মুজিবুল হক চুন্নু : মানুষ ভোট দিতে পারবে এই আস্থা নেই

আগের সংবাদ

শিক্ষা বাঁচানোর উপায় কী : হরতাল-অবরোধে আটকে আছে প্রায় ২ কোটি পাঠ্যবই, ঢাকায় শুক্র-শনিবার ক্লাস-পরীক্ষা

পরের সংবাদ

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু ও জনসচেতনতা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে পানিতে ডুবে প্রতি বছর অনেক মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হচ্ছে। পানিতে ডুবে কোনো মানুষের মৃত্যু সত্যিই হৃদয়স্পর্শী এক দুর্ঘটনার নাম। আর তা যদি হয় কোনো শিশুর বেলায়, সেটা তো আরো মর্মস্পর্শী বেদনাদায়ক। একটি সুস্থ-সবল আলো ঝলমলে শিশু পরিবারের অভিভাবকদের সামান্য অসতর্কতার কারণে পানিতে ডুবে মৃত্যুর মতো কষ্ট একটি পরিবারকে সারাজীবন কাঁদাতে পারে। পানিতে ডুবে যে কারোরই মৃত্যু হতে পারে। তবে এই হার বড়দের তুলনায় ছোটদের ক্ষেত্রে শতকরা ৮৩ ভাগ বেশি বলে জানা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ সারা বিশ্বে পানিতে ডুবে মারা যায়, যার ৯০ শতাংশই ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। ইউনিসেফের এক তথ্য বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যা মোট শিশুমৃত্যুর ২৮ ভাগ। বৈশ্বিক তথ্যানুযায়ী, পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মারা যায় ১-৪ বছরের শিশুরা এবং দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ বয়স হলো ৫-৯ বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেয়ে শিশুদের তুলনায় দ্বিগুণ ছেলে শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সরকারি এক হিসাবেই দেখা গেছে, দেশে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সি শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ এখন পানিতে ডুবে মৃত্যু। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের সাড়ে ৬ মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত) সারাদেশে ৫১৬ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। মারা যাওয়াদের মধ্যে ৫০৩ শিশু, অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই মৃত্যুর বেশির ভাগ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নদীনালা, খালবিল ও জলাধার পরিবেষ্টিত জনপদে এ ধরনের ডুবে মৃত্যুবরণ বেশি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১-১৭ বছর বয়সি ১৪ হাজার ৪৩৮টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। শিশু ও কিশোরদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া, যা বর্তমানে একটি অবহেলিত জাতীয় সংকট বলে জানান বিজ্ঞজনরা।
এমনই একটি জরিপের বরাত দিয়ে বিবিসির একটি সংবাদ বলছে বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ৪০ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (২০২১) অনুযায়ী, ৫ বছর বয়সি শিশুর মোট মৃত্যুর ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হয় পানিতে ডুবে। গত ৩ বছরে এর হার দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। যদিও পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুকে বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন রোগে শিশুমৃত্যুর জন্য দায়ী রোগ প্রতিরোধের এসডিজি যে তালিকা করেছে, তাতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু সেই তালিকাতে নেই। তবে বিষয়টি ইতোমধ্যেই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ২০২১ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পানিতে ডুবে মৃৃত্যুকে ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর ২৫ জুলাই আন্তর্জাতিকভাবে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শিশুদের ডুবে মৃত্যু রোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। এর মধ্যে রয়েছে শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন, সাঁতার শেখানো, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রভৃতি। এই ব্যবস্থার পাশাপাশি ডুবে মৃত্যু রোধে একটি জাতীয় কর্মপন্থাও করতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সর্বোপরি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও যথেষ্ট সচেতনতামূলক কার্যকলাপ পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সমাজকর্মী থেকে শুরু করে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বর্ষা ও বন্যার সময় ব্যাপকভাবে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে পারে। এছাড়া যেসব পরিবারে শিশু আছে, তাদেরও এ বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। বাড়ির আশপাশের জলাশয়গুলো নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা যেতে পারে, যাতে কোনো শিশুই অন্তত অবহেলার কারণে অকালে পানিতে ডুবে প্রাণ না হারায়।

নুরুন্নবী খোকন : কবি ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়