৪৮ ঘণ্টার অবরোধ সফল করার আহ্বান বিএনপির

আগের সংবাদ

বাদ পড়ার শঙ্কায় ঘুম হারাম : রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নৌকার মনোনয়ন চূড়ান্ত, টিকেট পাচ্ছেন না অনেক এমপি

পরের সংবাদ

সমঝোতা হলে পুনঃতফসিল : সুযোগ আছে সংবিধানে > আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের > সিদ্ধান্ত নিতে হবে ১০ দিনের মধ্যেই

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি, বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার অনড় অবস্থান, বিএনপির দলছুটদের বিভিন্ন ফ্রন্ট করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার মধ্যেই নির্বাচনের পুনঃতফসিল হতে পারে- এমন আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। গত কয়েক দিন ধরেই চলা এই আলোচনায় ঘি ঢেলেছে গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য। তার সাফ বক্তব্য, সময়সীমা এডজাস্ট করার বিষয় নির্বাচন কমিশনের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সুরে সুর মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন বলছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তফসিল পেছানোর সুযোগ আছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হলেই কেবল তফসিল পেছানোর উদ্যোগ নেবে কমিশন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। যদি আজকালের মধ্যে এই পরিবেশ তৈরি হয় তবেই তফসিল পেছানো হবে। নতুবা ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীই দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মূলত গত রবিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ নির্বাচন পেছাতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। ওই আহ্বানের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ আলোচনার প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তারা পুনঃতফসিলের বিষয়টি বিবেচনা করবে। তবে তা আগামী ১০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার পর পুনঃতফসিল করা হলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
একাধিক নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তে তারা অনড় রয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোট শেষ করতে চায়। বর্তমান কমিশন কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যাবে না। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হলে পুনঃতফসিলের কথা বিবেচনা করবে। এবারো বিএনপি নির্বাচনে এলে পুনঃতফসিল করার জন্য সময় ইসির হাতে রয়েছে। কারণ জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ভোটের তারিখ নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে।
সংবিধানে সুযোগ আছে, বলছে নির্বাচন কমিশন : নির্বাচন কমিশন প্রথমে এ নিয়ে চুপ থাকলেও অবশেষে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি বিএনপিসহ বড় দলগুলোর নির্বাচনে আসতে চাচ্ছে। যদি তারা পর্দার অন্তরালে আলাপ-আলোচনা বা জোটবদ্ধ হয় তাহলে বিষয়টি (তফসিল) পেছানোর সুযোগ আছে। তিনি বলেন, বড় রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে আসলে তফসিল পেছানো নিয়ে সংবিধানে সুযোগ আছে। তবে সময়মতো নির্বাচন না হলে সংবিধানে একটি শূন্যতা তৈরি হবে। তাই সময়মতো নির্বাচন হবে।
এরআগে গত সোমবার নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা তার বক্তব্যে ভোট পেছানোর ইঙ্গিত দেন। নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিএনপি যদি ভোটে আসে আমরা ওয়েলকাম করব। বিএনপি নির্বাচনে এলে আইন মেনে সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পুনঃতফশিল চাইলে ইসি কোনো পদক্ষেপ নেবে কী না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে আসতে চাইলে অবশ্যই আমরা ওয়েলকাম করব। তারা নির্বাচনে আসতে চাইলে আমরা

ফিরিয়ে দেব-এটা হবে না। কিভাবে কী করা যায় তা আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে বিএনপিকে সহায়তা দেয়ার কথা জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিএনপি যদি বলে আমরা নির্বাচন করব, আমাদের সহায়তা করেন তাহলে অবশ্যই করব। তবে রাজনৈতিক দলকে কন্ট্রোল করার দায়িত্ব আমাদের না। যারা নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের জন্য যত রকম চেষ্টা করা, তা করা হবে। যারা নির্বাচনে আসবে না, তাদের ব্যাপারে কিছু করার নেই।
আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের : এদিকে সংবিধানের সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন কমিশন চাইলে তফসিল পেছাতে পারে, এতে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তফসিল পেছানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তফসিল পেছানো হলে আওয়ামী লীগের আপত্তি থাকবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনের বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের। সময়সীমা কিন্তু আছে। এই সময়সীমা ঠিক রেখে তারা যদি সমন্বয় (অ্যাডজাস্টমেন্ট) করে, সেটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক সমঝোতায় পুনঃতফসিলের নজির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রয়েছে। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার চার দিনের মাথায় ওই বছরের ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল করা হয়। ভোটগ্রহণের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়