বিরোধীদের এক করতে তৎপর বিএনপি

আগের সংবাদ

পরিবহন খাতের সর্বনাশ : অবরোধ-হরতালে ৩৭০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সব মিলিয়ে ক্ষতি সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকার : মেজর আখতারুজ্জামান > বিএনপির অনেক নেতাই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ‘একদফা দাবি’ আদায়ে আন্দোলনে রাজপথে রয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির অনেক নেতাই স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে ভোটে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। তিনি বলেছেন, আন্দোলন করে বিএনপি কিছুই করতে পারবে না। আমাকে দালাল বলুক; যাই বলুক তবু বলব, দলটির এই মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত। গতকাল রবিবার ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির নির্বাচনে না আসলে স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে নির্বাচন করবেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই, একশবার নির্বাচন করব। আমার জানামতে, আরো অনেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তবে বিএনপি যদি নির্বাচনে যায়, আমি নির্বাচন করব না। বিএনপিকে সব ধরনের সহায়তা করব। এটা হলো দলের জন্য আমার ত্যাগ। আলোচনায় আছে সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে। আপনিও কী তাই মনে করেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কখনোই না। বিএনপির মতো একটি বিশাল রাজনৈতিক দলকে ভাঙার ক্ষমতা কারো নেই। দল খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের পক্ষেই থাকবে। এর বাইরে কেউ যাবে না। তবে বিএনপিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা সেটাই এই মুহূর্তে বড় প্রশ্ন। কারণ, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে এবার নির্বাচনে না গেলে বিএনপি একসময় বিলীন হয়ে যাবে। রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।
আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির গতিপথ কোনদিকে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামীবিরোধী রাজনীতির সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বিএনপির নিজস্ব কোনো রাজনীতি এখন নেই। বিএনপি তার মূল্য ও গুরুত্ব দুটোই হারিয়ে ফেলেছে। দলটি গত এক বছরে আন্দোলন করে, বড় বড় কথা বলে সরকারকে একচুলও নাড়াতে পারেনি। এর ফলে সরকার ধরেই নিয়েছে বিএনপির কিছুই করার ক্ষমতা নেই। খালেদা জিয়ার যখন সাজা হলো বিএনপি কিছুই করতে পারেনি। সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কে হবেন? ভাবখানা এমন ছিল- খালেদা জিয়া বন্দি হলেও বিএনপি দেখাশোনা করার কেউ থাকবে না। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বুঝে ফেলেছিলেন খালেদা জিয়া দুদিন পরে জেল থেকে বের হয়ে আসবেন। অথচ বছরের পর বছরে তিনি কারাগারে। বিএনপি তাকে মুক্ত করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো রাজনীতি তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা একদফা দাবি আদায়ে বিএনপির ব্যর্থতার জন্য তারেক রহমানের অপরিকল্পিত দল পরিচালনাকে দায়ী করেন মেজর (অব.) আকতারুজ্জামান। তিনি বলেন, এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেই সেটা তারেকবিরোধী হয়ে যায়। ম্যাডামও হয়তো চাচ্ছেন তার অবর্তমানে তারেক রহমান দল পরিচালনা করুক। কিন্তু এটা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। ম্যাডাম জেলখানা থেকেও দল চালাতে পারতেন।
আইনের বাধ্যবাধকতায় কারাগারে থেকে দল চালানোর কতটা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতি কোনো আইন মেনে চলে না। রাজনীতি আইন তৈরি করে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই বিএনপিতে নেতৃত্ব শূন্যতা রয়েছে। সাময়িক পদ নিয়ে তারেক রহমান দলকে ভুল পথে পরিচালনা করছেন। খালেদা জিয়া যদি বুঝে থাকেন সহজে মুক্তি পাচ্ছেন না তাহলে তার উচিত পদত্যাগ করে সম্মেলন দেয়া। সম্মেলন করেই দল তাকে চেয়ারম্যান বানাতে পারত।
বিএনপির বর্তমান আন্দোলন দিয়ে কি এক দফা দাবি আদায় সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর আখতারুজ্জামান বলেন, বিএনপি কোনো অন্দোলন করছে না। গত ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত সরকারের অনুমতি নিয়ে বিএনপি র‌্যালি করত। পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশের নামে মেলা করত। আন্দোলনে মানে তো বাধা, সরকারকে প্রতিহত করব। বক্তব্য দিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়া নয়। আর এখন যেটা করছে সেটাও আন্দোলন নয়। হরতাল দিচ্ছে; কোনো পিকেটিং নেই, একজন নেতা মাঠে নেই।
তিনি বলেন, আজ কেন তারেক রহমানের ডাকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মাঠে নামছে না। সারাদেশে তার সুপার ফাইভ নেতারা কোথায়? কেন মাঠে নেই? তারা যদি আজ মাঠে আসত হাজার হাজার নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মুখে সরকার পিছু হটতো। কারণ, সরকারের যে পরিমাণ পুলিশ রয়েছে তার চেয়ে বিশগুণ বেশি নেতাকর্মী বিএনপির রয়েছে।
এই মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের পরিস্থিতি কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে বলছে- তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়, সুতরাং বিএনপি আমেরিকাকে বলতে পারত আপনারা তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দেন; আমরা নির্বাচনে যাব। কিন্তু বিএনপি সেই সুযোগও হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি ২০১৮ সালে কার কথায় নির্বাচনে গেল? নির্বাচনে যাওয়ার আগে কি তারা কাউন্সিল করেছিল? তখন আমেরিকা বিএনপির পক্ষে ছিল না। অথচ এখন যেখানে আমেরিকা দায়িত্ব নিয়ে বারবার বলছে- তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়, তখন বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না। এখন সরকার ঠিকই একতরফা নির্বাচন করে ফেলবে। কারণ, ভোট আটকানোর সাংগঠনিক ক্ষমতা বিএনপির নেই। এ দলে পঞ্চাশজনের কোনো কমিটি নেই, পাঁচজনের কমিটি দিয়ে আওয়ামী লীগের মতো শক্ত দলের সঙ্গে বিএনপি কীভাবে লড়বে?
আওয়ামী লীগের আমলে আগামী ১০ বছরেও বিএনপি সম্মেলন করতে পারবে না এমন শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র কীভাবে বাঁচবে? এসব চিন্তা না করে, না জেনে, না বুঝে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজের খেয়ালখুশি মতো ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
বিএনপির বর্তমান সংকটের সমাধান সম্পর্কে তিনি বলেন, অবশ্যই এই মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেয়া। এর বিকল্প কিছুই নেই। এবং এই নির্বাচনে যাওয়ার জন্য বিএনপির যে কোনো একজন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে ‘বারগেইনিং’ করতে পারি। মহাসচিবকে মুক্ত করে আনতে পারি।
সেই ‘বারগেডিং’ কে করবে? এমন প্রশ্নে মেজর আখতারুজ্জামানের এক কথায় উত্তর- আমি করতে পারি। এখানে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নির্বাচনে যাব; তারা দাবি মানল কী মানল না সেটা বড় নয়; জনগণের কাছে পৌঁছানোই আমাদের লক্ষ্য। যেহেতু গত দুই টার্ম আমেরিকা বা জাতিসংঘ ছিল না; এবার তারা যেহেতু আছে অবশ্যই ভোটের বাক্স নিরাপদ থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়