ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিট

আগের সংবাদ

রাতারাতি ডাবল সেঞ্চুরি : ফের টালমাটাল পেঁয়াজের বাজার > অভিযানে নেমেছে ভোক্তা অধিদপ্তর > দেশি পেঁয়াজ হাওয়া

পরের সংবাদ

নতুন উত্তাপ ‘১০ ডিসেম্বর’ > মানববন্ধন করবে বিএনপি, ঘরোয়া কর্মসূচি আ.লীগের > অনুমতি ছাড়া করলে ব্যবস্থা : ডিএমপি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দেশের রাজনীতিতে এক বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল বিএনপি। ২০২২ সালের এই দিনে রাজধানীতে দলটির মহাসমাবেশ ঘিরে তুমুল উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। তবে শেষমেষ গোলাপবাগ গরুর হাটে যবনিকা ঘটে সেই উত্তাপের। এক বছর পর একই দিনে কর্মসূচি দিয়ে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে দলটি। গত ২৮ অক্টোবরের পর প্রায় দেড় মাস ‘চোরাগুপ্তা আন্দোলন’ করে আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর আবারো প্রকাশ্য কর্মসূচিতে ফিরতে চাইছেন ‘আত্মগোপনে’ থাকা বিএনপি নেতারা। অবশ্য আগের বছরের ১০ ডিসেম্বর বা এ বছরের ২৮ অক্টোবরের মতো না হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তাপ বাড়ছে দিনটি ঘিরে। এদিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঘোষণা করেছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সেদিন নিজ নিজ কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দলই।
আওয়ামী লীগের আশঙ্কা, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন বানচাল করা। এ লক্ষ্যে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি ষড়যন্ত্র করছে দলটি। এজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দরটির নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্রথমত. ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে মানববন্ধনের নামে বড় জনসমাবেশের চেষ্টা করতে পারে বিএনপি। এদিন তারা ঢাকাসহ সারাদেশে অনুরূপ কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়ত. বিএনপির লক্ষ্য মানবাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক মহলকে উসকানি দিতে চায়। তৃতীয়ত. হরতাল-অবরোধের নামে নিষ্ফল চোরাগুপ্তা কর্মসূচি পালন করে বিভ্রান্ত-হতাশ নেতাকর্মীদের মনোবল ফেরানোও বিএনপি নীতি-নির্ধারকদের লক্ষ্য।
দিনটি ঘিরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসেিজদর দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। সমাবেশের অনমুতি চেয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আবেদনও করে দলটি। কিন্তু উন্মুক্ত স্থানে আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ইসি। তাই স্থান পরিবর্তন করে ওইদিন ঘরোয়াভাবে কর্মসূচি পালন করবে দলটি। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে একই দিন ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ওইদিন গুম ও খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করবে তারা। কিন্তু এই কর্মসূচির জন্য গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনো অনুমতি চায়নি বিএনপি। অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো কর্মসূচি করতে চাইলে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে পুলিশ।
বিএনপির কর্মসূচিতে ‘গুম ও খুনের শিকার’ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেবেন বলে জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে। রাজধানীতে বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি সব

ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও জানায় তারা। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, মানববন্ধন বা অন্য কোনো কর্মসূচি পালনের জন্য ডিএমডির কাছে কোনো আবেদন করেনি বিএনপি। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মানববন্ধনে সরকার বা পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন হয় না।
জানতে চাইলে রবিবারের মানববন্ধনে পুলিশের অনুমতির প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভোরের কাগজকে বলেন, মানববন্ধনে কেনো সরকারের অনুমতি নিতে হবে? আমরা তো সমাবেশ করছি না। তাছাড়া সেদিন তো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস; আমরা দিবসটি ধরেই মানববন্ধন করব। প্রেস ক্লাব হলো মানুষের বিভিন্ন দাবি আদায়ে কথা বলার আশ্রয়স্থল। বিএনপির এই নেতা বলেন, এর আগেও বিএনপি কখনো পুলিশের অনুমতি নিয়ে সভা-সমাবেশ করেনি, পুলিশকে অবহিত করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশকে অবহিত করে কোনো প্রোগ্রাম করার মতো রাজনৈতিক পরিস্থিতি নেই। তাছাড়া, স্বাধীনতার পর মানববন্ধন করার জন্য কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের পুলিশের অনুমতির প্রয়োজন হয়েছে, এমনটা আমার জানা নেই।
এদিকে অনুমতি না নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে যদি বিভিন্ন মামলার আসামি অংশ নেয়, তাহলে তাদের গ্রেপ্তারের কথা বলছে পুলিশ। এ ধরনের বেআইনি কর্মসূচির চেষ্টা করা হলে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলছি ডিএমপি। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর মানববন্ধন কিংবা অন্য কোনো কর্মসূচি পালনের বিষয়ে অনমুতির জন্য বিএনপি পুলিশের কাছে এখনো কোনো আবেদন করেনি। যদি কোনো আবেদন তারা করে, আমরা তা যাছাই-বাছাই করে পরবর্তী সময় পদক্ষেপ নেব। আর যদি পুলিশের অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো কর্মসূচি করতে চায়, তাহলে ডিএমপির বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আওয়ামী লীগ মনে করছে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নির্বাচন ঠেকানোর নানা কৌশল করছে বিএনপি ও জামায়াত। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে তারা প্রায় দেড় মাস পর মানবাধিকার দিবস পালনের নামে একটি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। এজন্য তারা পুলিশের অনুমতিরও তোয়াক্কা করছে না। তার অর্থ হলো নতুন করে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ২৮ অক্টোবরের তাণ্ডবের পর থেকে বিএনপি মাঠ থেকে বিতাড়িত ছিল। এখন মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচির নামে আবারো মাঠে নামার চেষ্টা করছে। পুলিশের অনুমতি না নিয়ে ১০ ডিসেম্বর তারা বেআইনিভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছে। তারা আবার একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়। তাদের কী পরিকল্পনা, সেটা তারাই জানে। তাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন ঠেকানো। যদিও তারা সেটা করতে পারবে না। তিনি বলেন, বিএনপির যেসব নেতা এখনো বাইরে আছেন, তারা হঠকারি সিদ্ধান্তে নিজেদের কর্মীদের সন্ত্রাসের দিকে লেলিয়ে দিয়ে কর্মীদের আরো ভোগান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কারণ আইন অমান্য করলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে ছাড় দেবে না। আওয়ামী লীগ সেদিন পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেবে কী না জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ইনডোর কর্মসূচি আছে। আমরা এখন নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত আছি। কর্মীরা নির্বাচনের মাঠেই আছে- এটা আমাদের পূর্বের ঘোষণা।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমতি পাইনি। তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা ইনডোর অর্থাৎ শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছি। কিন্তু বিএনপি অনুমতির তোয়াক্কা না করে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছে। এটা তাদের ভালো উদ্দেশ্য নয়। নির্বাচন কমিশনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সেদিন আমরা খোলা স্থানে কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছি না। শিল্পকলা একাডেমিতে ঘরোয়া পরিবেশে আলোচনা সভা করব। বিএনপি যদি আইন না মানে, তাহলে পুলিশ তার ব্যবস্থা নেবে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ১০ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো পাল্টাপাল্টি সংঘাত বা সহিংসতার আশঙ্কা করছেন না। তাদের মতে, মানবাধিক দিবস পালন করাটা অবশ্যই প্রসংশনীয়। রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করলে কোনো সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালনের উদ্যোগ রাজনৈতিক দলগুলো নিয়েছে, আমি তাদের সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে দিনটি ঘিরে যে সংঘাত বা উত্তাপের কথা বলা হচ্ছে আমার কাছে সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না। কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তারা সত্যিই মানবাধিকারপন্থি। মানবাধিকারকে কেন্দ্র করে কোনো পক্ষই সন্ত্রাস-সহিংসতা কিংবা আসন্ন নির্বাচনকে অনাকাক্সিক্ষত পথে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করবে না, সেটা যে পক্ষেই হোক। সেটা সরকারি দল, বিরোধী দল কিংবা কোনো সংগঠন হোক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়