তফসিল বাতিলের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের

আগের সংবাদ

জামায়াতের ভবিষ্যৎ কী? নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল খারিজ

পরের সংবাদ

বিশেষ পরিকল্পনা : নির্বাচনের আগে অস্ত্রবাজ ধরার অভিযান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নির্বাচন এলেই অবৈধ অস্ত্রের কদর বাড়ে। উঠতি মাস্তান ও পেশাদার সন্ত্রাসীরা প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামে। সীমান্ত পথে অস্ত্র এনে তা ছড়িয়ে দেয়া হয় সারাদেশে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় অস্ত্রবাজদের দাপট রয়েছে। পাড়া মহল্লায় তারা ঘুরে বেড়ায়, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। শহর থেকে গ্রামে তারা খবরদারি করার চেষ্টা করে। ভোটকেন্দ্র ঘিরে তারা দাপট দেখাতে চায়। তাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়। এ নিয়ে বাড়তি চাপে থাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুলিশ ও র‌্যাব অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। অস্ত্রবাজদের ধরতে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানের গতি আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (অইজিপি) ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল শনিবার বিকালে ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনের দিন এগিয়ে এলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা দখলদ্বারত্বের প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। এসব কাজে অবৈধ অস্ত্র যেমন ব্যবহার করা হয় তেমনিভাবে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, নির্বাচনে পেশিশক্তির ব্যবহার আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। নির্বাচনী মাঠ দখল করে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে বিজয়ী করতে এই পেশিশক্তি প্রদর্শনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় অবৈধ অস্ত্র। পেশিশক্তির মাধ্যমে যে কোনোভাবে বিজয়ী হয়ে আসতে পারলে তার দলও তাকে স্বাগত জানায়, যা অগণতান্ত্রিক এবং এ ধরনের কাজকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী ও বিরোধী দলগুলোর প্রতি পুলিশের দ্বিমুখী আচরণ অন্যতম কারণ।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এরই মধ্যে সারাদেশে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। যারা চিহ্নিত অপরাধী তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে। এ কার্যক্রম চলবে।
বিজিবি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অন্তত ১৭টি পথ দিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্র আনার তথ্য রয়েছে। পথগুলো হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের রহনপুর, একই এলাকার সোনা মসজিদ, আজমতপুর, বিলভাতিয়া, ঝিনাংইদহের মহেশপুরের জুলুলী, সাতক্ষীরার কলারোয়ার তলুইগাছা, যশোরের বেনাপোল, চৌগাছা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, সাতক্ষীরার শাঁকারা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এবং কুষ্টিয়ার সীমান্ত এলাকা। এসব পথে নজরদারি থাকলেও নানা কৌশলে ঢুকে অস্ত্রের চালান। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের অংশে তিন হাজার কিলোমিটারের মতো কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হলেও বাংলাদেশ অংশে তা নেই। বাকি সীমান্ত অরক্ষিত। সীমান্তে ও সীমান্ত এলাকায় মাঝেমধ্যে কিছু অস্ত্রের চালান ধরা পড়লেও বেশির ভাগ চালান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢুকে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বিজিবি সারাদেশের সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৯৭টি গুলি উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ৩৪টি পিস্তল ও ১টি রিভলবার। রাইফেল, বন্দুকসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে আরো ৪৮টি। ৯ নভেম্বর সীমান্ত পেরিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ হয়ে দেশে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢোকার সময় দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়। বিজিবি বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা কমিশনের বিনিময়ে সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র এনে এপারের অস্ত্র কারবারিদের হাতে তুলে দেন। অস্ত্র কারবারিদের হাত ঘুরে সেসব অস্ত্র যায় অসাধু রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ডাকাত, ভূমিদস্যুসহ নানা পদের অপরাধীদের হাতে। ২০২২ সালে পুলিশ সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ১৫২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর আগের বছর ২০২১ সালে ২ হাজার ৩১০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ভোটের আগে উত্তরবঙ্গের রহনপুর সোনা মসজিদ, চুয়াডাঙ্গা, মহেশপুর, কুষ্টিয়া সীমান্ত স্পর্শকাতর বিবেচনায় নিয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৯ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ আজমতপুর সীমান্ত দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুই ব্যক্তিকে মোটরসাইকেলে কানসাটের দিকে যেতে দেখে বিজিবি থামার সংকেত দিলে তারা পালানোর চেষ্টা করেন। বিজিবির সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে জামরুল ইসলাম (৩৫) ও মাজির উদ্দীনকে (৪৩) গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। গত ৩১ মে রাতে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়ার তলুইগাছা সীমান্ত থেকে গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করে বিজিবি। গত ৭ অক্টোবর রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী থানার কাপাশিয়া পাহাড়পুরে অস্ত্রের চালানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। তারা হলো- কাপাশিয়া এলাকার মো. আতিকুর রহমান (৩৫), রাজশাহী নগরের চরকাজলা এলাকার মো. শাহীন আলী (২৫) ও নগরের কাজলার ধরমপুর এলাকার মো. শহিদুল (২৬)। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরবঙ্গে জব্দ করা সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্রের চালান এটি। আটক ব্যক্তিরা চিহ্নিত অস্ত্র ব্যবসায়ী। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মো. তানজিম (২৭) ও মো. আবদুর রহিম (২৮) নামের দুই ব্যক্তির মাধ্যমে অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করে দেশে অস্ত্র সরবরাহ করতেন তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়