বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা : ড. বদিউল আলমের শ্যালক গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত উদ্বেগ কেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

ঐতিহাসিক সম্পর্কে পরমাণু শক্তির বন্ধন : বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে ইউরেনিয়ামের চালান গ্রহণ করল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আত্মিক সম্পর্কের শুরু সেই মহান একাত্তরে। বীর বাঙালির পাশে যেকটি দেশ দাঁড়িয়ে সাহস-শক্তি জুগিয়েছিল, রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) এর মধ্যে অন্যতম। যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে মার্কিন সপ্তম নৌবহর থামিয়ে দেয়া, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবে বারবার ভেটো দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় অবিস্মরণীয় নাম রাশিয়া। অর্ধশতক ধরে বন্ধুত্বের এই নিদর্শন বহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। আর এই নতুন যুগে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে এক মহাশক্তির বন্ধনে আবারো আবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ-রাশিয়া। নতুন যুগে প্রবেশের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বাংলাদেশ ও রাশিয়ার বন্ধুত্বে জোর দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জন্য বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বপ্নের প্রকল্পটির রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর করে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে এই জ্বালানি হস্তান্তর করেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এই ইউরেনিয়াম জ্বালানি পুড়িয়ে সেখান থেকে পাওয়া শক্তি দিয়েই উৎপাদন হবে বিদ্যুৎ। ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয় পদার্থ হওয়ায় এর ঝুঁকি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সবার আগে। মূলত রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক এবং সব থেকে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সিংহভাগ ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন। এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্র দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত। এরই মধ্যে ১ হাজার ২শ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের ৯০ শতাংশ কাজই শেষ। আগামী বছর এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বিদ্যুৎ। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা মোতাবেক কাজ এগিয়ে নেয়ায় পারমাণবিক জ্বালানি পাওয়ার সব ধাপ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। আইএইএর নির্দেশনা অনুযায়ী শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি অথরিটি গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে (বিএইসি) পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণের লাইসেন্স দেয়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। রাশিয়া থেকে একটি বিশেষ এয়ার কার্গোর মাধ্যমে ইউরেনিয়ামের চালানটি ঢাকায় এসে পৌঁছায়। পরদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তা সড়কপথে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে। এ কারণে পারমাণবিক জ্বালানি এমনভাবে তৈরি, সংরক্ষণ, পরিবহন এবং ব্যবহার হয় যাতে এটি থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে না পড়ে। আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতিটি পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত ফুয়েল রডগুলো নিরাপদে সংরক্ষণ করার নিশ্চয়তা দিতে হয়। ইউরেনিয়াম জ্বালানির তেজস্ক্রিয়তা যাতে কোনো অবস্থাতেই পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য শুরু থেকেই বাংলাদেশ নিরাপত্তার দিকটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ উচ্চমানের নিউক্লিয়ার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তি মোতাবেক, উচ্চমানের নিউক্লিয়ার জ্বালানি বর্জ্য অর্থাৎ স্পেন্ট ফুয়েল বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া ফিরিয়ে নেবে। রুশ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে স্পেন্ট ফুয়েল রি-প্রসেস করার পর চূড়ান্ত পর্যায়ে উচ্চমানের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জনমানবশূন্য এলাকায় মাটির ৪০০ মিটার গভীরে পুঁতে ফেলা হয়। এদিকে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের একেকটি ইউনিটে ১৬৩টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি লোড করা হবে। দুটি চুল্লিতে ৩২৬টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলিতে থাকবে ৮০ টন ইউরেনিয়াম জ্বালানি। চুক্তির আওতার মধ্যে প্রথম তিন বছরের জ্বালানি রাশিয়া থেকে আসবে। এরপর প্রতি ১৮ মাস পর পর এক তৃতীয়াংশ ফুয়েল অ্যাসেম্বলি বদলানো হবে।
ঐতিহাসিক সম্পর্কের মহাশক্তির বন্ধন : বাংলাদেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে এই প্রকল্পের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাদের সার্বিক সহায়তা ও মনিটরিং করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরমাণু শক্তিকে শান্তিপূর্ণ পথে ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। এখানকার বিদ্যুৎ হবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। যে কোনো ধরনের দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিক খেয়াল রেখে এই প্ল্যান্টের ডিজাইন তৈরি এবং নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু মন্তব্য করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেন, এই প্রকল্পে বাংলাদেশ ও রাশিয়া দুদেশেরই পারস্পরিক স্বার্থ রয়েছে। যা পরস্পরের জন্য উপকার ও সহযোগিতাকে আরো গভীর করছে। তিনি বলেন, আমি জোর দিয়ে বলছি, বাংলাদেশ আমাদের মৈত্রীপূর্ণ অংশীদার। যার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সমতা, পরস্পরের জন্য শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক স্বার্থ মেনে নেয়ার ভিত্তিতে। রাশিয়া ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তি ৫০ বছর আগের। ১৯৭০ এর দশকের শুরুতেই সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব বাংলার মানুষকে তার স্বাধীনতাসংগ্রামে এবং পরে নতুন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনে সমর্থন করেছে। যে দেশগুলো নব রাষ্ট্রকে সর্বপ্রথম স্বীকার করেছে, রাশিয়া তার মধ্যে অন্যতম ছিল। এরপরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যোগদান করেছে। বড় শিল্প আর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণ করতে সাহায্য করেছে। যা বাংলাদেশের জনগণের জন্য উপকারী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়