অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা প্রেমিক রুফি কারাগারে

আগের সংবাদ

নির্বাচনী মেজাজে আ.লীগ : সিলেট থেকে প্রচারণা শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী, কাজ চলছে ইশতেহার প্রণয়নের

পরের সংবাদ

কদর বেড়েছে বোমাবাজদের : ২০১৪-১৫ সালের স্টাইলে আগুন-বোমা, পুরনো সন্ত্রাসীরা সক্রিয়, মাঠে নতুন বোমাবাজ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিতে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমা মারার ঘটনা বাড়ছে। সেই ২০১৪-১৫ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তিই যেন চলছে। হরতাল ও অবরোধে ঝটিকা হামলা এবং চোরাগুপ্তা স্টাইলে আগুন দেয়া হচ্ছে যানবাহন ও বিভিন্ন স্থাপনায়। এর আগে ২৯ অক্টোবরের হরতাল, তার পরের তিন দিনের অবরোধ ও সবশেষ ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথমদিন গতকাল রবিবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে অন্তত ৪০টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে। এর আগে ২৮ অক্টোবর যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে- তাতে এসবকাণ্ডে সেই পুরনোরাই নতুন করে মাঠে নেমেছে। যাদের অনেকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে জামিনে ছাড়া পেয়ে সক্রিয় হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কদর বেড়েছে বোমা কারিগর ও বোমাবাজদের। তদন্তে নেমে এমন অনেকের নামও পেয়েছে পুলিশ। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে এসব অপকর্মে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ধৃতদের মধ্যে পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে ৮ কেজি গানপাউডার ও বোমাসহ বিএনপির তিনজন, মতিঝিল ও মুগদায় বাসে আগুন দেয়ার সময় দুজন, বরিশালে বাবুল নামে একজন, কুষ্টিয়ায় মিলন হোসেন নামে একজন, মেহেরপুরের গাংনীতে শরিফুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতা, নাশকতা, পুলিশকে মারধর, পুলিশ সদস্য হত্যা ও চলমান অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নানা ঘটনায় ঢাকায় এ পর্যন্ত ৮৯টি মামলা হয়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত আট দিনে দায়ের হওয়া এসব মামলায় বিএনপির ২ হাজার ১৭২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অবরোধ ডেকে প্রকাশ্যে না থেকে যানবাহনে হামলা ও বোমা নিক্ষেপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত পুরনো কায়দায় বোমাবাজ ও সন্ত্রাসীদের মাঠে নামিয়েছে। তারা রাস্তায় নেমে যানবাহন ভাঙচুর করছে, আগুন দিচ্ছে, বোমা মারছে। এসব করে তারা পার পাবে না উল্লেখ করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অস্ত্রবাজ, বোমাবাজদের চিহ্নিত করে ধরার চেষ্টা করছে। এসব করে তারা কেউ পার পাবে না। উল্টো বিপদে পড়বে।
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার এ প্রসঙ্গে বলেন, আপাত দৃষ্টিতে অবরোধ কর্মসূচির ধারাবাহিক অংশ হিসেবেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। তবে মূল কথা হচ্ছে, বিষয়গুলো ফৌজদারি অপরাধ। যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার মতো অমানবিক ঘটনা আর হতে পারে না। মনে হচ্ছে ২০১৩-১৪-১৫ সালের মতো ঘটনা ঘটানোর পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। তবে যারা এসব করছে- তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশকে আরো সচেতন হতে হবে। অবরোধ যারা ডাক দিয়েছেন তারাও এসবের দায় এড়াতে পারেন না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যারা জনগণের জানমাল ও সরকারি সম্পত্তিতে আগুন লাগাচ্ছে, তাদের অনেকের নাম আমরা পেয়ে গেছি। ছবি পেয়েছি। তারা বাংলাদেশের যেখানেই থাকুক না কেন, আমরা অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। তিনি বলেন, একটি মানুষের শেষ সম্বল একটি বাস। যাত্রী পরিবহন করে তার সংসার চলে। তার একমাত্র অবলম্বন যদি রাত ৩টা, দেড়টার সময় তারা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলে, তার লাইফটাই তো শেষ হয়ে যাবে। আমি মনে করি, এটা গর্হিত কাজ। মানুষের জানমালের ওপর আঘাত করা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা, ককটেল নিক্ষেপ করা, এসব কাজ যারা করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। তিনি বলেন, পুরনোরাই আবার নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। তাদের সঙ্গে আরো অনেকে যোগ হয়েছে। এদের চিহ্নিত করে আটকের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, যারা পেট্রোল বোমা মারছে, তারা সবাই বিএনপির লোক। আমরা ইতোমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি; তারা প্রত্যেকেই জানিয়েছে- তারা বিএনপির সমর্থক অথবা কর্মী। এটা স্পষ্ট করা প্রয়োজন- আমাদের কাছে কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয় মুখ্য বিষয় নয়, অপরাধী পরিচয়টাই মুখ্য। যে বা যারাই আইনশৃঙ্খলা বিঘœ ঘটাতে চেষ্টা করবে, তাকেই আমরা আইনের আওতায় আনবই। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। নাশকতা করে কেউ পার পাবে না।
জানা গেছে, রাজধানীর চকবাজার এলাকা থেকে শুক্রবার রাতে ৮ কেজি গান পাউডার ও ২১টি হাতবোমাসহ কেন্দ্রীয় যুবদলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সাইদুল হাসান মিন্টু, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড চকবাজার যুবদলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাশার ও চকবাজার থানা বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মাসুদকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তারা ১৯৯৯ সাল থেকে বোমা বানায়। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে অনেক চাহিদা ছিল। ২০১৫ সালের পর রাজনৈতিক উত্তাপ কমে যাওয়ায় গ্রেপ্তারকৃতদের চাহিদা কমে যায়। এরপর এ বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর থেকে তারা আবার বোমা বানানো শুরু করেছে। ২৯ অক্টোবর রাতে পুলিশের ওপর অনেকগুলো বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তখন তারা বেশ কিছু লোককে গ্রেপ্তার করেছে। তারপর ২৮ অক্টোবর সমাবেশ স্থলে অনেক বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। যেটার দায়িত্বে ছিল মিন্টুসহ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। গ্রেপ্তারকৃতরা ৫ ও ৬ নভেম্বরের অবরোধের জন্যও বোমা বানাচ্ছিল। গান পাউডারগুলো চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা সংগ্রহ করে। বোমা বানানোর জন্য বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা লোক জোগাড় করে বলে পুলিশকে জানায়।
এদিকে রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় গতকাল রবিবার দুপুরে পুলিশের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহবুব আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি কাজী মো. হাসানকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সকালে মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় অছিম পরিবহন নামে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় মো. সবুজ (৩০) নামে এক গাড়িচালক দগ্ধ হয়েছেন। তিনি রমজান পরিবহনের চালক ছিলেন। তাকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলার ধরন দেখে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছে- সবই হচ্ছে সেই পুরনো কায়দায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়