ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু কমেছে

আগের সংবাদ

নতুন উত্তাপ ‘১০ ডিসেম্বর’ > মানববন্ধন করবে বিএনপি, ঘরোয়া কর্মসূচি আ.লীগের > অনুমতি ছাড়া করলে ব্যবস্থা : ডিএমপি

পরের সংবাদ

আসন সমঝোতাই বড় চ্যালেঞ্জ : আ.লীগের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক ভোটে আসা দলগুলোর, ১৪ দলের সঙ্গে সমঝোতা, ঝুলে আছে জাপা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নির্বাচনের ট্রেন ছুটছে। দ্রুত ঘনিয়ে আসছে ভোটের দিনক্ষণ, হাতে সময় আর এক মাসও নেই। এই সময়ে ভোটের চিত্র অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা; কিন্তু তা হয়নি। এখনো অনেক কিছুই ধোয়াশায় আচ্ছন্ন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও ভোটে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টি ঝুলে আছে। ভেতরে ভেতরে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর নেতারা নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে সমঝোতায় উপনীত হওয়ার চেষ্টা করলেও এ নিয়ে কথা বলছেন বেশ রাখঢাক করে। তা সত্ত্বেও এই আসন সমঝোতাই ক্ষমতাসীন দলটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ আসন সমঝোতার বিষয়টি এবার বেশ জটিল।
বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি দল এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির বেশ কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন- যারা ছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা। রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। বড় এই দুটি দলের নেতৃত্বে আছে বড় দুটি জোট। বিগত তিনটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের অংশ। আসন সমঝোতা করেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল মহাজোটের দলগুলো। এবার বিএনপিসহ তাদের সমমনা কয়েকটি ছোট দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে ভোটের মাঠে বড় ফ্যাক্টর জাতীয় পার্টি। দলটি এবার মহাজোটে নেই। এককভাবে ২৮৭টি আসনে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গেই জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা।
রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালো আলোচনা- বিএনপি না থাকলেও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে দেশি-বিদেশি নানা চাপ আছে সরকারের ওপর। সরকারও নির্বাচনকে কোনোভাবেই বিতর্কিত করার সুযোগ দিতে চায় না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে ১৪ দলের শরিক অন্যান্য দল, আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টি, নতুন দল তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট বিএনএম, সুপ্রিম পার্টি, কয়েকটি ইসলামী দলসহ বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসা নেতাদের একটি অংশ- যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন, তাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার। টার্গেট একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া। এসব দল ও ব্যক্তি যাতে সহজে বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন, সে কৌশলও নিতে হবে ক্ষমতাসীন দলটিকে। কেননা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য দলগুলোর নেতারা বড় হলেও ভোটের মাঠে তাদের গ্রহণযোগত্যা খুব একটা সন্তোষজনক নয়। তাই সব রাজনৈতিক দলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। সেজন্য দেন-দরবারও চালিয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগের জন্য এতগুলো রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি এখন অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন আসছে, ক্ষমতাসীনরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে কীভাবে?
আওয়ামী লীগের নানা সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয়

সংসদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা, নিবাচনী মাঠে না থাকা বিএনপি নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আছে জামায়াতে ইসলামসহ কয়েকটি ছোট দল। কিছু দেশি-বিদেশী ব্যক্তি ও সংস্থা এদেরকে উসকে দিচ্ছে। নির্বাচন ঠেকাতে এরা এমন কোনো ষড়যন্ত্র নেই, যা করছে না। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগ নিয়েছে। তাই নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর সঙ্গে একটা সমঝোতা করতেই হবে। সেই চেষ্টা চলছে। ভোটের মাধ্যমে সংসদে যেন তারা প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকে, সেই কৌশল নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে আসন সমঝোতার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি দলই তাদের কাক্সিক্ষত আসন নিয়ে কথা বলছে। তারা তাদের তালিকাও দিচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা ভোরের কাগজকে জানান, নির্বাচনটা একটা কৌশলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। যেসব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি সব বাধা ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে তো সরকারের বসতেই হবে। তারা যেন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকে, সেটাও আমরা নিশ্চিত করছি। সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তারাও আওয়ামী লীগের কাছে তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চয়তা চাচ্ছেন। সেজন্য শরিক ও মিত্র দলগুলোর সিনিয়র নেতারা যেসব আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন, সেসব আসনে যেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়, সেজন্য তারা দাবি জানিয়ে আসছে। ওই নেতা আরো জানান, আসন সমঝোতার বিষয়টি এবার আওয়ামী লীগের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন ১৭ ডিসেম্বরের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা আশা করছি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জাতীয় পার্টি- জেপি ও তরীকত ফেডারেশনের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর আসন সমঝোতার বিষয়টি একটি পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এতে দেখা যায়, জোটের শরিকদের চাহিদা আরো বেশি থাকলেও তাদের দেয়া হয়েছে ৬টি আসন। ওয়ার্কার্স পার্টি ২টি, জাসদ ২টি, জেপি মঞ্জু ১টি এবং তরীকত ফেডারেশন অথবা সুপ্রিম পার্টির জন্য একটি। যদিও এসব দলের আরো আসন চাহিদা আছে। তবে আলোচনা থেমে নেই বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে গত মঙ্গল ও বুধবার প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় পার্টি। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ তিনজনের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেছেন। যদিও জাতীয় পার্টি থেকে এই সাক্ষাতের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। পরদিন বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের একজন নেতার বাসায় জাতীয় পার্টির সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ছিলেন। আর জাতীয় পার্টি থেকে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বৈঠকে অংশ নেন। পরপর এই দুটি বৈঠকে জাপা নেতারা ৩০ জনের একটি তালিকা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে তুলে দিয়েছেন। এসব আসনে তারা ছাড় চাইছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহারের পাশাপাশি দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও তারা সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১৫টি আসনে ছাড় দেয়ার বিষয়ে জানানো হলেও, স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না দলটি। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির বর্তমান যে ২৩ জন সংসদ সদস্য আছেন, সেগুলোতে অন্ততপক্ষে ছাড় চাইছেন। যদিও এসব বিষয় নিয়ে দল দুটির মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে। ১৭ ডিসেম্বরের আগে জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে বলে জানা গেছে।
১৪ দল ও জাতীয় পার্টির বাইরে আরো যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা চাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি ইসলামী দল এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের আসন চাহিদার কথা জানিয়েছেন। তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বিএনএফ, সুপ্রিম পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলও আসন সমঝেতার নিশ্চয়তা চায় আওয়ামী লীগের কাছে। তাদের সঙ্গে যেসব আসনে সমঝোতা হবে, সেসব আসনে যেন নৌকার প্রার্থী না থাকে সে নিশ্চয়তাও চান তারা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও তাদের এসব বিষয়ে আস্বস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টি এখন আলোচনার তুঙ্গে। দুই দলের নেতারাও দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন। তবে আসন সমঝোতার বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ দল দুটি। গতকাল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দুই দলের মধ্যে বৈঠকের বিষয় নিয়ে দেয়া হয় ভিন্ন বার্তা। যেখানে আসন সমঝোতার বিষয়টি ছিল না। দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকে আমাদের আলোচনা হয়েছে দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কেননা এই মুহূর্তে রাজনৈতিক আলোচনাটাই আমাদের মুখ্য। নির্বাচনকে কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা যায়, কীভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতা ও গুপ্ত হামলার মতো নির্বাচনবিরোধী অপকর্ম প্রতিহত করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। জাপার সঙ্গে আলোচনা নিয়ে কোনো লুকোচুরির বিষয় নেই বলেও জানান তিনি।
একই কথা বলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। দুপুরে বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে চুন্নু বলেন, বুধবার রাতে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকে এককভাবে নির্বাচন করবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চলমান রাখতেই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক নির্বাচন হবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের চেয়ে এন্টি আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল আসনে জয়লাভ করব আমরা। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে পারলে ১৯৯১ সালের মতো নীরব ভোট বিপ্লব হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন চুন্নু।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়