ডেঙ্গু পরিস্থিতি : ছুটির দিনে রোগী ও মৃত্যু দুইই কম

আগের সংবাদ

কদর বেড়েছে বোমাবাজদের : ২০১৪-১৫ সালের স্টাইলে আগুন-বোমা, পুরনো সন্ত্রাসীরা সক্রিয়, মাঠে নতুন বোমাবাজ

পরের সংবাদ

নৌকা এবার জিতবেই > যাকেই নমিনেশন দেব, ঐক্যবদ্ধভাবে তাকেই বিজয়ী করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ক্ষমতা দেয়ার মালিক আল্লাহ আর দেশের জনগণ- এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আল্লাহর রহমতে তার ওই কথা তাদের বেলায় ফলে গেছে। আর আওয়ামী লীগ চার চারবার ক্ষমতায় আছে। ইনশাল্লাহ আগামীতেও জনগণ নৌকায় ভোট দেবে। জনগণের সেবা আমরা করে যাব। গতকাল শনিবার বিকালে মতিঝিলের আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। বক্তব্যের শেষে নিজেই স্লোগান দেয়া শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। মুষ্টিবদ্ধ হাত উপড়ে তুলে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, এবার জিতবে নৌকা- এই স্লোগান তুলেন তিনি। উপস্থিত জনতাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাত তুলে সমস্বরে স্লোগান কণ্ঠ মেলান।
মেট্টোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঢাকা বিভাগীয় এ সমাবেশের আয়োজন করে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী এতে সভাপতিত্ব করেন। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ছাড়াও ঢাকা জেলা ও ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসেন। সমাবেশের মূল মঞ্চ আরামবাগ মোড়ে হলেও দক্ষিণে ফকিরাপুল মোড়, বিএনপির নয়াপল্টন অফিসের সামনের দুই পাশের সড়ক, কাকরাইল মোড়, মঞ্চের উত্তর পার্শ্বের নটরডেম কলেজ, শাপলা চত্বর, কমলাপুর স্টেশন, গোপীবাগ মোড় পর্যন্ত, মঞ্চের সামনে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনের সড়ক হয়ে এজিবি কলোনি, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, শাহজাহানপুর মোড়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতাল ও রেলওয়ে কলোনি পর্যন্ত মানুষ সমবেত হন।
নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন হবেই। তফসিল যে কোনো সময় ঘোষণা হবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে- যাকেই প্রার্থী দিই, সেটা কানা-খোড়া যেই হোক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবেন- করবেন কিনা, হাত তুলে ওয়াদা করেন। উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রæতি দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার নৌকা জিতবেই।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা- ৮ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন, সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহী, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাহুল হোসেন সাচ্চু, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
নিজ দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ- দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। ঘাতকের দল, সন্ত্রাসীর দল বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত- এরা যেন এদেশের মানুষকে আর জ¦ালিয়ে-পুড়িয়ে মারতে না পারে, মানুষের ওপর অত্যাচার করতে না পারে, সেজন্য সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কাকে নমিনেশন দেয়া হবে, সেটা আমরা ঠিক করে দেব। যাকে নমিনেশন দেব, ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। যেন আবার আমরা এই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনো অনেক কাজ বাকি, সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ ওই সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী- এরা যদি ক্ষমতায় আসে, এদেশকে আর টিকতে দেবে না। সেজন্যই জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ নৌকায় মার্কাই পারে স্বাধীনতা দিতে। নৌকাই মার্কায় পারে উন্নয়ন দিতে। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই আজকে এত দূর এসেছেন। সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখে।
গার্মেন্ট শ্রমিকদের কারা উসকানি দিচ্ছে, তা জানা আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে। উসকানি দিয়েছে কারা? বিএনপির আমলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মাত্র ৫০০ টাকা মজুরি ছিল। ৯৬ সালে সরকারে এসে তাদের মজুরি ১৬শ টাকা করেছিলাম। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি এক টাকাও মজুরি বাড়ায়নি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনবার বাড়িয়ে আমরা ৮ হাজার ৩শ টাকা করি। শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজি দেয়, শ্রম দিয়ে পয়সা কামাই করেন। সেই কারখানায় ভাঙচুর হলে, আল্লাহও নারাজ হবে। আপনাদের যে কোনো প্রয়োজন আমরা দেখি। কাজেই অন্যের কথায় নেচে, কারখানায় হামলা করে, কারখানা ভেঙে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের ক্ষতি করলে নিজেরই ক্ষতি হবে। আর কারখানা বন্ধ করলে, গ্রামে ফিরে যেতে হবে। তখন বিনা কাজে জীবনযাপন করতে হবে, এই কথাটা যেন তারা মাথায় রাখে। মজুরি কমিশন বসেছে। ধৈর্য ধরতে হবে।
গার্মেন্টে তারেক রহমান উসকানি দিচ্ছে- এমন ইঙ্গিত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারা উসকানি দিচ্ছে, আমরা জানি। যারা ভাঙচুরে জড়িত। বিএনপির নেতাকর্মীদেরও আমি বলব যারা হুকুমদাতা, দেশে থাকুক আর বিদেশে থাকুক- আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আর বিদেশে বসে বসে সেই সুযোগ ব্যবহার করে হুকুম জারি করে, তাকে বিদেশ থেকে ইনশাল্লাহ ধরে এনে এই বাংলাদেশে শাস্তি দেব, ওই কুলাঙ্গার তারেককে। কেউ ছাড়া পাবে না।
বিএনপিকে ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করা। তাদের আন্দোলন হচ্ছে সবকিছু ধ্বংস করা। কেন ধ্বংস করবে এভাবে? কে তাদের অধিকার দিয়েছে? এই ধ্বংসযজ্ঞ বিএনপিকে বন্ধ করতে হবে। এটা যদি তারা বন্ধ করতে না পারে, কীভাবে বন্ধ করাতে হয়, সেটাও আমাদের জানা আছে। এটা আমরা ছাড়ব না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি আসে ধ্বংস করতে। কাজেই এই ধ্বংস যারা করবে, তারা যেন আর এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে- সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র তারা চালিয়েই যাচ্ছে। তারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই বোঝে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রকারীরা যেন দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে। সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বাসে আগুন দেয়, সাধারণ মানুষের গাড়িতে আগুন দেয়- তারা (বিএনপি নেতারা) গাড়িতে চড়ে না? তাদের গাড়ি নেই? তাদের জিনিসপত্র নেই? জনগণ যদি সেগুলো পুড়িয়ে দেয়া শুরু করে, তখন তারা কোথায় যাবে? কী করবে? সেটাও তাদের ভাবা উচিত। যদিও আমরা ওসবে বিশ্বাস করি না, এখনো ধৈর্য ধরে আছে এদেশের মানুষ। কিন্তু কতদিন? তারা খাদ্যপণ্য আসতেও বাঁধা দেয়। কাজেই আমি তাদের সাবধান করে দিচ্ছি।
আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, সেটাই আমার পরিচয় : এদিকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে করে যাত্রা শুরুর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় সাংবাদিকদের। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা সেটাই আমার পরিচয়। আর কিছু না। কথাগুলো বলার সঙ্গে সঙ্গে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে মেট্রোরেলের বগি। অনেক বিশ্ব নেতাদের মতো বলা হয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু তিনি কার সঙ্গে নিজের মিল পান, জানতে চাইলে তিনি বলে ওঠেন, আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা, সেটাই আমার পরিচয়। আমার আমিত্ব বলে কিছু নেই। কারণ আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি এদেশের মানুষের কল্যাণে। মানুষ যখন ভালো থাকে ওটাই আমার সব থেকে বড় আনন্দ। আমার মনে হয় আমার বাবার আত্মাটাও শান্তি পাবে। এই যে এত সাহস এবং শক্তি, এটার উৎস কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুজিব কন্যা হিসেবে, সেটাই আমার বড় উৎস। আমি জাতির পিতার কন্যা। বাংলাদেশের জনগণ তারাই আমার উৎসের আঁধার। জাতি নতুন কিছু পেতে চাচ্ছে কিনা- প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন লক্ষ্য স্মার্ট জনগণ করে তোলা। শিক্ষা-দীক্ষায় জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দেশকে উন্নত করতে চাই। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা তৈরি করেছি। বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পাতবে না, সম্মানের সঙ্গে চলবে। কারণ জাতির পিতার নেতৃত্বে মুক্তিযদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে তুলব।
এর আগে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মেট্রোরেলের আগারগাঁও টু মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আধুনিক এই নগর গণপরিবহনে চেপে বসেন সরকারপ্রধান। মাত্র ২৫ মিনিটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে পৌঁছান তিনি। মতিঝিল স্টেশনে নেমে আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় জনসভায় অংশ নেন দলীয় প্রধান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়