দক্ষিণখানে ছুরিকাঘাতে শিশুকে হত্যা

আগের সংবাদ

কেউ ভোলে না, কেউ ভোলে > বাস্তবায়নে এগিয়ে আ.লীগ > কথা রাখেনি বিএনপি > ছায়া সরকার হতে পারেনি জাপা

পরের সংবাদ

রক্তাক্ত গাজায় ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ : হামাসের রকেট হামলায় নিহত ৪০ ইসরায়েলি, পাল্টা হামলায় নিহত ১৯৮ ফিলিস্তিনি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর গাজায় যুদ্ধপরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার ভোরে হঠাৎ ইসরায়েলের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ছুড়তে শুরু করে হামাস। ২০ মিনিটে ছোড়া হয় ৫ হাজার রকেট। পাশাপাশি ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে পথচারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে সশস্ত্র যোদ্ধারা। হামলায় অন্তত ৪০ ইসরায়েলি নিহত ও ৭৪০ জন আহত হয়েছেন। বন্দি করা হয়েছে অন্তত ৩৫ ইসরায়েলিকে। হামাস এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘আল-আকসা ফ্লাড’। হামাসের এই হামলার মুখে ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় ১৯৮ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিবিসি, রয়টার্স
সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলে এমন প্রাণঘাতী হামলা আর দেখা যায়নি। কিন্তু কেন ইসরায়েলের ওপর এভাবে আক্রমণ শুরু করল ফিলিস্তিনিরা? আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, আল-আকসা মসজিদের অপবিত্রকরণ এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় বড় ধরনের এই ‘সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে হামাস।
স¤প্রতি ইহুদিদের সুকোট ছুটির সময় অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে হাজার হাজার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী জোর করে প্রবেশ করে বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জাতিসংঘ বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে প্রতিদিন অন্তত ৩টি করে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি বলেছেন, কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা যে ভয়ংকর নৃশংসতার মুখোমুখি হচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে এবং আল-আকসার মতো পবিত্র স্থানগুলোয় নৃশংসতা বন্ধ করুক। এগুলোই এই যুদ্ধ শুরুর কারণ। হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মাদ দেইফ বলেন, পৃথিবীতে শেষ দখলদারত্বের অবসান ঘটাতে এটাই সবচেয়ে বড় যুদ্ধের দিন।
২০ মিনিটে ছোড়া হয়েছে ৫ হাজার রকেট : স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার ভোরে হঠাৎ গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ছুড়তে শুরু করে হামাস। ২০

মিনিটে ইসরায়েলে ৫ হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে বলে জানায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি। পাশাপাশি ইসরায়েলের ভেতরে সশস্ত্র যোদ্ধাদের ঢুকে পড়ারও খবর পাওয়া যায়। এটি ২০২১ সালের ১০ দিনের যুদ্ধের পর থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে তৈরি হওয়া সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতি।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দক্ষিণ ইসরায়েলের ইসদেরত শহরে বন্দুকধারীরা পথচারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে শহরের রাস্তাগুলোয় সংঘর্ষের ঘটনা দেখা গেছে, পাশাপাশি বন্দুকধারীদের জিপ নিয়ে গ্রাম এলাকাগুলোয় ঘুরতে দেখা গেছে।
গাজা থেকে হামাসের মুহুর্মুহু রকেট হামলায় সেখানে অন্তত ৪০ জন নিহত এবং ৭৪০ জন আহত হয়েছেন। হামাস দাবি করেছে, তারা অন্তত ৩৫ জন ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে। হামাসের গণমাধ্যমে ধ্বংস হওয়া একটি ইসরায়েলি ট্যাঙ্কের ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে।
‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ ঘোষণা নেতানিয়াহুর : হামাসের এই হামলার মুখে ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, আমাদের শত্রæদের এমন মূল্য দিতে হবে, যা তারা কখনো দেখেনি। আমরা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি এবং এই যুদ্ধে আমরাই জিতব।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় আছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। পাল্টা জবাব দিতে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলায় ১৯৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এর পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে গাজায় ১৭টি জঙ্গি আস্তানা এবং হামাসের ৪টি অপারেশনাল হেডকোয়ার্টারে হামলা চালানোর কথা জানানো হয়। আইডিএফ ঘোষণা দিয়েই গাজায় হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যর্থতা : নিরাপত্তাবিষয়ক বিবিসি সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, এটা ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে ইসরায়েলি সরকার যে কীভাবে হামাসের এত বড় পরিকল্পিত হামলা তাদের নজর এড়িয়ে গেল।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় এবং দক্ষ। তারা দেশের ভেতরে এবং বাইরে কাজ করে। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ভেতরেই ইসরায়েলি গোয়েন্দারা রয়েছে। সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গেও তারা মিশে আছে। এছাড়া লেবানন, সিরিয়া এবং অন্যান্য জায়গায়ও ইসরায়েলি গোয়েন্দারা সক্রিয়।
সীমান্ত বন্ধ করা নিয়ে সমালোচনা : গাজায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস। ২০০৭ সালে হামাস গাজায় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইসরায়েল উপত্যকাটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তখন থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বেশ কয়েকবার ভয়াবহ লড়াই হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল সীমান্তে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গাজার কর্মীদের জন্য দুই সপ্তাহ সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আবারো দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। আর তারই জের ধরে গাজা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে নতুন এ হামলা হলো।
ফিলিস্তিনি কর্মীদের জন্য ইসরায়েলি সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা হয়েছিল। কারণ, গাজায় কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় এসব কর্মী ইসরায়েল গিয়ে ভালো উপার্জনের সুযোগ পান। গত ২৮ সেপ্টেম্বর আবারো সীমান্তটি খুলে দেয়া হয়। তখন আশা করা হচ্ছিল, গাজায় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসবে।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের পাল্টাপাল্টি হামলায় কমপক্ষে ২৪৭ ফিলিস্তিনি, ৩২ ইসরায়েলি এবং দুজন বিদেশি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও আছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়