ডেঙ্গুতে প্রাণহানি প্রায় ১৬শ, আক্রান্ত ছাড়াল ৩ লাখ

আগের সংবাদ

স্বস্তিতে নেই নৌকার মাঝিরা : ‘ডামি’ প্রার্থীর ছড়াছড়ি, জোট শরিক ও মিত্রদের ছাড়তে হবে ৮০ আসন

পরের সংবাদ

মিত্রদের আসনে ‘সমন্বয়’ : জোট শরিকসহ অন্য শীর্ষ নেতাদের ছাড় দেবে আ.লীগ, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শিগগিরই

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : নির্বাচনে জোট শরিকদের আসন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শরিকদের প্রয়োজন আছে কিনা, সেটা ঠিক করিনি। প্রয়োজন না থাকলে জোট করব না- গত শনিবার গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় নানা কৌতূহল। প্রশ্ন জাগে তাহলে কী বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এককভাবেই ৩শ আসনে প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ? ১৪ দলীয় জোট শরিক কিংবা জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কী এবার এককভাবে নির্বাচন করবে? জোট শরিক বা অন্য মিত্র দলগুলোর প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কী কোনো ভূমিকাই থাকবে না? এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় জোট, মহাজোট, অন্য মিত্রদলের নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।
২০০৮, ১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোটগভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলটির সঙ্গে যুক্ত ছিল আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বিকল্পধারাও ছিল। সেই নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করেই অংশ নেয় জোট শরিকরা। ওইসব দলের নেতারা যেসব আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন, সেসব আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা জোটের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেন। বেশির ভাগ আসনে শরিকরা বিজয়ী হন। কিন্তু এবার শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি এককভাবে তিনশ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়। গতকাল সোমবার ২৮৯টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। আগের দিন রবিবার ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১৮১টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ। আর ৩০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ওয়ার্কার্স পার্টি। পৃথকভাবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে সাম্যবাদী দল ও তরিকত ফেডারেশন। এছাড়া বিকল্প ধারাও আলাদা প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে। পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, কল্যাণ পার্টিসহ আরো কয়েকটি দল।
নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৬টি। এসব দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিএনএফ, জাকের পার্টি, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, গণফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি (মুকিত)। এসব দলও নিজ নিজ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় নয়টি ইসলামিক রাজনৈতিক দল। এসব দল হলো- ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। গতকাল ইসলামী ঐক্যজোটও ২শ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর বাইরে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের জানান, এবারের নির্বাচনে ২৫ থেকে ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। বিএনপি না এলেও তাদের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সব শেষ হওয়ার আগে এ প্রশ্নের বিষয়ে কিছু না বলাই ভালো।
এদিকে নিজ নিজ দল থেকে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে ১০টি রাজনৈতিক দল। এগুলো হলো- জাতীয় পার্টির একটি অংশ (রওশন এরশাদ)। অন্যান্য দলগুলো হলো- জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ও তরিকত ফেডারেশন।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টিসহ যেসব দল ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন- তারা ভোটে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কোনো হস্তক্ষেপ হবে না। রবিবার গণভবনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, নির্বাচনে যেন কেউ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হয়ে না আসতে পারে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। এজন্য কেউ যেন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় কিংবা প্রচার কাজে বাঁধা না দেয়। প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেই সবাইকে বিজয়ী হয়ে আসতে হবে। এরকম আশ্বাসের ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসবে।
এসব দল ও একাধিক ব্যক্তি সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি পেয়েই তারা অংশ নিচ্ছেন। সংসদকে কার্যকর করতে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন; তাই এসব দলের শীর্ষ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন সহজে বিজয়ী হয়ে আসতে পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হবে। কেউ নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
জোটের শীর্ষ নেতাদের আসনে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় দেখা গেছে- জোট ও মহাজোটের শীর্ষ নেতারা যেসব আসনে এমপি আছেন, সেসব আসনেও প্রার্থী দিয়েছে দলটি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের লালমনিরহাট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার

রহমানকে। জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে মোহিত উর রহমান শান্তকে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আসন কিশোরগঞ্জ-৩। এখানে আওয়া লীগ প্রার্থী করেছে নাসিরুল ইসলাম খানকে। কাজী ফিরোজ রশীদের ঢাকা-৬ আসনে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সানজিদা খানম।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ঢাকা-৮ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে প্রার্থী করা হয়েছে। পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে এক সময়ের তুখোড় আমলা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মাহি বি চৌধুরীর মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া জোটের অন্যান্য নেতা যারা বর্তমানে এমপি, তাদের আসনেও প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
সমঝোতা হলে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবে আ. লীগ! : এদিকে জোট শরিকসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সহজে যেন বিজয়ী হতে পারে, সেজন্য সমঝোতার ভিত্তিতে ওইসব আসনে নিজেদের ঘোষিত প্রার্থী শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নিতে পারে আওয়ামী লীগ। ওইসব আসনে বিগত নির্বাচনগুলোর মতো ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ওইসব প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন। তবে এসব বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি আওয়ামী লীগ। দুয়েকদিনের মধ্যেই জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
গতকাল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্রতিবারই জোটবদ্ধ নির্বাচন করি। ২০০৮ সালেও করেছি। তখনো ৩শ আসনে নমিনেশন দেয়া হয়েছিল; পরে মহাজোটের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে। গতবার অর্থাৎ ২০১৮ সালেও প্রায় সব আসনে নমিনেশন দেয়া হয়েছিল, পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। এবার কোন জায়গায় কীভাবে হবে সেটা এখনো ঠিক করা হয়নি, সেজন্য আমরা ২৯৮টি আসনে নমিনেশন দিয়েছি। পরে জোটের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। আমরা ১৪ দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচন করব। এছাড়া অন্যান্যদের সঙ্গে যদি সমন্বয় করতে হয় সেটিও করা হবে। অতীতেও করা হয়েছিল।
যা বলছেন নেতারা : এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, জোটের বিষয়ে নতুন করে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আল্টিমেটলি জোটগতভাবেই নির্বাচন হবে। দলীয় প্রধান এ বিষয়ে নিশ্চয়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
১৪ দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, জোট প্রধানের সঙ্গে আমাাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা ১৪ দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেব। সময় আছে- প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেই সব ধোঁয়াশা কেটে যাবে। জোটগতভাবেই ১৪ দল নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও আশা করছেন তিনি।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে তৃণমূল বিএনপি কোনো নির্বাচন করবে না। সরকারকে মোকাবিলা করেই আমরা নির্বাচন করব। নিজের নির্বাচন করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি নিজেই নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করব। সেখানে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী নৌকার প্রার্থী। আমি তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াই করব। জনগণ চাইলে আমিসহ অন্যান্য আসনে আমাদের নেতারা বিজয়ী হয়ে আসব- ইনশাল্লাহ। তবে এর প্রধান শর্ত হচ্ছে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। যদি সেটা করা না হয়, তাহলে এর দায় সরকারকে বহন করতে হবে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু। পৃথক প্রতিক্রিয়ায় এই দুই নেতা জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেয়ার কথা বলেন। সেজন্য ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জোটবদ্ধ নির্বাচনের আগ্রহ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে তারা। ১৪ দলসূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়