সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই বিএনপির : রেলপথমন্ত্রী

আগের সংবাদ

জোট নাকি মহাজোট? একক ও জোটগত ভোটের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের > জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়

পরের সংবাদ

আওয়ামী লীগে মনোনয়ন যুদ্ধ : দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু আজ, কার্যক্রমের সূচনা করবেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : আওয়ামী লীগের টিকেট পেলেই সংসদের আসন পাকা- এমন বদ্ধমূল ধারণা থেকেই ‘নৌকা’ পেতে মাঠে নেমেছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আজ শনিবার শুরু হবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ফরম কিনে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে ফরম কিনতে ঢাকায় জড়ো হয়েছেন আগ্রহী নেতারা। তবে অনুপ্রবেশকারী, দুর্নীতিবাজ, বিদ্রোহী, বিদ্রোহীদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। দশম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪ সালে) মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন ছয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের ৪৯ জন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাননি মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ ৫৬ জন। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, দ্বাদশ নির্বাচনে বাদ পড়ার সংখ্যা প্রায় শতাধিক। বয়সজনিত কারণ ছাড়াও বিতর্কিত, হাইব্রিডদের হাতে নৌকা তুলে দেয়া হবে না। ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সামনে রেখে ‘স্মার্ট’দের হাতেই শোভা পাবে নৌকা।
গত কার্যনির্বাহী বৈঠকেও (১০ নভেম্বর) মনোনয়ন নিয়ে কথা বলেছেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে দলের মধ্যে যারা বিভেদ সৃষ্টি করেছেন এবং জনগণের কাছে বিগত দিনে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি করেছেন দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি। এর আগে একাধিকবার নিজস্ব কৌশলে জরিপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের সার্ভে রিপোর্ট আমার কাছে রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করেছেন, যারা জনগণের কাছে যান, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা বলেন, তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন এবং এলাকার লোকজনের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক নেই, এলাকায় যান না- তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। কোনো ধরনের তদবির এ ক্ষেত্রে কাজে আসবে না।
মনোনয়ন দৌড়ে ব্যবসায়ী-আমলা : একাদশ সংসদে সংসদ সদস্যদের ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ১৮২ জনের পেশা ব্যবসা। সংসদ সদস্যদের হলফনামা ও আয়কর রিটার্নে প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পেয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ জোট থেকে নির্বাচিত ব্যবসায়ী ১৭৪ জন (৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ) এবং ঐক্যফ্রন্টের আছেন পাঁচজন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন তিন ব্যবসায়ী। অন্যদিকে ২০২০ সালের অক্টোবরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত তথ্য বলছে, বাংলাদেশের প্রথম সংসদে মাত্র ১৮ শতাংশ সদস্যের পেশা ছিল ব্যবসা। ধীরে ধীরে এ হার বেড়ে ৬০ শতাংশের ওপরে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বর্তমান সংসদে আইনজীবী ১৩ শতাংশ, চিকিৎসক ও শিক্ষক ৮ শতাংশ, কৃষিতে জড়িত ৪ শতাংশ এবং অন্য পেশায় জড়িত ৭ শতাংশ। হলফনামায় রাজনীতিই যারা পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন, এই সংসদে এমন সদস্য আছেন মাত্র ৭ শতাংশ। ৯০-এর দশক থেকে সংসদে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্যের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার ছিল ৪৮ শতাংশ; ২০০১ সালে ৫১ শতাংশ ও ২০০৮ সালে ৬৩ শতাংশ। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৭৭ সংসদ সদস্য কোনো না কোনো ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন বলে তাদের হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, যা মোট সংসদ সদস্যের ৫৯ শতাংশ। ফলে রাজনীতিতে রাজনীতিবিদরাই কোণঠাসা। রাজনীতিবিদের চেয়ে ব্যবসায়ী, আমলা, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের শিল্পী তারকারা গত এক বছর ধরে মনোনয়নের জন্য নানাভাবে তদ্বির করছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডিতে যাতায়াত বেড়েছে এমন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। পুরনোদের পাশাপাশি নতুন করে অনেকেই ক্ষমতাসীনদের মনোনয়নপ্রত্যাশায় নিজ নিজ এলাকাতেও সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ দলীয় সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য নতুন দুই শর্ত : গত ১৫ বছরে নানা কৌশলে নৌকায় চড়ে বসেছেন অনুপ্রবেশকারীরা। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ পদও বাগিয়ে নিয়েছেন তারা। এসব পদবি ব্যবহার করে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ ব্যবসাবাণিজ্য, ঠিকাদারিসহ সবকিছু নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছেন। বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চান এদের অনেকেই। এসব অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিডদের লাগাম টেনে ধরতে নতুন দুটি শর্তজুড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি দলের দুর্দিনের কাণ্ডারিরা যেন আর বঞ্চিত না হন, সেজন্য শর্ত আরোপ করেছে দলটি। নতুন শর্ত অনুযায়ী, মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহকারীদের দলে বর্তমান কোনো পদসহ অতীতের অন্তত আরো দুটি সাংগঠনিক পদ থাকতে হবে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এই নতুন দুই শর্তে আটকে যাবে অনুপ্রবেশকারী অনেক রাঘব-বোয়াল। পরীক্ষিত, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা সহজ হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অনুপ্রবেশকারীর আচরণ, তাদের দুর্নীতি এবং অপকর্মের কারণে মনোনয়ন সংক্রান্ত সংসদীয় বোর্ড মনোনয়নের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেবে। হঠাৎ করে দলে আসা, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, এমন কেউ এবার মনোনয়ন পাবেন

না- এটা মোটামুটি নিশ্চিত। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণরাই মনোনয়ন পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়