সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই বিএনপির : রেলপথমন্ত্রী

আগের সংবাদ

জোট নাকি মহাজোট? একক ও জোটগত ভোটের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের > জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়

পরের সংবাদ

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাব : দিনভর বৃষ্টিতে ভোগান্তি, নগরে শীতের হাতছানি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিএনপির ৪ দফায় অবরোধ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ও নানা কর্মসূচিতে নভেম্বর মাস যেন ভোগান্তির মাস হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীবাসীর কাছে। সড়কে তেমন যাত্রীবাহী বাস থাকে না, রিকশা চলাচলও তুলনামূলক কম, পাঠাও-উবার চালকদের দেখা মেলে কদাচিৎ। এর মধ্যে দুদিনের (রবি ও সোম) হরতালের ডাক দিয়ে রেখেছে বিএনপি। হরতাল শুরুর আগে যে যার মতো করে নিজের কাজ গুছিয়ে নেবেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবারসহ ঘুরতে বের হবেন বা কেনাকাটা করবেন, সেটিও হলো না ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে। টানা বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় গতকাল শুক্রবার জনজীবনে নেমে আসে চরম ভোগান্তি।
কেউ কেউ জরুরি কাজে বাধ্য হয়ে বের হলেও বেশির ভাগেরই কেটেছে ঘরবন্দি অবস্থায়। এমনকি জুম্মার নামাজে স্বাভাবিক সময়ে মসজিদে উপড়ে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বৃষ্টির কারণে গতকাল এটি কিছুটা কম দেখা গেছে। তবে সন্ধ্যায় বৃষ্টি থেমে গেলে সড়কে মানুষের চলাচল বাড়তে দেখা গেছে। এদিকে দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, পঞ্চগড়সহ প্রান্তিক পর্যায়ে ইতোমধ্যে শীত জেকে বসতে শুরু করলেও রাজধানীতে ছিল না শীতের কোনো আমেজ। মিধিলির প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা বাতাসে রাজধানীতেও

শীতের অনুভূতি শুরু হয়ে গেছে। গতকাল অনেকে শীতের কাপড় পড়ে বাইরে বের হয়েছেন। আবার অনেককে ঠাণ্ডা বাতাসে জবুথবু হয়ে হাটতে দেখা গেছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভৌগোলিক কারণে আমাদের দেশে শীত আসার আগে এরকম দুই একটা নি¤œচাপ হয়। বৃষ্টির পর মেঘ কেটে যায়, আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। আর শীতের পূর্বশর্তই হল আকাশ পরিষ্কার থাকতে হবে। তাই, বৃষ্টির পর হালকা শীত শীত অনুভূতি হতে শুরু করেছে। এছাড়া নভেম্বর মাসের বৃষ্টিকে শীতের আগমন বলে গত কয়েক বছর ধরে মতামত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। সে হিসেবে এই বৃষ্টির মাধ্যমে রাজধানীতে শীতের আগমন ঘটল বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরতাল অবরোধের কারণে কিছু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের রুটিন বদলে ছুটির দিনও পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল খোলা রয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষা। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নিয়ন্ত্রিত আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা শুরু হয় বেলা ১১টায়। এসব পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার লোকজন রাজধানীতে প্রবেশ করে। টানা বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও পরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েন সবাই। আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চট্টগ্রাম থেকে স্ত্রীকে নিয়ে গতকাল সকালে ঢাকায় আসেন রাকিবুল হাসান। তার সঙ্গে কথা হয় কুর্মিটোলা বিএফ শাহীন কলেজর গেটের সামনে। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর পরীক্ষা। সারারাত জার্নি করে ঢাকায় এসেছি। ট্রেন থেকে নেমেই দেখি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কাকভেজা হয়ে সিএনজি ঠিক করি নির্ধারিত ভাড়া চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে। স্বাভাবিক সময়ে বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলায় আসতে সিএনজি ভাড়া সর্বোচ্চ ১৫০ খরচ হলেও তার ভাড়া লেগেছে ২৫০ টাকা। ফার্মগেট হয়ে জাহাঙ্গীর গেটের দিকে আসা আরেক যাত্রী তানভীর হাসান বলেন, বৃষ্টির জন্য বাস পেতে সমস্যা হয়েছে।
ইডেন মহিলা কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া রাখি ইবনে আফসানা বলেন, সকাল থেকেই বৃষ্টি। বাসা থেকে বের হওয়াটাই ঝামেলা। তারপরও বের হয়েছি। পরীক্ষা তো দিতে হবে। পরীক্ষা শেষে বের হয়েও দেখি বৃষ্টি। ভিজেই বাসায় যেতে হবে। তবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই বের হয়ে বৃষ্টিতে আটকা পড়েছেন। চা দোকানদার রিফাত হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলেও চায়ের দোকান খোলা রাখতে হয়। অনেকেই চা খেতে আসে। বড় ছাতা টানায়ে নিছি। বৃষ্টিতে দোকান চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। তবে কাস্টমার কম। বৃষ্টির মধ্যে লোকজন তো ঘর থেকেই বাহির হয় না।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে রাজধানীতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয় টানা বৃষ্টি। গতকাল ছুটির দিন হওয়ায় এবং বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে রাস্তায় মানুষের ভিড় তেমন একটা ছিল না। কেউ কেউ জরুরি কাজে বাধ্য হলেও টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি বেড়েছে রিকশাচালক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের। বৃষ্টিতে সব চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর রিকশাচালকরা। রোজগারের আশায় বৃষ্টিতে ভিজেই রিকশা চালান তারা। রিকশাচালক রসুল মিয়া বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, একদিন রিকশা না চালাইলে খাওন জুটবো না। বৃষ্টিতে ঘরে বইসা থাকলে আমাগো চলব না। বয়স হইছে বৃষ্টি আবার শীত শীত লাগতেছে। রিকশা চালাইতে কষ্ট হয়। কি আর করা কাজ তো করাই লাগব।’
অপরদিকে সকাল থেকে রাজধানীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকলেও দুপুর থেকে বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে থাকে। এতে মালিবাগ, মৌচাক, ফার্মগেট, মিরপুর, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মৌচাকের চা দোকানি মুন্না মোল্লা বলেন, দুপুরের বৃষ্টিতে মৌচাকে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে আমরা দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। সন্ধ্যার দিকে পানি কিছুটা কমলে আবার দোকান চালু করি। রমনা বিভাগের বাংলামোটরে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা (টিআই) নিউটন বলেন, ছুটির দিনে সাধারণত সড়কে গাড়ির চাপ কমই থাকে। বিশেষ কোনো কারণে বা কোনো প্রোগ্রাম থাকলে এসব দিনে রাস্তায় গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়ে। আজো ছুটির দিনে কিছু জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। পরীক্ষা চলছে, ফলে সেসব এলাকায় গাড়ির কিছুটা চাপ রয়েছে। এছাড়া সড়ক স্বাভাবিক রয়েছে।
ঢাকায় শীতের আমেজের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, নি¤œচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। নি¤œচাপের কারণে হওয়া এই বৃষ্টি শীত নামিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কারণ ভৌগোলিক কারণে আমাদের দেশে শীত আসার আগে এরকম দুই একটা নি¤œচাপ হয়। তিনি বলেন, বৃষ্টির পর মেঘ কেটে যায়, আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। আর শীতের পূর্বশর্তই হল আকাশ পরিষ্কার থাকতে হবে। তাই বৃষ্টির পর শীত শীত অনুভূতি হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়