তফসিল বাতিলের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের

আগের সংবাদ

জামায়াতের ভবিষ্যৎ কী? নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল খারিজ

পরের সংবাদ

রওশন-কাদের ফের মুখোমুখি : প্রতীক ও মনোনয়নের কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন দ্ব›দ্ব

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় প্রতীক ও প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া নিয়ে ফের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। নিজ নিজ ক্ষমতা জানান দিতে গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আলাদাভাবে চিঠি দিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে থাকা দেবর-ভাবি। এতে আবারো আলোচনার খোরাক হলো ‘আনপ্রেডিক্টেবল’খ্যাত দলটি।
নির্বাচন পরিচালনা শাখা থেকে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৪৪টি নিবন্ধিত দলকেই প্রার্থী মনোনয়নকারীর নাম জানাতে চিঠি পাঠায় ইসি। গতকাল শনিবার জাতীয় পার্টির শীর্ষ এই দুই নেতার পক্ষে আলাদাভাবে ইসিতে চিঠির জবাব পাঠানো হয়। তাতেই দুই নেতার ভিন্ন অবস্থান স্পষ্ট হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে লেখা চিঠিতে রওশন এরশাদ জানান- জাতীয় পার্টি বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবারো চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা হবে শুধু নির্বাচনী জোট। নির্বাচন শেষে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল, কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।
অন্যদিকে, জি এম কাদেরের পক্ষে সিইসিকে পাঠানো চিঠিতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানান- আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে আরপিও এর আর্টিকেল ১২ (৩ এ) (বি) এবং ১৬-এর (২)(৩) অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। একই সঙ্গে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম পদবি ও নমুনা স্বাক্ষরও নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। ইসিতে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ভোরের কাগজকে বলেন, ভোটকে সামনে রেখে এ-সংক্রান্ত ফর্মালিটিজ জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ইসিতে চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মুখপাত্র (রওশনপন্থী) কাজী মামুনুর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের বিষয়ে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের চিঠি আমি ইসিতে পৌঁছে দিয়েছি। কেউ চাইলে জোটের প্রতীকও ব্যবহার করতে পারবেন। দলের মনোনয়ন কে দেবেন না দেবেন সেটা বিষয় নয়।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৪৪টি নিবন্ধিত দলকেই প্রার্থী মনোনয়নকারীর নাম জানাতে চিঠি পাঠায় ইসি। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র থাকবে যে, ওই প্রার্থীকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। প্রত্যয়নপত্রটি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীকে জমা দিতে হবে। প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাম, পদবি, সত্যায়িত নমুনা স্বাক্ষর তফসিল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। আর এর অনুলিপি দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। চিঠিতে আরো বলা হয়, যদি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে প্রার্থী মনোনয়নকারী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন বা তার আগে রিটার্নিং অফিসারকে কোনো প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং ওই দলের অন্যান্য প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত হবে।
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দলের মধ্যে দ্বিধাদ্ব›দ্ব-মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় পার্টি (জাপা) নির্বাচনে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। জাপা নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা না দিলেও মাঠে নেমে পড়েছে। তিনশ আসনেই সিগন্যাল গেছে। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য তাদের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন। দু-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে দলের পক্ষ থেকে। যদিও গত বুধবার দলের যৌথ সভায় তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এককভাবে চেয়ারম্যানের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় জাপা চেয়ারম্যানের দিকেই সবাই তাকিয়ে আছে। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
অন্যদিকে, রওশন এরশাদ তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বার্তা স্পষ্ট করেছেন। তফসিল ঘোষণার পর গত বুধবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রওশন বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সুসম্পন্ন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমি আশা করি, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। যদিও এর আগে বহুবার তিনি বর্তমান সরকারের অধীনে যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ বিষয়ে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্ বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে ২০১৪ সালে আরো খারাপ পরিস্থিতি ছিল। তখনো রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। গত দুবছর যাবত বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলে আসছেন। ইনশাআল্লাহ জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেবে।
এ বিষয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা চাই সংলাপ হোক। সংলাপের মধ্য দিয়ে সবাই মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করলে ভালো হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংলাপের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বিএনপিও সংলাপের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি, সরকারি দলও সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেছে। এরকম অবস্থায় জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কিনা এ প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আমরা জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা, প্রয়োজনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মিটিং ডেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া কিংবা না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়