২০১৩ সালের নাশকতা : ২ মামলায় বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর দণ্ড

আগের সংবাদ

কত আসন ছাড়বে আ.লীগ : সর্বোচ্চ ৮০টি আসনে ছাড় > ৩০ আসন পাবে ১৪ দল > চূড়ান্ত সমঝোতা শেষমুহূর্তে

পরের সংবাদ

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও ইসরায়েলি হামলা : ৩০০ ফিলিস্তিনির মুক্তির তালিকা ইসরায়েলের

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : যুদ্ধবিরতির চুক্তির পরও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা চলছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে অস্থায়ী একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে জিম্মি মুক্তি আজ শুক্রবারের আগে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী হামাসের ৩০০ লক্ষ্যস্থলে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সুড়ঙ্গপথ ও অস্ত্রভাণ্ডার। এদিকে, দুই পক্ষের মধ্যস্থতাকারী কাতার বলেছে, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরুর সময় খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।
ইসরায়েল সরকার ও হামাসের আগে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে একমত হয়। সে অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে গাজায় চার দিন ইসরায়েলি হামলা বন্ধ রাখার কথা ছিল। এ ছাড়া চুক্তির আওতায় অন্তত ১৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়ার কথা ইসরায়েলের। পাশাপাশি গাজায় আরো মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েল থেকে জিম্মি করা অন্তত ৫০ জনকে মুক্তি দেবে হামাস।
তবে যুদ্ধবিরতি এবং ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের মুক্তি দেয়া কখন থেকে শুরু হবে তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। মিসরের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়র্টার্সকে জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারীরা গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হ্যানেগবি বলেছেন, ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা অগ্রসর হচ্ছে এবং অব্যাহত আছে। পক্ষগুলোর মধ্যে হওয়া মূল চুক্তি অনুসারেই (জিম্মি) মুক্তি শুরু হবে আর তা শুক্রবারের আগে হচ্ছে না।’
ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম ক্যান অজ্ঞাত এক ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু করতে ২৪ ঘণ্টা দেরি হয়েছে কারণ চুক্তিটিতে হামাস ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা স্বাক্ষর করেননি।
এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বাক্ষর করা হলেই চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে তারা আশাবাদী।
ক্যানের দেয়া উদ্ধৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা এটি পরিষ্কার করতে চাই যে জিম্মিদের পরিবারগুলো যে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছে সেই কারণে শুক্রবারের আগে

মুক্তি দেয়ার কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি।’
৭ অক্টোবর গাজার সীমান্তসংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন আক্রমণ দেশটির সরকারকে হতবাক করে দেয় এবং সাধারণ ইসরায়েলিরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। ওই হামলায় ১২০০ জন নিহত হয়েছেন এবং তাদের অধিকাংশই বেসামরিক বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। ওইদিন প্রায় ২৪০ জনকে বন্দি করে গাজায় এনে জিম্মি করে রাখে হামাস। তারপর থেকে পাঁচজন মুক্তি পেয়েছেন।
এর প্রতিশোধ নিতে প্রায় সবদিক থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। তাদের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও গোলা হামলায় ১৪ হাজারেরও বেশি গাজাবাসী ফিলিস্তিনি নিহত হয়, এদের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।

ফিলিস্তিনিদের মুক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে ইসরায়েল :
ইসরায়েল ৩০০ ফিলিস্তিনির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যারা ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে হওয়া চুক্তির অধীনে মুক্তি পেতে পারে। ইসরায়েলের আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা তালিকায় তাদের নাম, বয়স এবং বন্দি করার কারণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে প্রাথমিকভাবে ১৫০ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবিসিকে জানিয়েছে যে ইসরায়েলের হাতে অন্তত ৭০০০ ফিলিস্তিনি বন্দি অবস্থায় আছে। যার মধ্যে অন্তত ২০০ নারী, এছাড়া প্রায় ৬০টি শিশু রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকল্প পরিচালক সারি বাশি নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামকে বলেছেন, কিছু শিশুকে ‘পাথর নিক্ষেপের মতো তুলনামূলক লঘু’ অপরাধের জন্য আটক করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ‘এই ফিলিস্তিনি শিশুদের সামরিক আইনের অধীনে মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাবা-মা বা আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়াই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং অপেক্ষাকৃত লঘু অপরাধের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে।’
শিশুদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান গাজা :
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থার (ইউনিসেফ) প্রধান ক্যাথেরিন রাসেল বলেছেন, গাজা উপত্যকা বিশ্বে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান। রাসেল আরো বলেন, অনেক চেষ্টার পর গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাময়িক যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, তা শিশুদের জীবন বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল গত বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৫ হাজার ৩০০-এর বেশি শিশু নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা মোট নিহত মানুষের সংখ্যার ৪০ শতাংশ।
স¤প্রতি গাজার দক্ষিণাঞ্চল সফর করেছেন রাসেল। সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা নজিরবিহীন, যা দেখলাম ও শুনলাম, তাতে আমি স্তম্ভিত।’
জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় চার দিন লড়াই ও বোমা হামলা বন্ধ রাখার ব্যাপারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে চুক্তিটি হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন রাসেল। তবে তিনি মনে করেন, শিশুদের বাঁচাতে, ত্রাণকর্মীদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এ পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। অবিলম্বে এ নির্বিচার হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য জরুরিভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রাসেল বলেন, গাজায় আরো ১ হাজার ২০০ শিশুর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, তারা হয়তো বোমায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, নয়তো নিখোঁজ। গাজা উপত্যকার ১০ লাখ শিশু, তথা সব শিশু খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় আছে। শিগগিরই তা বিপর্যয়পূর্ণ পুষ্টির সংকটে রূপ নিতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়