গণপিটুনি থেকে বাঁচতে ৯৯৯-এ চোরের কল

আগের সংবাদ

পরিবারের আড়ালে তৎপর দল > খালেদার বিদেশযাত্রা : আলোচনায় জার্মানি > আশাবাদী দল ও পরিবার > অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

ভিডিওবার্তায় তামিম ইকবাল : নোংরামিতে থাকতে চাইনি > কখনো বলিনি ৫ ম্যাচের বেশি খেলব না > তীর ৩ শীর্ষ কর্মকর্তার দিকে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : টিম টাইগারদের বিশ্বকাপে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তার না থাকা নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেছেন, একটা ঘটনা হতে পারে, দুটা ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু গত ৩-৪ মাসে একজনের সঙ্গে ৭-৮টা ঘটনা যদি হয়; তাহলে এটাকে ইচ্ছাকৃত বলতে হবে। আমার উপলব্ধি অন্তত সেটাই। আপাতত এর চেয়ে বেশি আমার আর কিছু বলার নাই। আমি নোংরামির মধ্যে থাকতে চাইনি। গতকাল বুধবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক ভিডিওবার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। চোট সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে ক্রিকেটের মাঠে ফিরে আসার লক্ষ্যই ছিল বিশ্বকাপ মাতানো। তবে বিশ্বকাপটাই আর খেলা হলো না তার। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করা এই ব্যাটার সপ্তাহখানেক আগেও জানতেন না, ২০১৯ সালেই তিনি তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা খেলে ফেলেছেন। কেন না, হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ শেষে তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শুধু বিশ্বকাপ থেকেই নয়, তামিম যেন এর মধ্য দিয়ে ক্রিকেট থেকেই ছিটকে গেলেন।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের এক ওপেনার দীর্ঘদিন ধরে ফর্মে নেই। আরেক ওপেনারের ক্যারিয়ার সম্প্রতি শুরু হয়েছে। তিনি এখন পর্যন্ত ভালো কোনো ইনিংস উপহার দিতে পারেননি দলকে। তাছাড়া দলে নেই একজন ব্যাকআপ ওপেনারও। সব মিলিয়ে টপঅর্ডারে ভালোই ভোগতে হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। এসব নিয়ে ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমুল আবেদীন বলেছেন, তামিম না থাকায় ওপেনিংয়ে একটি শূন্যতা রয়ে গেছে।
ভারত বিশ্বকাপ খেলার উদ্দেশে বাংলাদেশ দল দেশ ছাড়ার পর গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিওবার্তা দিলেন জানিয়েছিলেন তামিম। গতকাল সাকিব বাহিনী

বিশ্বকাপের উদ্দেশে রওনা দেয়ার পর ফেসবুকের মাধ্যমে ভিডিওবার্তার প্রথমে অবসর পরবর্তী পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবাই জানেন, আমি অবসরে যাই, অবসরে যাওয়ার কারণ ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এরপর দুই মাস আমি প্রচণ্ড পরিমাণ কষ্ট করি নিজেকে ফিট করার জন্য। আমি নিশ্চিত, যারা সম্পৃক্ত ছিল, ফিজিও থেকে শুরু করে, আমি নিশ্চিত সবাই একমত হবেন, এমন কোনো সেশন বা এক্সারসাইজ নেই যেটি তারা চেয়েছেন কিন্তু আমি করি নাই।’
এরপর তামিম তার চোট পরবর্তী প্রথম ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতার কথা জানান। মাঠে তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসীও ছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। ব্যাটিং শেষে মানসিকভাবে খুশি ছিলেন জানিয়ে তামিম বলেন, ‘যেভাবে ব্যাটিং করেছি, তাতে অনেক খুশি ছিলাম। আমি মাত্র ৪৪ রান করেছি, তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম বড় কিছুর জন্য। সেটি হয়নি দুর্ভাগ্যজনকভাবে। সে ম্যাচের পর আমি মানসিক দিক দিয়ে খুশি ছিলাম। যা শেষ চার-পাঁচ মাস হয়েছে, সেগুলো মাথায় অতটা ছিল না সেভাবে। খেলতে তৈরি ছিলাম আবার, বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে ছিলাম।’
তামিম সম্প্রতি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে বিশ্বকাপে তার ৫ ম্যাচের বেশি খেলতে না চাওয়ার অভিযোগকে মিথ্যা ও ভুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এত দিন পর যখন ক্রিকেট খেলবেন, চোট থেকে সেরে উঠেছেন, ব্যথা অস্বস্তি থাকবেই। প্রথম ম্যাচের পরও ব্যথা অনুভব করেছি। যখন খেলা শেষ হলো, আমার অবস্থান ফিজিওকে বললাম যে আমি কেমন বোধ করছি। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনজন নির্বাচক ড্রেসিংরুমে আসেন। একটা জিনিস ক্লিয়ার করতে চাই, আমি কোনো সময়, কোনো মুহূর্তে কাউকে কোনো সময় বলি নাই, আমি ৫টা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। আমি নিশ্চিত, গতকাল নান্নু ভাইও ক্লিয়ার করেছেন। এটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা। আমি জানি না, এটা মিডিয়ায় কীভাবে ফিট করা হয়েছে বা কে করেছে। এটা একেবারে ভুল। যেটা নির্বাচকদের বলেছিলাম, আমার শরীর এখন এমনই থাকবে। ব্যথা থাকবে। দল যখন নির্বাচন করবেন, এটা মাথায় রেখে করবেন। এটার কারণ আছে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘কোনো জায়গায় বলা হয়নি পাঁচ ম্যাচ-দুই ম্যাচ, ইনজুরি, খেলতে পারব না- এত কিছু। হ্যাঁ, আমার শরীরে পেইন ছিল, যেটা অস্বীকার করছি না। বেসিক্যালি এটা হয়েছে। তারপর যেটা ঘটেছে, আমার কাছে যেটা মনে হয়, মিডিয়াতে যেটা আসতেছে ইনজুরি, পাঁচ ম্যাচ…আমার কাছে মনে হয় না বিশ্বকাপে না যাওয়ার পেছনে এটার বড় অবদান ছিল। কারণ, ব্যথা থাকতে পারে কিন্তু ইনজুরড হইনি এখনো।’
পরবর্তীতে তামিম বিশ্বকাপে খেলতে না যাওয়ার কারণটা উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘তার (কিউইদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের) দুয়েক দিন পর আমাকে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করেন। উনি বেশ ইনভলভড আমাদের ক্রিকেটে। আমাকে হঠাৎ করে ফোন করে বলেন, তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো, তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না, আফগানিস্তানের সঙ্গে। আমি বললাম, ভাই, এটা এখনো ১২-১৩ দিনের কথা। আমি তো এর মধ্যে ভালো কন্ডিশনে থাকব। কী কারণে খেলব না? তখন বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও তাহলে নিচে ব্যাট করাব।’
বোর্ডের লোক থেকে এমন প্রস্তাব পাওয়ার পর রাজি হননি তামিম। এসব কথার জবাবে তিনি বলেছেন, ‘দেখেন, আপনারা একটা কাজ করেন, যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে, তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আপনারা আমাকে একেকটা নতুন জিনিস ফেস করাবেন, আমি এই জিনিসগুলোয় থাকতে চাই না। যদি এগুলো হয়, আমাকে রাখিয়েন না। আমি এই নোংরামোর মধ্যে থাকতে পারব না।’
তামিমের এমন বক্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কে সেই বোর্ড কর্মকর্তা? তামিম ওই ব্যক্তির নাম না বললেও পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘তিনি বোর্ডের টপ লেভেলের কেউ এবং উনি বেশ ইনভলভড আমাদের ক্রিকেটে।’ তামিমের ইঙ্গিত থেকে তীরটা যায় মূলত তিনজনের দিকে- বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুস এবং টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।
বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে এই তিনজনই জাতীয় দলের সঙ্গে সরাসরি এবং বেশি সম্পৃক্ত। তবে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, জালাল ইউনুস বা খালেদ মাহমুদ নন, তামিমকে ওই প্রস্তাব দেয়া ব্যক্তি স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
বিশ্বকাপ দল ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন তিন নির্বাচক। প্রায় ১৫ মিনিটের এই সংবাদ সম্মেলনের পুরোটাজুড়েই ছিল তামিম প্রসঙ্গ। একপর্যায়ে তামিমের দলে না থাকায় টিম ম্যানেজমেন্ট, অধিনায়ক সাকিব ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। জবাবে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে পুরোপুরি আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সবাই যখন একসঙ্গে বসি একসঙ্গেই আলোচনা হয়। আমাদের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কি আলোচনা হয় সেটা তো এখানে খোলাসা করতে পারব না। আমাদের মধ্যে কি আলোচনা হয় সেটা তো বলতে পারব না।’
এছাড়া তামিমকে বাদ দেয়া প্রসঙ্গে নান্নু বলেন, ‘তামিম ইকবালের অনেক দিন ধরেই ইনজুরি শঙ্কা। আপনারাও জানেন, ও ইনজুরি নিয়ে ফাইট করছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে ফিটনেস ফিরে পেয়েছে। প্রথম ম্যাচ খেলার পর একটা কমপ্লেইন এসেছে। সব মিলিয়ে সবকিছু বিবেচনা করে, ওর ফিটনেসের কথা চিন্তা করে, ইনজুরির যে কনসার্ন আছে এটা নিয়ে চিন্তা করেই ওকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
গতকাল ভিডিওবার্তার শেষের দিকে তামিম ইকবাল আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করবে এমন প্রত্যাশা প্রকাশ করেন এবং তাকে মনে রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমি আশা করব যে ১৫ জন বিশ্বকাপে গিয়েছে, তারা যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের জন্য সাকসেস নিয়ে আসবে। আরো অনেক কিছুই ঘটেছে, এটা আপনারা দেখেছেন আমি নিশ্চিত। একটা কাহিনী বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে, দুটো কাহিনী ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু একজনের সঙ্গে তিন-চার মাসে যদি সাত-আটটা কাহিনী হয়, তাহলে সেটা ইনটেনশনাল হয়। দিস ইজ হোয়াট আই ফেল্ট। এর চেয়ে বেশি কিছু আর আমার বলার নাই। আপনারা ভালো থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।
আর একটাই রিকোয়েস্ট করব সবাইকে, আমাকে মনে রাইখেন। ভুলে যায়েন না। ভালো থাকেন সবাই। ধন্যবাদ।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়