তফসিল বাতিলের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের

আগের সংবাদ

জামায়াতের ভবিষ্যৎ কী? নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল খারিজ

পরের সংবাদ

জোট নাকি মহাজোট? একক ও জোটগত ভোটের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের > জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : নির্বাচনী হুইসেলের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে জোটের হিসাব-নিকাশ। সময় গেলে আরো স্পষ্ট হবে হিসাব-নিকাশের দৃশ্যপট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকায় ভিড়তে তদ্বির করছে ১৪ দলীয় জোটের বাইরেও অনেক ছোট ছোট রাজনৈতিক দল। দলটির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে এলে জোটের এক হিসাব; আর বিএনপি না এলে অন্য হিসাব। ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তে বিএনপি অনড় থাকলে এবার মহাজোট নয়- গতবারের মতোই ১৪ দলীয় জোট থাকবে। জাতীয় পার্টি এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচনে করবে। আর ছোট ছোট কিছু রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো কিছু আসনে প্রার্থী দেবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী তো থাকবেই। এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পাবেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও। বেশ কিছু আসনে লড়াই করার সুযোগ পাবেন দলছুটরা। আর বিএনপি শেষ মুহূর্তে ভোটে আসার সিদ্ধান্ত নেয়- তাহলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট করার প্রস্তুতিও রাখা হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে যেতে গতকাল ইসিতে (নির্বাচন কমিশন) আবেদন জমা পড়েছে সাতটি দলের। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই লড়তে চান জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ। আর একক ও জোটবদ্ধ- দুইভাবেই অংশ নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে। দলটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। আর সভাপতির সইয়ে নমিনেশন দেবে তারা। এর মধ্যে ইসিতে সাতটি দলের জোটবদ্ধ হওয়ার আবেদন এসেছে। এগুলো হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ)। এদিকে একক ও জোটবদ্ধ- আওয়ামী লীগ দুইভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছি। এতে জানিয়েছি, আওয়ামী লীগ একক ও জোটবদ্ধ দুইভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। কোন আসনে জোটবদ্ধ, আর কোন আসনে এককভাবে দলীয় প্রার্থী দেয়া হবে- সেটা মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর জানানো হবে।
জাপার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনই নয় : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় চড়তে চায় জাপাও। জাতীয় পার্টির আগ্রহী প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল ছাড়াও চাইলে মহাজোটের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন- গতকাল নির্বাচন কমিশনে এক চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছেন জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। জানতে চাইলে দলের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের চিঠি আমি ইসিতে পৌঁছে দিয়েছি। কেউ চাইলে জোটের প্রতীকও ব্যবহার করতে পারবেন। দলের মনোনয়ন কে দেবেন না দেবেন সেটা বিষয় নয়। যদিও জাপার প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের, তার নাম পদবি ও নমুনা সই নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো আসেনি।
আসন নিয়ে দেন দরবারে ১৪ দল : নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসাবে আসন ভাগাভাগির দেন দরবারে নিজেদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। ৩০টি আসনের প্রার্থিতা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। গতকাল দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন- পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ ১৫ জন। জোটগতভাবে নির্বাচনের ব্যাপারে রাশেদ খান মেনন বলেন, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে দেশের গণতন্ত্র সংবিধান রক্ষার বর্তমান চ্যালেঞ্জ হিসাবে সাম্রাজ্যবাদী, মৌলবাদী সা¤প্রদায়িক শক্তিসহ বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের সব দল তাদের লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে যে প্রতিবেশ পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাতে ১৪ দলের ঐক্য ও ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ আরো জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে গত তিনটি নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে হাসানুল হক ইনুর জাসদ। গতকাল সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ ২১৩ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে আসন কিছু বাড়ানোর দাবি করতে পারে জাসদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী ছিল ১২ জন; এর মধ্যে ৯ জন মশাল প্রতীকে ও বাকি তিনজন জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে ভোট করেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল ইনু নিজেও কুষ্টিয়া-২ আসন জোটগতভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট করে জিতে এসেছেন। জাসদ দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতোই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাসদ ১৪ দলীয় নির্বাচনী জোটের শরিক দল হিসেবে জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে।

নির্বাচন সামনে রেখে আলাদাভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে আরেক শরিক বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলও। দলটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমরা ১০টি আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করব। এরপর ১৪ দলীয় জোটে আলোচনা করে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি নিশ্চিত করবেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া জাতীয় পার্টি-জেপি, তরিকত ফেডারেশন চার-পাঁচটি করে আসন চাইবে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করব। জোট শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি আওয়ামী লীগ সভাপতি, জোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত করবেন। শেখ হাসিনা শিগগিরই জোট নেতাদের সঙ্গে বসে এটি ঠিক করবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়