টার্গেট স্কুলের সামনে অপেক্ষমাণ নারী অভিভাবকরা : ২ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

‘ডামি’র লাগাম টানবে আ.লীগ : নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে রয়েছে একাধিক কৌশল > সারাদেশেই তৈরি হয়েছে ভোটের আবহ

পরের সংবাদ

স্বস্তিতে নেই নৌকার মাঝিরা : ‘ডামি’ প্রার্থীর ছড়াছড়ি, জোট শরিক ও মিত্রদের ছাড়তে হবে ৮০ আসন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : বিএনপি বর্জন করায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক করার একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের নামনে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো আর যেন কেউ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হতে না পারে- সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে রয়েছে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জও। এর মধ্যে এককভাবে ২৯৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দুইটি বাদে এবার ফাঁকা রাখা হয়নি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট শরিকদের জন্য কোনো আসন। জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নবম, দশম ও একাদশ সংসদে শরিক ও মিত্রদের নিয়েই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছিল দলটি। এবারই ব্যতিক্রম। যদিও ক্ষমতাসীন দল থেকে বলা হচ্ছে জোট শরিকদের জন্য আসন সমঝোতার সময় এখনো আছে। তার ওপর নৌকার প্রার্থীদের লড়তে হবে নিজ দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই। কেননা এবার দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাই ডামি প্রার্থীর বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই দলীয় মনোনয়ন চেয়ে যারা পাননি, তাদের বড় একটি অংশ লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তাদের মধ্যে মনোনয়ন না পাওয়া বেশ কয়েকজন এমপিও রয়েছেন। তার ওপর প্রায় ৮০টির মতো আসন ছেড়ে দিতে হবে আওয়ামী লীগের জোট শরিক ও নির্বাচনে আসা মিত্রদের। এসব কারণে নৌকা পেয়েও স্বস্তিতে প্রার্থীরা। মহাটেনশনে তারা। নৌকা পেলেই বিজয় নিশ্চিত নয়; এই বাস্তবতা মেনেই ভোটে লড়তে হচ্ছে তাদের। কারো কারো মধ্যে নৌকাডুবির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কারণ অনেক এলাকায় হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ নেতারা নৌকার নৌকার বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নামার ঘোষণা দিয়েছেন এর মধ্যে। এদের অনেকে সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং এলাকায় প্রভাবশালী ও জনপ্রিয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের পার্টির প্রধান এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় থাকার কথা বলেছেন। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। কারণ বিএনপি নির্বাচনে আসছে না। ফলে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় যেন কেউ এবার বিজয়ী হয়ে আসতে না পারে, সে বিষয়ে এবার তিনি খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মধ্যেই যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী খুব বেশি হয়ে যায়,

সেটা দলের জন্য ক্ষতিকর হবে কিনা- আর সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কি হবে- জবাবে এই নেতা বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি বেশি হয়, তাতেও তো অসুবিধা নেই। এতে করে যিনি জনপ্রিয়, তিনি বিজয়ী হয়ে আসবেন। তারপরও দলের জন্য যেন ক্ষতিকর কিছু না হয়, সেটা তো অবশ্যই আমাদের হাইকমান্ড মনিটরিং করবে। সে কৌশলও আমাদের আছে।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় যেন এবার কেউ বিজয়ী হয়ে আসতে না পারে, সেজন্যই ডামি বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে। এতে করে নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়বে। নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হবে। এটা নৌকার প্রার্থীদের জন্য ক্ষতিকর কিনা, সেটা তো অবশ্যই আমরা দেখব।
এদিকে আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মনোনয়ন না পাওয়া বেশ কয়েকজন বর্তমান এমপি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাও আছেন। এ তালিকায় আছেন নৌকার মনোনয়নে বিজয়ী হওয়া ২০ জনের বেশি উপজেলা চেয়ারম্যানও। এর মধ্যে নিজ নিজ জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তারা। শোডাউন দিচ্ছেন নির্বাচনী এলাকায়। তাদের কর্মী-সমর্থকরা মাঠ চাঙ্গা রেখেছেন। কারণ বিগতদিনের মতো এবার দল থেকে বহিস্কার হওয়ার ভয় নেই কারো মধ্যে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক। এখানে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। তাই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন এনামুল। তার পক্ষে আছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ। এর মধ্যে রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরমও তুলেছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন পাননি বর্তমান সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা। তার স্বামী আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এবার এই এসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ভাই। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন জয়া সেন।
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। এখানে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার পক্ষে নগর আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ কাজ করছে।
গাজীপুর-৩ আসনে এবার মনোনয়ন পাননি বর্তমান সংসদ সদস্য গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংরক্ষিত এমপি রুমানা আলী। সবুজ স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
গাজীপুর-৫ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি মেহের আফরোজ চুমকি। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান।
ফরিদপুর-৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন শামীম হক। সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বর্তমানে এখানকার এমপি। কিন্তু এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। এই আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন হামীম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ।
ফরিদপুর-৪ আসনে এবারো নৌকা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লা। এখানে ফের স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। রাজশাহী-১ আসনে নৌকা পেয়েছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক। এখানে স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহী।
ঢাকা-৫ আসনে নৌকা পেয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না। বর্তমান এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু মনোনয়ন পাননি। তবে প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
সিলেট-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
এভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এর মধ্যে মনোনয়ন ফরমও দাখিল করেছেন কেউ কেউ।
এছাড়া আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসায়, সমঝোতা হলে তাদের বেশ কিছু আসন ছেড়ে দিতে হবে। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত বৃহত্তর রংপুরের বেশ কয়েকটি আসনে নৌকার প্রার্থীদের শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয় কিনা, সেই শঙ্কা এখন জোরালো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন এরকম ৩ জন বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের মনোনয়ন দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খুবই খুশি। তারা নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পেলেও এখনো ঠিক বুঝতে পারছেন না, শেষ পর্যন্ত নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন কিনা। কারণ জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হলে যদি তাদের আসনগুলো ছেড়ে দিতে হয়। যদি তাই হয়, তাহলে সেটা হবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জন্য বড় ক্ষতির কারণ। তারপরও দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন তারা। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে রাজধানীর ২টি আসন ঢাকা ৪ ও ৬ জাতীয় পার্টি এবং ঢাকা-৮ আসন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এবার ৩টি আসনেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। জোট ও মিত্রদের কারণে আসনগুলো শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিতে হয় কী না, সেই শঙ্কাও কাজ করছে নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে। তাদের একজন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, মনোনয়ন পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু নির্বাচন করতে পারব কিনা, সেটা বলা মুশকিল। তবে যেটাই হোক, দলীয় প্রধান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই মেনে নিতে প্রস্তুত আমরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়