২০১৩ সালের নাশকতা : ২ মামলায় বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর দণ্ড

আগের সংবাদ

কত আসন ছাড়বে আ.লীগ : সর্বোচ্চ ৮০টি আসনে ছাড় > ৩০ আসন পাবে ১৪ দল > চূড়ান্ত সমঝোতা শেষমুহূর্তে

পরের সংবাদ

বাদ পড়ার শঙ্কায় ঘুম হারাম : রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নৌকার মনোনয়ন চূড়ান্ত, টিকেট পাচ্ছেন না অনেক এমপি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হচ্ছেন শতাধিক সংসদ সদস্য- এমন গুঞ্জন বেশ জমজমাট আলোচনার খোরাক অনেক আগে থেকেই। সেই গুঞ্জনই এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। দুর্নীতিবাজ, শৃঙ্খলাভঙ্গকারী, আর্থিক কেলেঙ্কারী, মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে একাধিকবার দলীয় ফোরামে সতর্ক করেছেন সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপের ভিত্তিতে নির্বাচন থেকে এদের ছিটকে পড়ার আভাস দেন তিনি। গতকাল রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের চূড়ান্ত মনোনয়নে বেশ কয়েকজন বর্তমান সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, এই চিত্র শুধু রংপুর এবং রাজশাহীর নয়; সারাদেশেই বাদ পড়াদের তালিকা বেশ দীর্ঘ হতে পারে। এ সংখ্যা শতাধিক বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। ফলে কার কপাল পুড়বে- এ নিয়ে টেনশনে রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
সূত্রমতে, বর্তমান সংসদের সরকারদলীয় অনেক সদস্যই বাদ পড়বেন জোটের কারণে। জোট শরিকদের বেশ কিছু আসন ছাড় দিতে হবে। অনেকে মনোনয়ন খোয়াবেন ‘সমঝোতা’র প্রার্থীদের সুযোগ দিতে। নতুন নিবন্ধন পাওয়া দুটি দল, বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে ভোটে আসা কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের আসনে প্রার্থী না দেয়া বা দিলেও দুর্বল প্রার্থী দেয়া হতে পারে।
এছাড়া বয়সজনিত কারণে বাদ পড়বেন কেউ কেউ। নেতৃত্ব তৈরির জন্য নতুন মুখকে মনোনয়ন দেয়া হবে। বয়সজনিত কারণে মনোনয়ন ফরম কেনেননি সিলেট-৫ আসনের একাধিকবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার। অন্যদিকে অনেকেই রাজনীতিতে উত্তরাধিকার তৈরি করতে নিজেরা নির্বাচন করছেন না। ছেলে রাশেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবার মনোনয়ন চাননি পাঁচবারের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। অন্যদিকে বিতর্কের কারণে বাদ পড়ছেন অনেক বাঘববোয়ালই। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা) সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন ওই আসনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। কুড়িগ্রাম-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত আবেদনে এই অনুরোধ জানিয়েছেন। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী, বিতর্কিত ড. মুরাদ হাসান দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসন থেকে। অবশ্য মনোনয়ন পাচ্ছেন না তিনি, এটি প্রায় নিশ্চিত। এই আসনে নৌকা চান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান হেলাল, ঢাকা তেঁজগাও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ, সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান এলিন, ফজলুল হক। তবে সব মিলিয়ে বাদপড়াদের সংখ্যা শতাধিক হবে না বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন কেউ নেতৃত্বে আসবে না- এমন অবস্থান পরিষ্কার করেছে দলটি। হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীদের মনোনয়ন ঠেকাতে এবার অন্যবারের চেয়ে কঠোর আওয়ামী লীগ। এজন্য মনোনয়ন ফরমে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহকারীদের দলে বর্তমান কোনো পদসহ অতীতের অন্তত আরো দুটি সাংগঠনিক পদ থাকতে হবে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এই নতুন দুই শর্তে আটকে যাবে অনুপ্রবেশকারী অনেক রাঘববোয়াল। পরীক্ষিত, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা সহজ হবে। রাজনীতিবিদদের বাইরে কাউকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়নি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জনপ্রিয় প্রার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
৭২ প্রার্থী চূড়ান্ত, বাদ পড়ছেন অনেকেই : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী ও রংপুর- এই দুই বিভাগের জন্য দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, রংপুরে ৩৩, রাজশাহীতে ৩৯টি, মোট ৭২টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাদ পড়েছেন অনেক নেতাই। আমরা সব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়ার পর্যন্ত ফল প্রকাশ করব না। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভা চলবে। ওইদিন প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে। আমরা একসঙ্গে মনোনয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করব। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সভা মুলতবি করা হয়েছে। কারা বাদ পড়ছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য কয়জন বাদ পড়ছেন। এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না, তবে বাদ পড়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হলে তাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগে আমরা দেখি কারা বিদ্রোহ করে, তারপর সিদ্ধান্ত নেব। নির্বাচনী জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান। জোট হবে বিভিন্নভাবে। কার সঙ্গে কার জোট হবে, কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল। জোট হতেও পারে নির্বাচনের আগে, সময় আছে। কাজেই তালিকাও আসতে পারে। এমনও হতে পারে আপনিও ভাবছেন না, আমিও ভাবছি না। কিন্তু কার সঙ্গে কার জোট হয়, কেউ ভাবতে পারে না।
মনোনয়ন কেনেননি কার্যনির্বাহী সংসদের ১০ সদস্য : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সদস্য ৮১ জন। এর মধ্যে তিনটি পদ খালি থাকায় মোট সদস্য ৭৮ জন। আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ৬৮ জন। মনোনয়ন কেনেননি ১০ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, শিল্প ও বাণিজ্য

সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, আখতার জাহান ও তারিক সুজাত। এদের মধ্যে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের সংসদ সদস্য কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের আসনে মনোননয়ন কিনেছেন তার ছেলে রাশেক রহমান। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
দলীয়প্রধানের ওপর আস্থাশীল তৃণমূল : সুনামগঞ্জ-৫ আসন (ছাতক-দোয়ারাবাজার) থেকে মনোনয়ন কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। দ্বাদশ নির্বাচনেও নৌকার টিকেট পাবেন বলে আশাবাদী তিনি। জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি আগেও আমাকে আস্থায় রেখেছেন। আগেও নির্বাচিত হয়েছি। একাদশ সংসদেও নির্বাচিত হয়েছি। এলাকার উন্নয়নে অব্যাহতভাবে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তিনি যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেবেন।
দিনাজপুর-১ আসনে মনোনয়ন প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) আবু হুসাইন বিপু ভোরের কাগজকে বলেন, মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছি। উৎকণ্ঠা তো লাগছেই। যেহেতু আগের সংসদ সদস্য অনেকেই বাদ পড়েছেন। তবে আমরা সব সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাশীল। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমরা বিশ্বাস করি, নেত্রী ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়