সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই বিএনপির : রেলপথমন্ত্রী

আগের সংবাদ

জোট নাকি মহাজোট? একক ও জোটগত ভোটের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের > জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়

পরের সংবাদ

ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে প্রস্তুত হামাস : ইসমাইল হানিয়ার দাবি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এমনকি তাদের ক্ষমতা শত্রæর চেয়েও বেশি বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এদিকে ইসরায়েলি সেনারা গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফায় হামাস যোদ্ধাদের ব্যবহার করা টানেলের একটি ‘খাদ’ খুঁজে পেয়েছে বলে দাবি করেছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিসের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
বৃহস্পতিবার একটি রেকর্ডকৃত ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন ইসমাইল হানিয়া। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার প্রতিরোধ বাহিনীগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ সময় ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচল মনোভাব এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সক্ষমতা দুর্বল করতে সেনাদের প্রশংসাও করেন তিনি।
ইসমাইল হানিয়া বলেন, প্রতিরোধের বীর নায়করা গাজায় গৌরবের ইতিহাস লিখছেন। নিজেদের বীরত্ব, সাহস এবং সাহসিকতা প্রমাণ করে তারা শত্রæর সেনাবাহিনী এবং তাদের যানবাহনকে ঘায়েল করে দিচ্ছে। গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, শত্রæপক্ষ দীর্ঘ যুদ্ধ চাইলে, আমাদের লড়াইয়ের ক্ষমতা শত্রæর চেয়েও বেশি এবং এ লড়াইয়ে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাই চূড়ান্তভাবে জয়ী হবে। এ সময় ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ দলগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কৌশলগত সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে এবং এতে শুধু যে তারাই বিজয়ী হবে এমন ইঙ্গিতও দেন তিনি।
২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করার কথা উল্লেখ করে ইসমাইল হানিয়া বলেন, আল-কাসেম ব্রিগেড এবং প্রতিরোধ দলগুলোকে গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে পরাজিত করতে দেখবে বিশ্ব, যেমনটি তারা ১৮ বছর আগে দেখেছিল। তিনি আরো বলেন,

ইসরায়েল শুধু ব্যর্থতা, হতাশা এবং পরাজয় ছাড়া আর কিছুই পাবে না।
হানিয়াকে ব্যাপকভাবে হামাসের সামগ্রিক নেতা বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৭ সালে তিনি হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন। তবে কয়েক বছর ধরে তিনি কাতারে বসবাস করছেন।
এর আগে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন নিয়ে অক্টোবরের শেষের দিকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইসমাইল হানিয়া। গাজায় চলমান যুদ্ধ পুরো অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছিলেন তিনি।
খান ইউনিসের কয়েকটি এলাকা খালি করার নির্দেশ : গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিসের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ের উদ্দেশে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী, তখন ওই এলাকার বাসিন্দারা খান ইউনিসে পালিয়ে আসে। বর্তমানে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি খান ইউনিসের স্কুল ও হাসপাতালের প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শিবির গেড়ে বসবাস করছে। এখন লিফলেট ফেলে লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় শিবিরের দিকে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
আল-শিফায় হামাসের টানেল পাওয়ার দাবি : ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের সেনারা গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফায় হামাস যোদ্ধাদের ব্যবহার করা টানেলের একটি ‘খাদ’ খুঁজে পেয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, তাতে আল-শিফার আউটডোর এলাকায় একটি টানেলের প্রবেশপথ দেখানো হয়েছে। সেখানে একটি গভীর গর্ত। সেটি কংক্রিট, কাঠের ধ্বংসস্তূপ ও বালি দিয়ে ঘেরা।
রয়টার্স বলছে, দেখে মনে হয়েছে, এলাকাটি খোঁড়া হয়েছে, পেছনে একটি বুলডোজারও দেখা গেছে। তারা তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিওটি যাচাই করতে পারেনি। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের সেনারা হাসপাতালটিতে একটি গাড়ি পেয়েছে, তাতে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ছিল।
এদিকে হামাস বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা আল-শিফা হাসপাতালকে সামরিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে- পেন্টাগন ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন দাবি নির্জলা মিথ্যা বর্ণনার পুনরাবৃত্তি, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের দুর্বল ও হাস্যকর অভিনয়ের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে পুরো মেডিকেল কমপ্লেক্সটির দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথে একটি অংশ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে সেনারা।
এবার পশ্চিম তীরের হাসপাতালে অভিযান : গাজার আল-শিফা হাসপাতালে অভিযানের রেশ না মিলতেই অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইবনে সিনা হাসপাতালে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ইবনে সিনা। এটি একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে বিবেচিত।
ফিলিস্তিনের স্থানীয় গণমাধ্যম ওয়াফা জানিয়েছে, পশ্চিম তীরের এই হাসপাতালটিকে ইসরায়েলি বাহিনী চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। এ সময় অন্তত ২ চিকিৎসাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাসপাতালের সব অ্যাম্বুলেন্সে তল্লাশি চালায় সেনারা। লাউডস্পিকারে হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়। দুই হাত উপরে তুলে প্যারামেডিকদের হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসতে বলা হয়। বের হয়ে আসার পর তাদের হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তল্লাশি করা হয়। এদিকে জেনিনে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েল থেকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করা হয়েছে। সেদিন থেকেই গাজায় ভয়াবহ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে যোগ দিয়েছে স্থল বাহিনী। ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শিশু ও ৩ হাজারের বেশি নারী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়