তফসিল বাতিলের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের

আগের সংবাদ

জামায়াতের ভবিষ্যৎ কী? নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল খারিজ

পরের সংবাদ

লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় : মিধিলির তাণ্ডবে উপকূলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে উপকূলীয় জেলা বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ঝালকাঠি ও চাঁদপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব জেলায় এক লাখ হেক্টরের অধিক জমির আমন ধান ও সবজি নষ্ট হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
বরিশাল : গত শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার টানা বর্ষণ ও দমকা বাতাসে ধানক্ষেত ও শীতকালীন সবজি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে জেলায় ২০ হাজার ৩০০ হেক্টর আমন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করা না হলেও তাদের ধারণা ৩ থেকে ৪শ হেক্টর জমির আমন ক্ষতি হতে পারে।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলা ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪ হাজার হেক্টরের ফসল কাটা হয়েছে। শুক্রবার ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় মোট ২০ হাজার ৩০০ হেক্টর আমন ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া জেলায় সরিষা আবাদ হয়েছে ২১৬ হেক্টর জমিতে, ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে ১৩০ হেক্টর জমির সরিষা। খেসারি ডাল আবাদ হয়েছে ৩০১০ হেক্টর জমিতে, ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৪০৮ হেক্টর জমির খেসারি। শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৩১০ হেক্টর জমির সবজি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের উপপরিচালক মো. মুরাদ হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে বরিশাল জেলায় ২০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির আমন ফসল আক্রান্ত হয়েছে। দুই-তিন দিন পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জেলায় ৩০০ থেকে ৪০০ হেক্টর জমির আমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে যেহেতু জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১২শ হেক্টর বেশি জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যামাত্রায় এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
এদিকে পটুয়াখালী জেলার আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঝোড়ো হাওয়া আর মুষলধারে বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। পটুয়াখালী কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ৮ উপজেলার প্রায় অনেক জমির রোপণকৃত আমন ও ইরি ফসল বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। আমন ধান হেলে পড়েছে। বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় শীতের আগাম সবজিও ক্ষতির মুখে পড়তে শুরু করেছে।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালীতে এখন মাঠে ১ লাখ ৯১ হাজার ১১৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান আছে। তার মধ্যে মাত্র ৫ ভাগ খেতের ধান পরিপক্ক হয়েছে। ঝোড়ো বাতাসের ফলে আমন ধানের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। যাদের ধান কাটার মতো হয়েছে, তাদের ধান কেটে ফেলতে বলা হয়েছে।
ভোলা : ভোলায় আমন ধান, সরিষা, পান, শীতকালীন সবজিসহ প্রায় ৫০ হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে ভোলা কৃষি বিভাগ ভোরের কাগজকে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছে। জেলা প্রশাসনের সূত্র থেকে জানা যায়, ভোলায় মিধিলির তাণ্ডবে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা কাজ করছে।
নোয়াখালী : ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলসহ ৯টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমির রোপা আমন ও শীতকালীন সবজি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও সুবর্ণচরে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ১১৯ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৩২৪ হেক্টর, সুবর্ণচরে ৩০ হাজার ৯৬৮ হেক্টর ও হাতিয়া উপজেলায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। সুবর্ণচরে ৩ হাজার ৬১৭ হেক্টর, সদরে ৫১০ হেক্টর, হাতিয়ায় ৬২০ হেক্টরসহ পুরো জেলায় ৬ হাজার ৬২ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে জেলার সদর উপজেলায় ৮৬৬ হেক্টর, সুবর্ণচরে ৫ হাজার ৭২৫ হেক্টর ও হাতিয়া উপজেলায় ৯ হাজার ২৮০ হেক্টর জমির আমন ধানসহ পুরো জেলায় ২৪ হাজার ৫০৩ হেক্টর জমির রোপা আমন আক্রান্ত হয়। একইভাবে সুবর্ণচরে ৫৪২ হেক্টর, সদরে ৯০ হেক্টর, হাতিয়ায় ১৫৫ হেক্টরসহ পুরো জেলায় ১ হাজার ২৩৭ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি আক্রান্ত হয়। খেসারি আক্রান্ত হয় ১৩ হাজার ৩৫ হেক্টর।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করেছিলাম অল্প সময়ের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলব। এতে পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফুটবে। কিন্তু শেষ সময়ে এসে ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে যে টার্গেট ছিল তা পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শহিদুল হক ক্ষয়ক্ষতির এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, জেলায় এবার রোপা আমনের ফলন ভালো হওয়ায় এবং কৃষকরা বিপুল পরিমাণ ধান কেটে ঘরে তুলে নেয়ায় আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা হবে না। অনেক কৃষকের শীতকালীন সবজিও বিক্রি করা হয়ে গেছে। তারপরও আমরা কৃষকের পাশে থেকে তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সহযোগিতার চেষ্টা করছি।
ঝালকাঠি : জেলায় আমন ধানের অধিকাংশই দমকা হাওয়ায় শুয়ে পড়েছে। অনেক স্থানের আমন আবাদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে আমন আবাদের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। শীতকালীন সবজি চাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। এ বৃষ্টিতে শীতকালীন শাক-সবজি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের।
কৃষক বাবুল জানান, বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে আমাদের শীতকালীন সবজি চাষের জমিগুলোতে পানি জমে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে প্রতিটি কৃষিক্ষেতের পাশে নালা কেটে দেয়ায় এখন পর্যন্ত ভালো আছে। কৃষক দুলাল মোল্লা জানান, বৃষ্টি আর বাতাসে আমনের ধান মাটিতে পড়ে পানির নিচে তলিয়ে আছে। শীতকালীন সবজি চাষের জমিগুলোতে পানি জমে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ও বাতাসে শুয়ে পড়া আমন ধানের তেমন বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আমান আবাদে যেসব বীজের মাথায় ধান এসেছে সেগুলো শুয়ে পড়েছে। কিন্তু এখনো বেশির ভাগ ধানে থোড় পর্যন্ত হয়েছে, মাথায় ভার না হওয়ায় সেগুলো শুয়ে পড়বে না। জেলায় আনুমানিক পাঁচশ হেক্টর পাকা উপসী আমন, ২শ হেক্টর দুধকলম ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শীতকালীন সবজির বিষয়ে তিনি জানান, যেসব স্থানে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়, সেসব ক্ষেতগুলো সজ্জন বা কাঁদি পদ্ধতিতে। এজন্য পানি জমতে না পারায় কৃষিক্ষেতে ক্ষতির আশঙ্কাও খুবই কম। শাকসবজি জেলায় ১৫৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে আনুমানিক ক্ষতি ১১০ হেক্টর ক্ষতি হতে পারে। জেলায় ৩৩০০ হেক্টর খেসারির মধ্যে আনুমানিক ৭০০ হেক্টর ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পাঁচশত হেক্টর কলাবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চাঁদপুর : জেলায় ১৯০ হেক্টর আধাপাকা ও পাকা আমন ধান এবং অন্যান্য ৪২০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় থেকে জানানো হয়। সরজমিন দেখা গেছে- জেলা সদরের বাগাদী ইউনিয়নের ছোবহানপুর, বাগাদী গ্রাম, নানুপুর, বালিয়া ইউনিয়নের সাপদি, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদি রামপুর ও আশপাশের এলাকায় গিয়ে আমন ধানের অধিকাংশ জমি পানিতে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান জানান, সকদিরামপুর মাঠে তার দেড় একর জমিতে বিআর-৪৯, বিনা-৭ ও ১৭ ধানের আবাদ করেছেন। আগে কেটে রাখা ধান শ্রমিক নিয়ে তুলেছেন। পানিতে ভিজে যাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে গেছে।
ওই এলাকার আরেক কৃষক আব্দুল খালেক বেপারী জানান, প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এক একর জমিতে বিআর-২২ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এই ধানগুলো উচ্চতায় অনেক বড়। যার ফলে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের তীব্রতায় সব ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে জেলায় আধাপাকা ও পাকা রোপা আমান ১৯০ হেক্টর, সরিষা ১৪০ হেক্টর, আগাম শীতকালীন সবজি ২৭০ হেক্টর ও বীজতলা (ধান) ১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। জরিপ কার্যক্রম শেষ হলে পুরো আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ১৪টি ইউনিয়নে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল হিমেল হাওয়া। বৃষ্টির কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। ক্ষতি হয়েছে রবি সবজির। বাতাসে নষ্ট হয়েছে মাঠের পাকা আমন ধানের। বাতাসে ধান গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ধান গাছ তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আধাপাকা ধানের। এছাড়া শিম, পেঁপে, মরিচ, ঢেরস, চিচিংগা, করলা, ঝিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল শনিবার সরজমিন পরিদর্শনে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, আমরা এ ধানের আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। কিন্তু এ হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে আমাদের কষ্টের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এবার লক্ষ্যমাত্র অনুযায়ী ধান পাব না। যেখানে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান হতো সেখানে ৫ মণ ধানেরও সম্ভাবনা নেই। এছাড়া শিম, পেঁপে, মরিচ, ঢেরস, চিচিংগা, করলা, ঝিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সিরাজদিখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, বৃষ্টির কারণে রবি সবজির বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ধানচাষিদের। অতি বর্ষণের কারণে এ বছর সিরাজদিখানে কৃষকের উৎপাদিত উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিম, পেঁপে, মরিচ, ঢেরস, চিচিংগা, করলা, ঝিঙ্গা, পেঁপেসহ অনেক গাছে পানি জমে গাছ মারা যায়। যাদের এ ধরনের সবজি নষ্ট হয়েছে তাদের স্বল্পমেয়াদি সবজি চাষে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
কালিয়া (নড়াইল) : নড়াইলের কালিয়ায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির মসুরি ও খেসারি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. কামাল হোসেন তালুকদার বলেছেন, তিনি চলতি মৌসুমে ১ একর জমিতে মসুরি ও ২ একর জমিতে খেসারির চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তার মসুরি ও খেসারির জমিতে চারা গজিয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ২ দিনের বৃষ্টিতে ওইসব জমি জলমগ্ন ও কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। সে কারণে চারা গাছে পচন ধরলে সম্পূর্ণই বিনষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার ও আবুল হাসান বলেছেন, কালিয়ায় রবি মৌসুমে তেল ও ডাল ফসলের চাষ বেশি হয়ে থাকে। দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে মসুরি ও খেসারির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই দুটি ফসলের ফলন বিনষ্টের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে উপজেলায় প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৪ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এখানকার কৃষকরা।
জানা গেছে, উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, ইছাখালী, দুর্গাপুর, মায়ানী, ওয়াহেদপুর, জোরারগঞ্জ, সাহেরখালী, ইছাখালীসহ প্রায় ইউনিয়নে কৃষকদের আমন ধান জমিতে নুইয়ে পড়েছে। জমির উপর উপড়ে পড়েছে গাছপালা। অতি বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ফসলি জমিতে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট বাতাস ও বৃষ্টিতে ১৫০০ হেক্টর জমির আমন ধান নুয়ে পড়েছে। দু-একদিনের মধ্যে কাটার উপযুক্ত ধান বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমরা সরজমিন গিয়ে কৃষকদের জমির আইল কেটে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি, যাতে জমে থাকা পানি চলে যেতে পারে। এছাড়া যে ধানগুলো এখনো কাটার উপযোগী হয়নি সেগুলোর কয়েকটা ঘোচা একসঙ্গে বেঁধে দেয়ার জন্য চাষিদের বলা হয়। শীতকালীন সবজির মধ্যে- লাল শাক, মুলা শাক, পালং শাকের ক্ষতি হয়েছে। দুএকদিনের মধ্যে লাগানো বীজ পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলায় আপাতত ৪৪ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি ক্ষতির পরিসংখ্যান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়