‘রাজাকারদের জনসংখ্যা বেড়েছে’

আগের সংবাদ

চাপ কমলেও সতর্ক থাকবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

বাংলাদেশের পাশে থাকবে ফ্রান্স : শেখ হাসিনা-ম্যাক্রোঁ বৈঠক, দুই চুক্তি স্বাক্ষর , মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট ফ্রান্স

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যকার নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন, আজ তা একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফররত ফ্রান্স প্রতিনিধি দলের সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আমার সার্বিক বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের স্বার্বভৌমত্বকে সম্মান ও সমর্থন জানিয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার এই নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা উভয়েই আশাবাদী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে চলমান সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন এবং সুশাসন এই নতুন সম্পর্কের মূলভিত্তি। ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রæতিমূলক কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অভাবনীয় ও ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় ফ্রান্স সরকারের আস্থার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্ধৃত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে থাকার প্রতিশ্রæতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। এজন্য আমি রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে ফ্রান্স সরকার ও ফ্রান্সের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর এই সফরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু সমঝোতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ফ্রান্স আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত সুরক্ষা অবকাঠামো বিনির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত কারিগরি সহায়তাদানে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স নেতৃস্থানীয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ফ্রান্সের অগ্রণী ভূমিকাকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায় ও এ লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে একটি টেকসই তহবিল গঠনে ফ্রান্সের আহ্বানকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও, ফ্রান্সের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভাষা বিনিময়ের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই সফরের সামগ্রিক বিষয়ে একটি যৌথ-বিবৃতি খুব শিগগির প্রকাশ করা হবে। দুই দেশের সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে আরো বিস্তারিত অবহিত করা হবে।
শেখ হাসিনা ও ম্যাক্রোঁর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও ২টি চুক্তি স্বাক্ষর : এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনা ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যে একান্ত বৈঠকের পর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট ও বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ঢাকা ও প্যারিস। করবি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র দুটি স্বাক্ষর করে বিনিময় করা হয়। চুক্তি দুটির একটি হলো- ‘ইমপ্রæভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও ফ্রান্সের ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট সংস্থার (এএফডি) মধ্যে ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি এগ্রিমেন্ট এবং আরেকটি হচ্ছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম সম্পর্কিত ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এসএএসের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) চুক্তি।
ইআরডি সচিব শরিফা খান ও এজেন্স ফ্রান্সেইস দো ডেভেলপমেন্টের (এএফডি) কান্ট্রি ডিরেক্টর বোনুই শসেত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রথম চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন। দ্বিতীয় চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন বিএসসিএল চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও স্পেস সিস্টেম, এয়ারবাসের সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ভেসভাল। দেশের প্রথম জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, ফরাসি কোম্পানি থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের নির্মিত। এটি ২০১৮ সালের ১২ মে উৎক্ষেপণ করা হয়।
ম্যাক্রোঁ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৌঁছলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে তারা ফটো সেশনে অংশ নেন। পরে, দুই নেতা একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ের অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ত্যাগের আগে, ম্যাক্রোঁ পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষর করেন।
তার আগে সকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এটি বাংলাদেশে ম্যাক্রোঁ প্রথম ও কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় সফর। এর আগে ১৯৯০ সালের ২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিতেরো বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ১৯৯০ সালের শুরুর দিক থেকে দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে বর্তমানে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রান্স হচ্ছে ৫ম দেশ। ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন প্রকৌশল, জ্বালানি, মহাকাশ ও পানিসহ বিভিন্ন খাতে সম্পৃক্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন। ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের পর ম্যাক্রোঁ দুই দিনের সরকারি সফরে রবিবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। সেখানে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময় উভয় দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার ও ২১টি তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। বিমানবন্দর থেকে ম্যাক্রোঁ হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে যান। সেখানে তিনি তার সম্মানে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত একটি আনুষ্ঠানিক নৈশ্যভোজে অংশ নেন। পরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট স্থানীয় ব্যান্ড দল জলের গানের সংগীত আয়োজন উপভোগ করতে ধানমন্ডিতে অবস্থিত জলের গানের স্টুডিওতে যান। এ সময় তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। সফর শেষে গতকাল বিকাল পৌনে ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
ফ্রান্স থেকে ১০টি এয়ারবাস কেনার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে বাংলাদেশ : এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ফরাসি উড়োজাহাজ নির্মাণ সংস্থার তৈরি নতুন ১০টি এয়ারবাস কিনতে প্রতিশ্রæতি দিয়েছে ঢাকা। ইউরোপীয় মহাকাশ শিল্পে আস্থা রাখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। এ ৩৫০’ মডলের ১০টি এয়ারবাসের জন্য প্রতিশ্রæতিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফরাসি কর্মকর্তারা জানান, ‘এ ৩৫০’ মডলের ওয়াইডবডির উড়োজাহাজের জন্য চুক্তিটি চূড়ান্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সঙ্গে। ‘এয়ারবাস এ ৩৫০’ হলো একটি দূর পাল্লার, ওয়াইডবডির ও দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট জেট বিমান। যা এয়ারবাস কোম্পানি নির্মাণ করে থাকে। ৫১ বছরে বাংলাদেশের ২০টিরও বেশি বোয়িং সমৃদ্ধ উড়োজাহাজ রয়েছে। বেশিরভাগই ওয়াইডবডির বিমান। তবে এখনো কিছু ড্যাশ-৮ রয়েছে বহরে। এবার এয়ারবাস কিনতে আগ্রহী বাংলাদেশ সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়