উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিতে ২ জন নিহত

আগের সংবাদ

সতর্ক থেকেই ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

দাম নির্ধারণের তোয়াক্কা নেই : সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না তিন পণ্য. ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আয়েন উদ্দীন : দাম বাড়ানোর লাগাম টানতে সরকার ৩টি কৃষি পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও বাজারে এর প্রভাব নেই। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারের দাম বেশি- এই অজুাহতে সরকারের বেঁধে দেয়া দামে পণ্য বিক্রি করছেন তারা। তবে বেশি দামে ডিম ও পেঁয়াজ বিক্রি করায় জরিমানাও গুনতে হয়েছে বিক্রেতাদের। তবে আরো কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
পেঁয়াজ, ডিম ও আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য গত বৃহস্পতিবার বেঁধে দেয় সরকার। সে অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা ও কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬-২৭ টাকা। ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া বোতল ও প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা লিটার, খোলা তেল ১৪৯ টাকা, পাম ওয়েল ১২৪ টাকা, চিনি খোলা ১২০ ও প্যাকেট ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
দাম বেঁধে দেয়ার একদিন পর গতকাল দেশি পেঁয়াজ, ডিম ও আলু আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। সরকারের চাপে আলুর এজেন্টরা দাম কিছুটা কমালেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। তাদের পক্ষে এখনই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকজন বিক্রেতা আবার বলছেন, তারা নাকি বেঁধে দেয়া দামের বিষয়টি জানেন না। তবে অধিকাংশরা বলছেন বেঁধে দেয়া দাম কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে। ক্রেতাদের দাবি, দাম শুধু নির্ধারণ করলেই হবে না- তা বাজারে কার্যকরও করতে হবে। তা না হলে বিভ্রান্ত হবেন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা।
রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, কারওয়ান বাজার ও রামপুরা কাঁচাবাজারের কোথাও গতকাল শুক্রবার সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য তিনটি বিক্রি হতে দেখা যায়নি। অনেক দোকানে মূল্যতালিকাও টাঙানো হয়নি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার মানে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কিচেন মার্কেটের সামনের সড়কে কয়েকজন ডিম বিক্রেতা ৫০ টাকা হালি দরে ফার্মের ডিম বিক্রি করছেন। দেশি আদা ২৬০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ২৮০-৩০০ টাকা, চায়না রসুন ২০০, দেশি রসুন ২৪০ টাকা ও আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রামপুরা কাঁচাবাজারের মুদি দোকানদার শফিউল্লাহ বলেন, সরকারের হিসাব আমাদের জানা নেই। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি, কমে কিনলে কমে বেচি। একই বাজারের দোকানদার মহিউদ্দিন এন্টারপ্রাইজের মালিক বলেন, মাত্র দাম নির্ধারণ করেছে শুনেছি। একটু সময় দেন। আগের মাল শেষ হোক। পাইকারিতে কম দামে কিনতে পারলে, তখন খুচরায় কমে যাবে। সরকারকে পাইকারি বাজার তদারকি করার কথা বলেন তিনি।
মালিবাগ বাজারে তাহের নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, সরকার ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে, আমিও ১২ টাকায় বিক্রি করব। তবে ১০০ পিস নিতে হবে একসঙ্গে। কারণ পাইকারি ডিম কিনেছি ১২ টাকা দরে। তার সঙ্গে ভ্যানভাড়া যোগ করেন। আবার ১০০ ডিমে গড়ে ৩টি ভাঙা থাকে। এখানে লোকসান হয় ৩০ টাকা। তাতে ১০০ ডিমের দাম পড়ে ১ হাজার ২১০ টাকা। তার মানে একেকটা ডিমের দাম ১২ টাকা ১০ পয়সা। তাহলে কীভাবে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করব। আমি তো আর লোকসানে বেচব না। লোকসানের টাকা কে দেবে? তবে তার কথার প্রতিবাদ জানিয়ে এ বাজারের ক্রেতা ইসমাইলের জবাব, দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তো আপনারা (বিক্রেতারা) বাড়তি দামে বিক্রি শুরু করেন। তবে কমলে কেন বিক্রি করেন না?
শান্তিনগর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা করে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে। ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫৫ টাকা করে। নির্ধারিত দামে বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে এ বাজরের বিক্রেতা মো. ইউনুস বলেন, হুট করে বললেই কমানো যায় না। ক্যাশমেমো আছে। যে দামে কিনেছি সে হিসাবে বিক্রি করছি। পাইকারিতে কম দামে কিনতে পারলে খুচরায় কম দামে বিক্রি করতে পারব। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির বিষয়ে প্রশ্ন করলে কারওয়ান বাজারের আলু, পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রেতা আবদুল হামিদ বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আলু ৩৯ টাকা এবং পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে কিনেছি। বেশি দামে কিনে কম দামে বেচব কেমনে।
নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে গতকাল মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মূল্যতালিকা না থাকায় ও বেশি দামে বিক্রি করায় পেঁয়াজের দুই পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা এবং একজন ডিম ব্যবসায়ীকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার। অভিযান শেষে আব্দুল জব্বার বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ডিম, সয়াবিন তেল, আলু, পেঁয়াজের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার- তা তদারকি করার জন্যই মূলত আজকের এই অভিযান।
তিনি বলেন, যেহেতু গতকালই (বৃহস্পতিবার) এই মূল্যতালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে; তাই ব্যবসায়ী মহল এখনো এই ব্যাপারে সচেতন নয়, তারা আগের মূল্যতালিকাই রেখে দিয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অনিয়ম

পেয়েছি। ডিমের একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অনিয়ম পেয়ে তাকে আইনের আওতায় এনেছি। আর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছে।
এই কর্মকর্তা জানান, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা দুটি প্রতিষ্ঠানে দেখিনি। ফলে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের উপস্থিতিতে মূল্যতালিকা ঠিক করেছে। আমরা আশা করছি, আজ যেহেতু প্রথমদিন তাই একটু সময় লাগছে। বিকাল থেকে বা আগামীকাল (শনিবার) থেকে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন ন্যায্য দাম কার্যকর করব।
বেঁধে দেয়া পেঁয়াজ, আলু, ডিমসহ তিনটি কৃষি পণ্যের দাম শক্তভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে জানিয়ে টিপু মুনশি আরো বলেন, ভোক্তা অধিকারের যথেষ্ট পরিমাণ লোকের অভাব রয়েছে। এরপরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেয়া দাম ঠিক করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমরা সবাই মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের বিশাল বাজার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লোকের কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। সেটি নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছেন। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সব সময় ব্যবসায়ীদের যে চাপে রাখা যায়, তা কিন্তু নয়। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার দিচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়