মুজিবুল হক চুন্নু : মানুষ ভোট দিতে পারবে এই আস্থা নেই

আগের সংবাদ

শিক্ষা বাঁচানোর উপায় কী : হরতাল-অবরোধে আটকে আছে প্রায় ২ কোটি পাঠ্যবই, ঢাকায় শুক্র-শনিবার ক্লাস-পরীক্ষা

পরের সংবাদ

নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে দ্বিমুখী অবস্থান জাপার : ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ চূড়ান্ত হয়নি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে নানা নাটকীয়তা ঘটনা ঘটাচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। একদিকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে। অন্যদিকে একেক নেতা একেক ধরনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আবার কেউ বলছেন, সিদ্ধান্তের পরই ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। এক কথায়, নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে চলছে দ্বিমুখিতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গতকাল সোমবার থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে জাতীয় পার্টি। তবে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মহাসচিবের এমন বক্তব্যে অবাক হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলের এ ধরনের দ্বিমুখী সিদ্ধান্তে হতাশার চিত্র ফুটে ওঠে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আসা কয়েকজন নেতা বলেন, একদিকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি, অন্যদিকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেই। এটা আবার কেমন সিদ্ধান্ত?
জাতীয় পার্টির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। পাশাপাশি নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া বাকি। কয়েকদিনের মধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেবেন। আর নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সে অনুযায়ী দলটি গতকাল থেকে মনোনয়ন ফরমও বিক্রি শুরু করে। তবে আসন বণ্টনসহ কয়েকটি বিষয়ে সুরাহা না হওয়ায় এখনো ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেয়নি জাপা।
সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টনসহ কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে চায় জাতীয় পার্টি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ দেখাচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়- আসন বণ্টনের বিষয়ে সরকার এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে না। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর এ বিষয়ে আলোচনা করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, কিছু বিষয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় আছি। আশা করি, শিগগিরই সেই কাক্সিক্ষত আলোচনা হবে। এরপর নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।
মহাসচিবের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, মহাসচিব হয়তো ভিন্ন কোনো কারণে এই কথা বলেছেন। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো ভেতরে কোনো দরকষাকষির ব্যাপার থাকতে পারে। তবে চূড়ান্ত বিচারে পার্টি নির্বাচন করবে এতে কোনো সন্দেহ বা সংশয় নেই। জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের দল নির্বাচন করতে প্রস্তুত। সময়মতো চেয়ারম্যান ঘোষণা করবেন। দেখতে পাচ্ছেন, অলরেডি মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। এটা তো নির্বাচনে যাওয়ারই প্রক্রিয়া।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে গতকাল জি এম কাদেরের পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করা হয়েছে। একই আসনে বর্তমানে রওশন এরশাদের ছেলে রাহাগীর আল মাহি সাদ (সাদ এরশাদ) সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। এবারো তিনি একই আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। তাই এই আসনে কে নির্বাচন করবেন সে বিষয়ে রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের মধ্যে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। ফলে এ বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে পারে।
এদিকে গতকাল মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথমদিন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথমদিনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ছাড়াও তার স্ত্রী শেরিফা কাদের ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এছাড়া গতকাল দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ সিনিয়র নেতারাও দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। গতকাল পাঁচ শতাধিক মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
তবে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত জাপা নির্বাচনে অংশ নিবে কিনা, সে বিষয়ে জাতীয় পার্টি অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমরা এখনো নিইনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখছি। সময়ের বাধ্যবাধকতা আছে, তাই নির্বাচনী কার্যক্রম এগিয়ে রাখছি। দলের চেয়ারম্যান ৩০ নভেম্বরের আগে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
তবে দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, দেশের স্বার্থে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশের অগ্রগতি, দেশের স্বার্থ। বিদেশিরা এসে প্রেসক্রিপশন কেন দেবেন? আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আরেক কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনীমুখী দল। আমি সারা বছরই দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নির্বাচন কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকি। তারই অংশ হিসেবে দলের নির্দেশনায় আমার নির্বাচনী এলাকার ঢাকা-৪ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছি। নির্বাচনের জন্য আমি পুরোপুরি প্রস্তুত। দল যে নির্দেশনা দেবে সেটা মেনে কাজ করব।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত শনিবার জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আলাদা দুটি চিঠি যায়। একটি পাঠান দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। অন্যটি পাঠান দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। রওশন এরশাদের দেয়া চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টি বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের মতো এবারো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরদিন রবিবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও তিনি এ কথা বলেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের পুনঃতফসিলের অনুরোধও করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়