উদ্দেশ্য ‘দোয়া’ নেয়া : কাজী ফিরোজ রশীদের বাসায় সাঈদ খোকন

আগের সংবাদ

আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর জনসভায় শেখ হাসিনা : নৌকাতেই দেশের উন্নয়ন

পরের সংবাদ

নাশকতার টার্গেট এখন রেল

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা এখন নাশকতার টার্গেট করেছে রেলকে। যানবাহন পোড়ানোর পাশাপাশি নাশকতা চালাচ্ছে রেলেও। রেললাইন কেটে ফেলা, রেলপথের ফিসপ্লেট উপড়ে ফেলা ও ট্রেনের বগিতে আগুন দেয়া হচ্ছে একের পর এক। এসব ঘটনায় শিশু-নারীসহ নিরীহ যাত্রী হতাহত হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। রেলের মতো একটি স্বাচ্ছন্দ্যময়-সুলভ পরিবহন এখন যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের বাহনে পরিণত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় পুড়ে মারা গেছেন এক শিশু ও এক নারীসহ ৪ যাত্রী। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আগুনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে যায়। এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর ভোর ৪টা ১৫ মিনিটে গাজীপুরের বনখড়িয়া (চিলাই ব্রিজ) এলাকায় গ্যাস কাটার দিয়ে ২০ ফুট লাইন কেটে ফেলায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ও ৭ বগি লাইনচ্যুত হয়। ওই ঘটনায় মারা যান ১ জন যাত্রী, আহত হন অনেকে।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সা¤প্রতিক ঘটনাগুলো উল্লেখ করে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন

বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার হচ্ছে রেলওয়ে। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া বিএনপি এখন রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে, জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করছে। মন্ত্রী বলেন, রেলের মতো একটি জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা, ট্রেন লাইন কেটে, ফিসপ্লেট খুলে, ট্রেনে আগুন দিয়ে যারা নাশকতার সৃষ্টি করে হাজারো যাত্রীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, মানুষ মারার পরিকল্পনা করছে তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে রেল লাইনে নিরাপত্তা বাড়ানসহ গঠন করা হয়েছে বিশেষ টাক্সফোর্সও। রেললাইন পাহারায় বাড়ানো হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আজ বুধবার থেকে অতিরিক্ত ২ হাজার ৭০০ আনসার নিয়োগ করা হয়েছে।
রেলমন্ত্রী জানান, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে রেলের বর্তমান জনবল দিয়ে চলমান নাশকতা ঠেকানো কঠিন হলেও সারাদেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
রেলে নাশকতাকারী ফৌজদারি অপরাধ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতেই পারে। যারা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে তা রাজনৈতিকভাবে বিবেচিত হবে, কিন্তু রেলকে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে ফেলে জনজীবন এবং জণগণের যে নিরাপত্তা দরকার- এটিকে বড় ধরনের হুমকিতে ফেলেছে। রেলকে নিরাপদ রাখতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রেলের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আছে, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে- যে যে জেলায় রেল যাচ্ছে সেখানে যেন নাশকতা ঘটতে না পারে- সে বিষয়ে যেন তারা সহযোগিতা করেন। এই নিরাপত্তার বিষয়টিকে মাথায় রেখে স্বরাষ্ট্র ও রেল মন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে।
নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, এতসবের মধ্যেও আগামী জানুয়ারির ১ তারিখে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল চলাচল শুরুর পাশাপাশি ঢাকা থেকে কক্সবাজারে নতুন ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রেলপথে সরাসরি আক্রমণের প্রথম ঘটনা ঘটে ১৬ নভেম্বর। টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের দুইটি কোচে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপর ১৯ নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়িতে যমুনা এক্সপ্রেসে পরিকল্পিত নাশকতা করা হয়েছে। এ দুই ঘটনায় কোনো প্রাণহানি না হলেও বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ২২ নভেম্বর সিলেটে উপবন এক্সপ্রেসে আগুন ধরানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ২০ ফুট রেলওয়ে ট্রাক কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় একজন যাত্রী মারা যান, আর ৫০ জন আহত হন। গত বুধবার রাত ১০টা নাগাদ নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ফিসপ্লেট ক্লিপ খুলে নাশকতার চেষ্টা করছিল দুর্বৃত্তরা, ৭২টি ফিসপ্লেট খুলে ফেলে তারা। পরে এলাকাবাসীর প্রতিরোধে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়।
গাজীপুরের ঘটনায় সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজমল হোসেন ভূঁইয়াসহ ৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশেই রেললাইন কেটে ফেলা হয়, আসামিরা আদালতে এমন স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। রেলসূত্র জানায়, দেশে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার রেল লাইন রয়েছে। যা দেশের ৪৬টি জেলাকে যুক্ত করেছে। এসব ট্রেন লাইন অধিকাংশই উন্মুক্ত। এ বিশাল দৈর্ঘ্যরে রেলপথ বসতিহীন, ফাঁকা এলাকা দিয়ে খাল-বিল পেরিয়ে সংযুক্ত করেছে এক জেলা থেকে আরেক জেলাকে। অনেক জায়গায় ১০ থেকে ৩০ কিলোমিটার রেলপথের কোথাও কোনো বসতি নেই, নেই নজরদারির ব্যবস্থা। যার ফলে এ বিশাল দৈর্ঘ্যরে ট্রেন লাইন রক্ষা করা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, গতকাল ট্রেনে আগুন দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, রেলে আগুন দিয়ে যারা চারটি প্রাণ খুন করেছে তাদের ক্ষমা নেই। বিএনপির পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগে চারটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। ইসরায়েল ফিলিস্তিনে যেভাবে মানুষ হত্যা করে সেই রকম দৃশ্য দেখতে পেলাম। তাদের ক্ষমা নেই।
কীভাবে রেলে সুরক্ষা দেয়া যায়- এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা প্রতিহতে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে সারাদেশে রেললাইন সুরক্ষায় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত করা দরকার। একই সঙ্গে ট্রেনের আগুন নেভাতে কুইক ফায়ার ফাইটার সেফটি ব্যবস্থা রাখা দরকার। আর নতুন কোনো রেল প্রকল্প নিলে তা মাটি দিয়ে না করে ওপর দিয়ে ভায়াডাক্ট করে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করার কথাও বলেন তিনি- যাতে ট্রেনে নাশকতার সুযোগ কমবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়