আর রিপন লড়ছেন ঈগল প্রতীকে। হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে আসনটিতে।
পঞ্চগড়-১ আসনে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন নাইমুজ্জামান ভুঁইয়া মুক্তা। এখানে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত স¤্রাট। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম-১২ আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। তিনি লড়ছেন ঈগল প্রতীকে। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ রকম দুই শতাধিক আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়াই করছেন। দলের পক্ষ থেকেও তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকেই বিজয়ী হতে পারেন।
গত বুধবার সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশাল নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। জনসভার মঞ্চে নৌকার প্রার্থীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ঝগড়া করবেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বতন্ত্র ইলেকশন করবেন।? নৌকার প্রার্থীরা নৌকার ইলেকশন করবেন। কারো সঙ্গে কারো ঝগড়ার প্রয়োজন নেই। এই নির্বাচনকে প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক করার জন্য, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে চান। এজন্য তিনি স্বতন্ত্রদেরও প্রার্থী করতে বলেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ২৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সব দলের প্রার্থীরাই মাঠে আছেন। আওয়ামী লীগের যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তারাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মাঠে তাদের সরব উপস্থিতি আছে। নির্বাচনও জমে উঠেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচনও অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হচ্ছে। এতে ভোটার উপস্থিতি অনেক বাড়বে। জনগণ তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে বেছে নেয়ার সুযোগ পাবেন। তারা যাকেই ভোট দেবেন, তিনিই বিজয়ী হয়ে আসবেন। নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে। যে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। ভোটাররা যেন তাদের পছন্দ মতো প্রার্থী বেছে নিতে পারেন। কেউ যেন বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হতে না পারেন, জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হন। সেজন্যই স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও উৎসাহিত করা হয়েছে। যারা বিজয়ী হবেন, তারা সংসদে আসবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়