সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে তিন নির্দেশনা

আগের সংবাদ

নতুন রক্ত সঞ্চালনে গুরুত্ব : তিনশ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত, আজ ঘোষণা > আসছেন শতাধিক নতুন মুখ

পরের সংবাদ

কত আসন ছাড়বে আ.লীগ : সর্বোচ্চ ৮০টি আসনে ছাড় > ৩০ আসন পাবে ১৪ দল > চূড়ান্ত সমঝোতা শেষমুহূর্তে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : ভোটের ডামাঢোলে চলছে জোটের হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্ধারণের পরই জোটের আসন নিয়ে দর-কষাকষি শুরু হবে। এছাড়া জোটগুলোতে এখনো ভাঙাগড়া চলছে। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর কোনো কোনো দলছুট নেতাও ভোটে আসতে পারেন। তাদের জন্য আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব বিবেচনায় রেখেই এবার ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগির চুলচেড়া বিশ্লেষণ চলছে। প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ। শর্ত থাকবে- দল নির্দেশ দিলে প্রত্যাহার করতে বাধ্য থাকবে অথবা আগেই প্রত্যাহারপত্র রেখে দেয়া হতে পারে। জানা গেছে, এবার মোট ৮০ আসনে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের জন্য ৩০ আসনে ছাড় দেবে ক্ষমতাসীনরা। বাকি ৫০ আসনে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, যুক্তফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বাকি দলগুলোর জন্য ছাড় দেয়া হবে।
একক ও জোটবদ্ধ- দুইভাবেই ভোটে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। কোন আসনে জোটবদ্ধ, আর কোন আসনে এককভাবে দলীয় প্রার্থী দেয়া হবে- সেটি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর জানানো হবে।
জানা গেছে, শেষমুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে জোটের হিসেব। এবার জাতীয় পার্টির আসন কমতে পারে। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ৩২ আসন। ওই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সরকার গঠনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দেয়। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অংশ হয়ে ভোটে অংশ নেয় জাপা। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে বেরিয়ে নিজেদের মতো নির্বাচন করে ২২টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট গঠনের পর এ পর্যন্ত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন জোটের নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলকে মোট ১৩টি আসন দেয়া হয়। ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জাসদ (ইনু) ৩টি আসন, জাসদ (আম্বিয়া) দুটি, জেপি মঞ্জু একটি ও তরিকত ফেডারেশনকে দুটি আসন দেয়া হয়। নির্বাচনে ১৪ দল থেকে ৮ জন সংসদ সদস্য হন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির ৩, জাসদের ৩, তরীকত ফেডারেশনের ১ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-জেপির (মঞ্জু) একজন। সংরক্ষিত নারী আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একজন করে সংসদ সদস্য রয়েছেন। এছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির ২৩ জন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের দুজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির ৪ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। নির্বাচনের পর জাসদ (আম্বিয়া) ১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এর আগে দশম জাতীয় নির্বাচনে ১৮ এবং নবম জাতীয় নির্বাচনে ১৪টি আসন জোটের শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন জোট শরিক দলের ৫ নেতা।
এদিকে শমসের মবিন চৌধুরী, তৈমুর আলম খন্দকার, অন্তরা সেলিমা, চৌধুরী ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তারের ছেলে মাইনুল হাসানসহ তৃণমূল বিএনপির নেতাদের জন্য বেশ কয়েকটি আসনে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, আগামী রবি-সোমবার (২৬-২৭ নভেম্বর) জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জোটের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনায় বসবে ১৪ দলীয় শরিকরা। ওই বৈঠকে শরিকদের আসন ভাগভাগি চূড়ান্ত হবে। জোট নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান সংসদে শরিকদের প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে আনুপাতিকহারে দুয়েকজন সংযোজন-বিয়োজন করে আসন সমঝোতা করা হবে।
দরকষাকষিতে ১৪ দল : গত তিনটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারো ১৪ দলীয় জোটগতভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া আছে। গত ১৯ জুলাই শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ১৪ দলের প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন সম্মতির পর নড়ে বসেন ১৪ দলীয় জোট নেতারা। গত নির্বাচনের পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে শরিকদের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্ব ঘোচানোর পাশাপাশি তাদের ক্ষোভ-অভিমান ভুলে আবারো ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামেন তারা। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি প্রাথমিকভাবে ৩০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এদের মধ্যে দলের বর্তমান তিন সংসদ সদস্যসহ দশটি আসনের জন্য আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় চাইবে তারা। বাকি আসনগুলোতে দলীয় প্রতীক হাতুড়ি নিয়ে আলাদা নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। দলটি বর্তমান তিন সংসদ সদস্য ঢাকা-৮ আসনে দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন, রাজশাহী-২ আসনে সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং সাতক্ষীরা-১ আসনে অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ছাড়াও মেহেরপুর-২ আসনে পলিটব্যুরোর সদস্য নুর আহমেদ বকুল এবং নাটোর-১ আসনে ইব্রাহিম খলিলের জন্য ছাড় চাইবে।
গতকাল ১৮১ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে জাসদ (ইনু)। নির্বাচনে জোটের কাছে বর্তমান সংসদ সদস্য দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের ফেনী-১, স্থায়ী কমিটির সদস্য রেজাউল করিম তানসেনের বগুড়া-৪ এবং সহসভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য আফরোজা হক রীনার জন্য একটি আসনসহ ৮ আসনের জন্য দরকষাকষিতে যাবে জাসদ। বাকি আসনগুলোতে দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে আলাদা নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে দলটির। জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পিরোজপুর-২ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের জন্য একটি আসনে জোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চাইছে দলটি। তরিকত ফেডারেশন ২০০ আসনে এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে। ১৪ দলীয় জোটের কাছে দলের চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর চট্টগ্রাম-২ আসন ছাড়াও মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর জন্য কুমিল্লা-৮ অথবা কুমিল্লা-৯ আসনসহ ১৫টি আসনের মনোনয়ন চাইবে তরিকত ফেডারেশন। দলীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার চট্টগ্রাম-১ আসনসহ কমপক্ষে ছয়টি আসন চায় সাম্যবাদী দল। এগুলোসহ মোট ১০টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। গণতন্ত্রী পার্টি (আরশ আলী) চায় দলের সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলনের জন্য তিনটি আসনসহ ১০-এর অধিক আসনে জোটের মনোনয়নের নিশ্চয়তা। আর গণতন্ত্রী পার্টি (শাহাদাৎ) চায় সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান খান পারভেজের দুটিসহ আরো কয়েকটি আসন।
একইভাবে কমিউনিস্ট কেন্দ্র চাইছে দলের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসীত বরণ রায়ের জন্য দুটি আসন। এ ছাড়া ন্যাপ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং বাসদসহ (রেজাউর) শরিক অন্য দলগুলো মনোনয়ন দেয়ার বেলায় ‘যথাযথ মূল্যায়ন’ আশা করছে আওয়ামী লীগের কাছে।
১৪ দলের নেতারা যা বলছেন : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ভোরের কাগজকে বলেন, এখনো জোটের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি। শুরু হলে তারা এ নিয়ে কথা বলব, নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরব।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ১৫টি আসন চাইব। এর মধ্যে ৫/৭টি আসন আমাদের চাই। তবে দরকষাকষির কিছু নেই। জোটনেত্রী শেখ হাসিনা যা ভালো বুঝবেন, তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা সঙ্গে আছি। কারণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আমরা যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রায় কার্যকর করেছি, উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে। এই অর্জন ধরে রেখেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে।
১৪ দলের ঐক্য অটুট ছিল, আছে এবং থাকবে মন্তব্য করে জোটের সমন্বয়ক-মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, আগামী নির্বাচনে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে লড়বে। জোটগত আসন নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। আসন বণ্টনের বিষয়টি সময়মতো শরিকদের সঙ্গে বসে ফয়সালা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়