প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ ডেস্ক : যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েল একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে জিম্মি কিছু ব্যক্তির মুক্তি নিশ্চিত করতে পারবে ইসরায়েল।
গাজায় ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও এবং ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা হামলা চালানো হলেও পক্ষ দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো থেকে জোরালো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামাসের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের সঙ্গে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর কাছাকাছি রয়েছেন’ এবং গোষ্ঠীটি কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে তাদের ‘প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিয়েছে’।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, হামাস ও ইসরায়েল একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। বাইডেনের ভাষায়, আমরা এখন অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছি, আগে কখনোই এমনটা হয়নি। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি জিম্মি নিয়ে সমঝোতার বিষয়ে বলেন, আমরা আগে যেখানে ছিলাম তার চেয়ে কাছাকাছি আছি। তিনি জানান, গাজায় বন্দি হয়ে থাকা কিছু জিম্মির মুক্তি ও অবরুদ্ধ ছিটমহলটিতে অতি প্রয়োজনীয় ত্রাণ প্রবেশ অনুমোদন করতে একটি চুক্তির বিষয়ে সমঝোতার কাছাকাছি তারা।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এছাড়া দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েল থেকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করা হয়েছে। সেদিন থেকেই গাজায় ভয়াবহ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে যোগ দিয়েছে স্থল বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ১৩,৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৫ হাজর ৬০০ শিশু ও ৩ হাজার ৫৫০ নারী রয়েছে।
নেতানিয়াহুর ওপর ক্ষুব্ধ জিম্মিদের স্বজনরা : হামাসের হাতে জিম্মি ২৪০ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা সোমবার সন্ধ্যায় তেল আবিবে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ৩ ঘণ্টা বৈঠক করেন। জিম্মিদের মুক্তি দেয়াকেই এখন সর্বোচ্চ মিশন বলছেন নেতানিয়াহু।
জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা এরই মধ্যে নেতানিয়াহুর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার সঙ্গে সাক্ষাতের আগ মুহূর্তে বেশ কয়েকজন জিম্মিদের স্বজন আপত্তি জানান। অনেকে বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে যান। ক্ষোভের বর্শবর্তী হয়ে একজন স্বজন জানান, বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করার চেয়ে হামাসকে পরাজিত করার বিষয়ে এখন বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এদিকে বন্দিদের মুক্তি দেয়ার ইস্যুতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এই নিয়ে কয়েক দফা পথেও নেমেছেন জিম্মিদের স্বজন ও সমর্থকরা।
বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, জিম্মিদের ফিরিয়ে দেয়া না পর্যন্ত সরকার হাল ছাড়বে না। আমরা পরিবারের কষ্টের কথা শুনেছি। আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ, কূটনীতিকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ২৪ ঘণ্টা আমার দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি জিম্মিদের মুক্তির ইস্যুতে।
আরো ৬০টি ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংস : হামাসের হামলায় ৩ দিনে ৬০টিরও বেশি ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংস হয়ে গেছে। গত সোমবার হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা বলেন, গত তিন দিনে হামলার শিকার এসব ইসরায়েলি সামরিক যানের মধ্যে ১০টি সেনা সদস্য বহনকারী যানও রয়েছে। গাজা উপত্যকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে হামাসের ‘তীব্র সংঘর্ষ’ চলছে।
ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের রোগীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে : গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল (রুমাহ সাকিত ইন্দোনেশিয়া) থেকে ২০০ রোগীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রেড ক্রসের সহায়তায় তাদের সরিয়ে নেয়া হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা সোমবার বলেন, ২০০ রোগীকে বাসে করে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবরোধ করে রেখেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আগে জানিয়েছিল, গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের বোমা হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চিকিৎসক ও রোগী আছেন।
ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর ড্রোন-রকেট হামলা : গাজায় ইসরায়েলের-হামাস সংঘাত শুরুর পর হামাসের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ বাহিনীর সা¤প্রতিক এক হামলায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বিরানিত সেনা ঘাঁটিতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সোমবার দক্ষিণ লেবাননে কামানের গোলা ছুঁড়ে হামলার সূত্রপাত ঘটায়। তবে আইডিএফ দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহ বাহিনীকে এগিয়ে আসতে দেখে তা প্রতিহত করার জন্য এই হামলা চালায়। ইসরায়েলের অতর্কিত হামলার পর বেশ কিছু রকেট ও মর্টার ছুঁড়ে জবাব দেয় হিজবুল্লাহ। এসব হামলায় কেউ হতাহত না হলেও বিরানিত ঘাঁটি ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট দাবি করেছেন, অক্টোবর ৮ থেকে শুরু করে গত সোমবার পর্যন্ত হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে এক হাজারেরও বেশি রকেট, মর্টার, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পাঠিয়েছে। এসব হামলায় হিজবুল্লাহর ৭৬ জন কর্মীসহ মোট ১০০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তি ও রয়টার্সের এক সাংবাদিকও আছেন।
এদিকে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে সংঘাতে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের ৩ বেসামরিক ব্যক্তি ও ৬ সেনা নিহত হয়েছেন।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।