তফসিল বাতিলের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের

আগের সংবাদ

জামায়াতের ভবিষ্যৎ কী? নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল খারিজ

পরের সংবাদ

ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি ১২ হাজার ছাড়াল : গাজায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় বাংলাদেশসহ ৫ দেশ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো যুদ্ধাপরাধ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) নালিশ করেছে বাংলাদেশসহ ৫টি দেশ। অন্য দেশগুলো হলো- দক্ষিণ আফ্রিকা, বলিভিয়া, কমোরোস এবং জিবুতি। আইসিসির প্রতি দেশগুলো অনুরোধ জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের অভিযোগ আমলে নিয়ে সেগুলো যেন তদন্ত করা হয়। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। অবরুদ্ধ আল-শিফা হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা সব রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে স্বীকৃতিও দেয়নি এখন পর্যন্ত। তবে ফিলিস্তিন আইসিসির সদস্য। আইসিসির জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর করিম আহমেদ খান জানিয়েছেন, ৫ দেশের প্রতিনিধিদের যৌথ আবেদন গ্রহণ করেছে আইসিসি।
সাধারণ ফিলিস্তিনিদের পক্ষ হয়ে ৫ দেশের আন্তর্জাতিক আদালতের দারস্থ হওয়ার বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা আইসিসিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে করা অভিযোগকে স্বাগত জানাই। ফিলিস্তিনিরা সবচেয়ে ভয়াবহ বছর পার করার পর এবং রোমান সংবিধিতে থাকা অপরাধ

সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর এ ধরনের অভিযোগ করা হলো।
আইসিসির জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর করিম আহমেদ খান শুক্রবার জানান, ২০০২ সালে যে রোমান সংবিধির ওপর ভিত্তি করে আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই সংবিধি অনুযায়ী কোনো সদস্যরাষ্ট্র যদি বাইরের কোনো রাষ্ট্রের হামলার শিকার হয় এবং ওই হামলাকারী রাষ্ট্র যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সনদে স্বাক্ষরকারী কিংবা স্বীকৃতি দানকারী দেশ না-ও হয়- তাহলেও ওই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবে আইসিসি।
দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, ফিলিস্তিনের বর্তমান গুরুতর পরিস্থিতিতে আইসিসি যেন জরুরি ভিত্তিতে মনোযোগ দেয়, তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
২০১৪ সালের ১৩ জুন ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে আগে থেকেই একটি তদন্ত চালিয়ে আসছে আইসিসি। ফলে শুক্রবার ৫ দেশের পক্ষ থেকে নতুন করে যে তদন্তের অনুরোধ আইসিসির প্রসিকিউশন অফিস পেয়েছে, তার প্রভাব হবে সীমিত।
প্রসিকিউটর করিম খান গত মাসে জানিয়েছিলেন, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামাস যে হামলা চালিয়েছে, এবং তার জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে, তা তদন্তের বিচারিক এখতিয়ার আইসিসির প্রসিকিউশন অফিসের রয়েছে।
আইসিসির প্রসিকিউটরের দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে এবং ফিলিস্তিনিদের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের ‘উল্লেখযোগ্য তথ্য ও প্রমাণ’ তারা এরই মধ্যে সংগ্রহ করেছে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েল থেকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করা হয়েছে। সেদিন থেকেই গাজায় ভয়াবহ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে যোগ দিয়েছে স্থল বাহিনী।
গাজায় নিহত ১২ হাজার ছাড়াল : গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার সরকারি মিডিয়া অফিসের মহাপরিচালক ইসমাইল থাওয়াবতা। তিনি বলেন, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পতনের কারণে কয়েকদিন ধরে নিহতের সংখ্যা আপডেট করা হয়নি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১ হাজার ৮০০ শিশুসহ ৩ হাজার ৭৫০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। চিকিৎসক, নার্স ও প্যারামেডিক মিলিয়ে অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে সিভিল ডিফেন্স দলের ২২ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। ৫১ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি, যাদের ৭৫ শতাংশই নারী ও শিশু।
আল-শিফার আইসিইউতে থাকা সবাই মারা গেছে : ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার পর গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সব রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালটির পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া শুক্রবার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, রোগী, চিকিৎসাকর্মী এবং আশ্রয় নেয়া মিলিয়ে ৭ হাজার মানুষ হাসপাতালে আটকা পড়েছে। চিকিৎসকরা এখনো রোগীর সেবায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসরায়েলি বাহিনী কাউকে ঢুকতে বা বের হতে না দেয়ায় হাসপাতালটি বড় কারাগার ও গণকবর হয়ে উঠেছে।
পরিস্থিতি খুবই বেদনাদায়ক উল্লেখ করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আল-শিফা হাসপাতালকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ঘাঁটি বানিয়েছে। হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ মোখল্লালতি জানান, বাধ্য হয়ে তারা হাসপাতাল চত্বরেই মরদেহ দাফন করছেন।
ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা : ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। শনিবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে হিজবুল্লাহ। একই সঙ্গে লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
উভয়পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে। হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এই উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ বলেছে, শনিবার ভোরের দিকে সীমান্তের কাছে গুলি চালিয়ে ইসরায়েলি একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা।
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে অব্যাহত হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলও দক্ষিণ লেবাননে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ ও কামানের গোলা ছুড়ছে।
লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি হিজবুল্লাহ যোদ্ধা এবং ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আর হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অন্তত ৭ সদস্যসহ ১০ বেসামরিক নিহত হয়েছেন। উভয় সীমান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়