মুজিবুল হক চুন্নু : মানুষ ভোট দিতে পারবে এই আস্থা নেই

আগের সংবাদ

শিক্ষা বাঁচানোর উপায় কী : হরতাল-অবরোধে আটকে আছে প্রায় ২ কোটি পাঠ্যবই, ঢাকায় শুক্র-শনিবার ক্লাস-পরীক্ষা

পরের সংবাদ

গাজায় বিপর্যয় বিশ্বের জরুরি পদক্ষেপ চায় চীন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ‘মানবিক বিপর্যয়’ থামাতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। গতকাল সোমবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের তীব্রতা কমানোর লক্ষ্যে আলোচনার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, সৌদি আরব ও জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের প্রতিনিধিরা বেইজিংয়ে অবস্থান করছেন। প্রতিনিধি দলের মধ্যে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিবও আছেন।
ঐতিহাসিকভাবেই চীন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ক্ষেত্রে তারা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে। গতকালের বৈঠকে দেয়া উদ্বোধনী বক্তব্যে কূটনীতিকদের উদ্দেশে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, দ্রুত গাজা পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং যত দ্রুত সম্ভব মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি। গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশে গাজা পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে। এ সংঘাত যেন ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে জরুরিভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরব দেশগুলোর কূটনীতিকদের উদ্দেশে ওয়াং ই বলেন, আরব ও মুসলিম দেশগুলোর ভালো বন্ধু ও ভাই বেইজিং। আমরা সব সময় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছি। এ সংঘাতে ন্যায়বিচার ও ন্যায়পরায়ণতার পক্ষে চীন সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এছাড়া দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েল থেকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করা হয়েছে। সেদিন থেকেই গাজায় ভয়াবহ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে যোগ দিয়েছে স্থল বাহিনী।
হামলার প্রথম দিনই উপত্যকায় পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পাশাপাশি জ্বালানি তেল প্রবেশেও নিষিদ্ধ করে ইসরায়েল। কয়েকদিনের মধ্যেই জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায় উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। জ্বালানি তেলের অভাবে এরই মধ্যে উপত্যকার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় হামলা চালিয়ে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, আল-শিফার নিচে ভূগর্ভে হামাসের একটি কমান্ড সেন্টার আছে। হাসপাতালটিকে ও এর নিচে থাকা টানেলগুলোকে সামরিক অভিযান গোপন করতে ব্যবহার করছে তারা। জিম্মিদেরও সেখানে বন্দি করে রেখেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও হামাস উভয়েই জানিয়েছে, ইসরায়েলের এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা এবং এটির কোনো ভিত্তি নেই।
ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে হামলা, নিহত ১২ : গাজার উত্তরাঞ্চলে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের বোমা হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। গাজার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছে। নিহতদের মধ্যে চিকিৎসক ও রোগী আছেন।
গাজার উত্তরাঞ্চলে বড় হাসপাতালগুলোর একটি ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত রবিবার কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা না দিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক নিয়ে হাসপাতালটি ঘিরে ফেলে এবং হামলা চালায়। ইসরায়েলি ট্যাংক এখনো হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে রেখেছে।
ধারণা করা হচ্ছে আল-শিফা হাসপাতালে যা ঘটেছে ইসরায়েলি বাহিনী তারই পুনরাবৃত্তি ঘটাতে যাচ্ছে এবার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে। তারা ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালটিও দখল করে নিতে পারে।
ইসরায়েলি গোলার আঘাতে হাসপাতালের তৃতীয় তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় জেনারেটর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বোমা হামলা চলার মধ্যে মোবাইল ফোনের আলো ব্যবহার করে চিকিৎসাকর্মীরা রোগীদের অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনী ক্রমেই হামলা জোরদার করছে। তবে হাসপাতালটির কর্মীরা বলেছেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে তারা হাসপাতালে থেকে যাবেন। হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসাকর্মী, আহত ব্যক্তিসহ প্রায় ৭০০ মানুষ অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজায় নিহত বেড়ে ১৩ হাজার : গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ১৩ হাজারে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ৫ হাজার ৫০০টির বেশি শিশু রয়েছে। আর নারী ৩ হাজার ৫০০ জন। আহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহতদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী। নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রবিবার গাজা সরকারের গণমাধ্যম কার্যালয় এ তথ্য জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলায় ৪৩ হাজারের বেশি আবাসন ইউনিট পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন ইউনিটের সংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজার। এর মানে গাজা উপত্যকার ৬০ শতাংশ আবাসিক ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পশ্চিম তীরে নিহত ২শ ছাড়াল : হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও নিয়মিত বিমান হামলা ও স্থল হামলা চলছে। সেখানে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪৮টি শিশুও রয়েছে। এ অঞ্চলে হামাসের অস্তিত্ব না থাকলেও হামলা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গাজায় চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত ইসরায়েলি সেনা সদস্যের সংখ্যা পৌঁছেছে ৬৫ জনে। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়