ভোটের দিন বাইক চালাতে পারবেন সাংবাদিকরা : ইসির অতিরিক্ত সচিব

আগের সংবাদ

ভিডিওবার্তায় তামিম ইকবাল : নোংরামিতে থাকতে চাইনি > কখনো বলিনি ৫ ম্যাচের বেশি খেলব না > তীর ৩ শীর্ষ কর্মকর্তার দিকে

পরের সংবাদ

ব্যাখ্যা চায় ক্ষুব্ধ গণমাধ্যম : গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকির প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রতিটি দেশের গণমাধ্যম স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতিমালায় চলে, কোনো রক্তচক্ষু ভয় পেয়ে নয়। বাংলাদেশের গণমাধ্যম চলবে দেশের সংবিধানের চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকির ভয়ে ভীত হয়ে নয়। প্রয়োজনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে বিবৃতি পাঠানো হবে এবং রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছে তার এমন বক্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। পিটার হাসের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ গণমাধ্যম নেতাকর্মীরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ ব্যক্ত করে বলছেন, কোন প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে এই ধরনের হুমকি দেয়া হয়েছে এর ব্যাখ্যা দাবি করব।
প্রসঙ্গত. বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত রবিবার মন্তব্য করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যদের পাশাপাশি গণমাধ্যমের ওপরও মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হবে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার এমন মন্তব্যের পর দেশজুড়েই চলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বিষয়টিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য পিটার হাসের হুমকির বিষয়টি এড়িয়ে গেছে দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট (পররাষ্ট্র দপ্তর)। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ না করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বা ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল, বিরোধী দল ও ব্যক্তিত্ব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর প্রযোজ্য। গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নন; বরং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যদের ওপরই ভিসানীতি কার্যকর হয়েছে। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন এক বেসরকারি টেলিভিশনের ওয়াশিংটন প্রতিনিধি। এ সময় পিটার হাস যা বলেছেন, তার সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ভিসানীতির আওতায় কারা পড়েছেন নির্দিষ্ট করে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, এর আওতায় পড়বেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নয়, বরং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যদের ওপরই ভিসানীতি কার্যকর হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত স্বাধীন এবং স্বচ্ছভাবে কাজ করে। দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী। সবসময় গণতন্ত্রের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র অন্য কাকে ভিসা দেবেন, না দেবেন কিচ্ছু আসে যায় না। কিন্তু কেন গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি কার্যকর হবে, সেটি আমার বোধগম্য নয়।
অন্যদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলছেন, এটা গণমাধ্যমে ভীতির পরিবেশ তৈরি করবে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ গণমাধ্যম স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতিমালায় চলে। সাংবাদিক নেতা ও বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি হবে। এটা হলে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে।
এদিকে ঠিক কতজনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নে পিটার হাস বলেন, কতজনের ওপর দেয়া হয়েছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা। পিটার হাস বলেন, সরকারপন্থি, বিরোধী দলীয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় থাকুক, বিচার বিভাগের থাকুক, গণমাধ্যমে থাকুক, যেখানেই থাকুক না কেন; আচরণের ওপর ভিত্তি করে সবার ক্ষেত্রে আমরা নীতিটি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে প্রয়োগ করছি। এটি তাদের কর্ম ছাড়া অন্য কিছুর ওপর ভিত্তি করে নয়।
কোন প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে এই ধরনের হুমকি দেয়া হয়েছে, আমরা

ব্যাখ্যা দাবি করব- এমন মন্তব্য করে ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আজকে বাংলাদেশ একটি চরম ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা আবারো সক্রিয়। এমন অবস্থায় সবাইকে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে নিজেদের আরো সুসংগঠিত করা প্রয়োজন। আজকে আমরা গণমাধ্যমকর্মীরাও এই থাবার বাইরে নই। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তথাকথিত ভিসানীতি গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর প্রয়োগ হবে। আমরা সাংবাদিকরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। তিনি বলেন, গণমাধ্যম কীভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে? পৃথিবীতে এমন কোনো নজির নেই- গণমাধ্যম নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বাংলাদেশে যেখানে স্বাধীন গণমাধ্যমের চর্চা করা হয়, যার যা খুশি বলতে পারে, তার মধ্যে কীভাবে এমন উক্তি আসে?
সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, তিনি বলেছেন- আমি কোনোদিন আমেরিকায় যাইনি, যাওয়ার ইচ্ছেও নেই। ভিসানীতি নিয়ে আমার কোনো চিন্তাও নেই। শ্যামল দত্ত বলেন, আমরা মার্কিন ভিসানীতিকে গুরুত্ব দেই না। মহান একাত্তরে আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে পেছনে ফেলে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। আমাদের ভয় কিসের? বাংলাদেশ থেকে ৫০০ বা ১ হাজার মানুষ আমেরিকা যাবে কি যাবে না তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমেরিকা বাংলাদেশে তাদের মতো করে সরকার স্থাপন করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারোর অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবে না। সুতরাং এই ভিসানীতি নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। প্রতিটি গণমাধ্যম নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতিতে চলে। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের কল্যাণেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বা ক্ষতিগ্রস্ত বা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সেটা দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী। মার্কিন ভিসানীতির নামে স্বাধীন মত প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা বা হস্তক্ষেপ সাংবাদিকদের ভীত করে তুলবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়