মুজিবুল হক চুন্নু : মানুষ ভোট দিতে পারবে এই আস্থা নেই

আগের সংবাদ

শিক্ষা বাঁচানোর উপায় কী : হরতাল-অবরোধে আটকে আছে প্রায় ২ কোটি পাঠ্যবই, ঢাকায় শুক্র-শনিবার ক্লাস-পরীক্ষা

পরের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন : আসনপ্রতি প্রার্থী সংখ্যাগড়ে ১০ থেকে ১১ জন

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির গতকাল ছিল তৃতীয় দিন। আজ মঙ্গলবার মনোনয়ন ফরম তোলা ও জমার শেষদিন। গতকাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলটির দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন ৩ হাজার ১৯ জন প্রার্থী। ৩শ আসনে গড়ে ১০ জন করে প্রার্থী মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। আজ শেষদিনে আরো মনোনয়ন ফরম বিক্রির আশা করছে দলটি। আজ ন্যূনতম ৩শ ফরম বিক্রি হলেও প্রতি আসনে প্রার্থীর গড় সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ জন করে। এবারো আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নানা শ্রেণিপেশার মানুষও নৌকার মনোনয়ন ফরম তুলেন। তাদের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা, ব্যাবসায়ী, আমলা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ, চিকিৎসক, শিক্ষক, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সেল সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নেন তিনি। এরপর অন্যান্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলা শুরু করেন। এবার প্রতি মনোনয়নের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা করে। প্রথমদিন মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭৪টি। দ্বিতীয় দিন রবিবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২১২টি। আর গতকাল তৃতীয় দিন বিক্রি হয়েছে ৭৩৩টি। এর মধ্যে অনলাইনেও অনেকেই দলীয় ফরম নিয়েছেন। তিন দিনে মোট ৩ হাজার ১৯টি ফরম বিক্রি হয়েছে। প্রতি ফরমের ফি ৫০ হাজার টাকা হিসেবে সর্বমোট ১৫ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফরম বিক্রি হয়েছে।
সরজমিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের চেয়ে কিছুটা কম হলেও গতকাল তৃতীয় দিনও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল জমজমাট। সকাল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনতে অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ভিড় থাকায় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন অনেকেই। এ সময় পাশ থেকে অনুসারী কর্মী ও সমর্থকদের নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৮ বিভাগের জন্য স্থাপন করা হয় ১০টি বুথ। সেখান থেকে ফরম বিক্রি হচ্ছে। মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হলে দলের মনোনয়ন বোর্ড যাচাই-বাছাই শেষে ৩০০ আসনে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম যারা নিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই রাজনীতিবিদ। বর্তমান মন্ত্রী ও এমপি ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির সাবেক ও বর্তমান নেতাদের বেশির ভাগই নিজ নিজ এলাকায় প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও এসব ইউনিটের বিভিন্ন কমিটির নেতারাও এমপি হতে ফরম তুলেছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরো রয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পৌরসভার মেয়র এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরও অনেকেই মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। এবার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বড় একটি অংশ রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। যাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। এবার মনোনয়নে এদের সংখ্যাটাই বেশি। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও নৌকার মনোনয়নের জন্য দলীয় ফরম তুলেছেন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পিএসসি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ক্রিকেটার, ফুটবলার, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রী, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাবেক কূটনৈতিক, নারী নেত্রীরাও রয়েছেন। তারা নিজে অথবা প্রতিনিধি পাঠিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। যারা মনোনয়ন তুলেছেন, তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয় দাবি করে দলের হাইকমান্ডের প্রতি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
এদিকে যারা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন, তারা প্রায় সবাই বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সব ডকুমেন্ট নিয়ে নেতাদের কাছে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের প্রাচীনতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। এই দলটি সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পালাবদল হয়। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আসে। জনসমর্থন নিয়ে টানা তিন মেয়াদে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। সংবিধান অনুযায়ী প্রতি ৫ বছর পর পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। পুরো দেশ এখন নির্বাচনী মুডে। আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ গত শনিবার থেকে দলীয় ফরম বিক্রি করছে। আজ শেষ হবে। গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। আজকে শেষদিন, আশা করছি, আরো বিক্রি হবে। অর্থাৎ আমরা যদি দেখি প্রতি আসনে গড়ে ১০ জনের বেশি প্রার্থী আছেন। তিনি বলেন, দলে প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু প্রতি আসনে ১ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এই দায়িত্ব আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের। আমাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সব প্রার্থীর আমলনামা আছে। আমলনামা অনুযায়ী যার ফলাফল ভালো, তিনিই মনোনয়ন পাবেন। তখন সবপ্রার্থী শেখ হাসিনার নির্দেশে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন। যেটা সব সময়ই হয়ে থাকে। এবারো হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়