আগামীকাল স্যাম্বো-কুরাশ প্রতিযোগিতার পর্দা উঠছে

আগের সংবাদ

মাহবুব : হার না মানা সম্প্রদায়ের মানুষ

পরের সংবাদ

নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত : ক্ষণগণনা শুরু > রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ ৫ নভেম্বর > তফসিল ১৪ নভেম্বর, ভোট ৭ জানুয়ারি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী সরকার নিয়ে মতানৈক্য, বিক্ষোভ, হরতাল অবরোধ- রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে দ্বাদশ নির্বাচনী ট্রেনে উঠে পড়ল দেশ। সংবিধান অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন শেষ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই লক্ষ্যেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। নির্বাচনী পরিস্থিতি, ইসির আইন কানুন ও তার প্রয়োগবিষয়ক সক্ষমতা নিয়ে গতকাল বিকাল ৩টায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য চার কমিশনার। আর আগামী ৫ নভেম্বর বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনী দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে চায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।
ইসির নির্বাচনী শাখা সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। আগামী ১৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। আর আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে অর্থাৎ ৭ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়েছে। সাধারণত, তফসিল ঘোষণার ন্যূনতম ৪৫ দিন পরে ভোটগ্রহণ করা হয়। এবারো ১৪ নভেম্বরের তফসিল ঘোষণার পরে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেয়ার সময়সীমা থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ১ ও ২ ডিসেম্বর, প্রত্যাহার ৩ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ৭ জানুয়ারি।
এদিকে ২০১৪ সালের মতো এবারো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৈরি করেছে উত্তেজনা। বিএনপি ও সমমনাদের হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিতে সংঘাত আর প্রাণহানি জনমনে বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। এমন পরিস্থিতিতে মতভেদ নিরসনে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজার পরামর্শ আসছে পর্যবেক্ষক মহল থেকে। কিন্তু প্রধান দুপক্ষের অনড় অবস্থানের মধ্যে সমঝোতার কোনো আভাস মিলছে না। আগামী ৪ নভেম্বর আবারো দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। বিশেষ করে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের সঙ্গে সংকট নিরসনের আলোচনা করতে চান কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। প্রয়োজনে এককদম এগিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক দাবির বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ইসি আলোচনাও করতে চায়। মোট কথা, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য যতটা সম্ভব ততটাই করতে চায় ইসি। গত সপ্তাহে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন,

ভোটের কাক্সিক্ষত পরিবেশ এখন হয়নি। তারপরেও আমাদের হাতে অন্য কোনো উপায় নেই, পরিবেশ প্রতিকূল হলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ভোট করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা সভা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রথা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি অবহিত করতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে পুরো নির্বাচন কমিশন।
এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোও তৎপর। আগামী নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়, সেই তাগিদ কূটনীতিকরা বারবার দিয়ে আসছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ দেখাতে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ আনার জন্য বেশ তৎপর ইসি। ইউরোপীয় কমিশন থেকে ৭ জন পর্যবেক্ষক পাঠানোর চিঠিতে কিছুটা আশ্বস্ত ইসি। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে ইসির সংগঠন ‘ফেমবোসা’ অর্থাৎ ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আসতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক দলও। সেই সঙ্গে প্রায় দেড় শতাধিক দেশীয় পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার হাজারো পর্যবেক্ষক জাতীয় নির্বাচনে ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। থাকছে দেশি-বিদেশি অর্ধশত মিডিয়া। সব মিলিয়ে গত দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জনগণ ও দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়া কাটিয়ে উঠতে চায় বর্তমান ইসি।
সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে কঠোর। মাঠ কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শিথিলতা সহ্য করা হবে না। তবে সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো ভোট হবে। কোন দল আসলো কী আসলো না সেটা দেখার দায়িত্ব ইসির নয়।
এদিকে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে বিএনপিসহ সমমনা দল ও বামদলগুলোর দাবি উড়িয়ে দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে কাজ করবে। যেমনটা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে হয়েছিল। এই সময়ে সরকার কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করবে, কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না।
এর আগে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা ৩ এ বলা হয়েছে-(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে, এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপদফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা, উপদফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন না। তবে নির্বাচনকালীন এই ৯০ দিনে সংসদ অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা নেই।
গতকাল ১ নভেম্বর ৯০ দিনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। তবে কমিশনের মূল কাজ শুরু হবে তফসিল ঘোষণার পর। নির্বাচনকালীন এ সময়ে ভোটসংশ্লিষ্টদের নিয়োগ, বদলি থেকে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির কর্তৃত্ব থাকায় আইন-বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তরে নির্দেশনা পাঠানো হবে। গতকাল বুধবার এ আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষ করেছে ইসি। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয় গুছিয়ে ভোটের সম্ভাব্য দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে কমিশন সভা ডাকা হবে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলাপ্রধানরা জানিয়েছেন নির্বাচন করতে কোনো হুমকি নেই। ইতোমধ্যে নির্বাচনের জন্য ৩০০ বিচারক চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। আবার সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে বলেও জানিয়েছেন ইসি মো. আলমগীর।
টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে সিইসি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করবেন। তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনসহ ভোটের সব ধরনের নির্দেশনা এবং দল, প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনী আইন অনুসরণ ও ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান তুলে ধরা হবে। নির্বাচন কমিশন মো. আলমগীর বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। তফসিল নভেম্বরের প্রথমার্ধে হবে।
এদিকে সংঘাত যে গণতন্ত্রের পথ নয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনের পথ খুঁজতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।
রাজনৈতিক ডামাঢোলের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল দেয়ার বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব সময়মতো ভোট করা। তারা এর মধ্যে দলগুলোর সঙ্গে বসেছে, এটা রোডম্যাপ অনুযায়ী তাদের রুটিন দায়িত্ব। বিএনপি বা অন্য কোনো দল যদি ভোটে না আসে তাহলে কমিশনের কিছু করার থাকে না। ইসি সময়মতো একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, তবে দেখতে হবে ভোটাররা যেন নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ঠিক থাকে। তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকা আছে।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনগণের প্রত্যাশার বাইরে যে অস্থির রাজনৈতিক উত্তপ্ত ও সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি হলো, তা সত্যিই উদ্বেগ ও শঙ্কাজনক। রাজনৈতিক বা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। তবে একদিকে বলতে গেল যা ঘটেছে এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। কেননা প্রস্তুতিটা সবার পক্ষ থেকে এমনভাবেই নেয়া হয়েছিল। তবে সামনে কী ঘটতে পারে বা ঘটতে যাচ্ছে তা বলা কঠিন। জনগণের প্রত্যাশা এবং আমি মনে করি, এ সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আবারো বিএনপিকে ইসি বৈঠকে ডাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ইসি অনেকটা দায়সারা বিষয়ে এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমি মনে করি। আরো অনেক আগেই তারা এটা করতে পারত। ওপেন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করার কোনো অর্থ হয় না। যে মৌলিক বিষয় নিয়ে বিএনপি বা দলগুলোর মধ্যে সংঘাত বা মতানৈক্য, সে বিষয়ে দলগুলো কী ভাবছে তা আলোচনা করে তাদের দাবিগুলো নিয়ে ইসি প্রস্তাবনা আকারে সরকারের কাছে উপস্থাপন করলে ইসির উদ্যোগ কিছুটা হলেও কার্যকর হতো বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন বলেন, ইসি মূলত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের ১১৮-১২৬ ধারা পর্যন্ত যে আইনগুলো আছে তার মাধ্যমে ইসি রাষ্ট্রপতি, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন সেগুলো আয়োজন করে। এখন সংবিধানে জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা আছে।
বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি আসছে না, তাকে ও সমমনা দলগুলোকে ইসি তো কয়েকবার ডেকেছে। ওরা যদি না আসে ইসির কিছু করার নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে একটি সামরিক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচন আদায় করে নিয়েছিল। সেটা মনে রাখতে হবে। আর বিএনপি যদি না আসে তাহলে অন্য দলগুলো আসবে, ১টি দল না আসলে সেক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়