দুদকের মামলা : সাবেক বিমানবালা শোভার ৩ বছর কারাদণ্ড

আগের সংবাদ

ঐতিহাসিক সম্পর্কে পরমাণু শক্তির বন্ধন : বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ইউরেনিয়ামের চালান গ্রহণ করল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

রাজনীতিতে সমঝোতার উদ্যোগ! : বৈরিতার পারদ নিম্নমুখী, আ.লীগের ৫ সদস্যের কমিটি, প্রতিনিধি দল গঠন করছে বিএনপি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২৩ , ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : অবশেষে বরফ গলতে যাচ্ছে। দুই ভুবনের দুই বাসিন্দার মধ্যকার দূরত্বের অবসান ঘটানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সুড়ঙ্গ পথে আলোর রেখার দেখা পেতে প্রতিদ্ব›দ্বী দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং রাজপথের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে নেয়া হয়েছে সমঝোতার উদ্যোগ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে শিগগিরই। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রæতিতে সমঝোতার দিকেই হাঁটছে রাজনৈতিক দলগুলো। গুঞ্জন উঠেছে, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে এই সমঝোতার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মুখে মুখে সরকার পতনের হুমকি অব্যাহত রাখলেও ভেতরে ভেতরে সমঝোতার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিও। সরকারের সঙ্গে দফারফার জন্য প্রতিনিধি কমিটি তৈরির কাজও চলছে।
মূলত, দীর্ঘদিন ধরেই পরস্পর বিপরীতমুখী রাজনীতি চাপানউতরে বন্দি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিপরীত মেরুতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সাবেক বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে অনড় অবস্থানে দুদল। বর্তমান সংবিধানের আলোকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির সাফ কথা- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কখনো ফিরে আসবে না।
অন্যদিকে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন নেতারা। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপ বা সমঝোতার কোনো বিকল্প দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কিন্তু এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ বারবার বলে এসেছে, বিএনপির সঙ্গে কোন ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নেবে না সরকার। এ ধরনের সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। বিএনপির অতীত ইতিহাস তুলে ধরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, কেউ যদি অন্যায় করে, অর্থ আত্মসাৎ করে, চুরি করে, খুন করে বা খুনের প্রচেষ্টা চালায়, গ্রেনেড হামলা বা বোমা মারে, তবে তার বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক। খুনিদের সঙ্গে আপস নয়- এমন বক্তব্য একাধিকবার দিয়েছেন দলটির শীর্ষনেতারা। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা কঠোর হুঁশিয়ারি করেছেন, অক্টোবরজুড়ে তারা সরকারকে দম ফেলার সুযোগ দেবে না এবং এরকম একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই তারা সরকারের পতন ঘটাবে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, অক্টোবরে যদি তারা একটি অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে বাধ্য করতে পারে, তাহলে তারা আন্দোলনে বিজয়ী হবে। অর্থাৎ এক মাসের একটি টর্নেডো দিয়ে বিএনপি সরকারকে হটাতে চায়।
তবে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নির্বাচনে বাধা দানকারীদের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, ভারত, চীন, রাশিয়ার কড়া বার্তা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, কারাভোগ এবং দেশের বাইরে চিকিৎসা- সবকিছু মিলে বৈরিতার পারদ গলে সমঝোতার পথে যাচ্ছে দল দুটি। দুই দলের ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার পথ তৈরি হয়েছে। হয়তো আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের সুষ্পষ্ট রূপরেখা বেরিয়ে আসবে।
সূত্র জানায়, রাজপথে দুই দলের বিপরীতমুখী অনড় অবস্থানের মধ্যেই নেপথ্যে চলছে সমঝোতার উদ্যোগ। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আমিনবাজারে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তলে তলে সবার সঙ্গে আপস হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। তার এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতেও সমঝোতার উৎস খুঁজছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের অংশীজন বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া আন্তর্জাতিক সমঝোতা তেমন কার্যকর হয় না। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে সমঝোতাই সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের অন্যতম শর্ত।
সূত্র জানায়, এই শর্ত পূরণেরও উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফোনালাপও করেছেন। তিনি মির্জা ফখরুলের কাছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থারও খোঁজ নিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ছাড়া আগামী নির্বাচন কোনোভাবেই অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না। সব দল এতে অংশও নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। এ সংকট নিরসনে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মতে, ভোটের এখনো সময় বাকি রয়েছে। সমঝোতা হওয়ার মতো যথেষ্ট সময় রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সমঝোতা কখনো একপক্ষের উদ্যোগে হয় না। একপক্ষ সমঝোতা চাচ্ছে কিন্তু অন্যপক্ষ চায় না- তাহলেও সমাধান হবে না। উভয়পক্ষকেই আস্তে আস্তে ছাড় দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটু নমনীয় হতে হবে। এর ফলে সমঝোতার একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা। রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ উদ্যোগ নিতে হবে। বাইরের কেউ করে দেবে না। রাজনৈতিক রফার মাধ্যমেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়