ডেঙ্গু প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণ করবে বিএনপি

আগের সংবাদ

সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস : বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার > মিথ্যা মামলায় সমপরিমাণ সাজা > অজামিনযোগ্য ধারা ১৭, ১৯, ২৭, ৩৩

পরের সংবাদ

চাপ কমলেও সতর্ক থাকবে আ.লীগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি চাপ কাটিয়ে খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে আওয়ামী লীগে। সদ্য সমাপ্ত জি-২০ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ইস্যু ছাপিয়ে বাংলাদেশের কূটনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক সাফল্যের বিষয়টি আলোচনায় আসা, বিশ্ব নেতাদের বাংলাদেশ প্রস্তুতি, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির একতরফা দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংলাপ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ইস্যুর পরিবর্তে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর বিদেশিদের জোর দেয়ায় অনেকটাই চাপমুক্ত ক্ষমতাসীনরা। এ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। তবে বিএনপির আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা বর্জন নিয়ে সতর্ক রয়েছে দলটি। শীর্ষ নেতাদের মতে, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে। আবার নির্বাচন বর্জনের নামে ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত হতে পারে। পরিস্থিতি যা-ই হোক- মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির আওয়ামী লীগের নেতারা।

দলটির নেতাকর্মীদের মতে, আওয়ামী লীগের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বিএনপির এক দফা আন্দোলন। তবে গত বছর ডিসেম্বরেও বিএনপির আন্দোলনে যেরকম তেজীভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল, সেই তেজীভাব এখন আর নেই। বরং বিএনপির আন্দোলনে এখন ভাটার টান। বিএনপি তাদের আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। ফলে এই আন্দোলন দিয়ে আগামী দুই মাস সময়ের মধ্যে সরকার পতন ঘটানো যাবে- এমনটি বিএনপির নেতারাও বিশ্বাস করেন না। ফলে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা চিন্তার কোনো কারণ নেই।
দলটির দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা, আপত্তি এবং নজরদারি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়- সেই নির্বাচনে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে, এ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সুস্পষ্ট বার্তা ছিল। আর এরকম নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা রকম নিষেধাজ্ঞার হুমকিও ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত কূটনীতি দিয়ে এই বাধা অতিক্রম করেছেন বলেই এখন সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ব্রিকস এবং জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেয়ার পর এটি সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে- পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনটি আগে দেখতে চায়; নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হচ্ছে সেটি পর্যবেক্ষণ করতে চায়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, বিএনপির লাফালাফি বন্ধ হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে ১৫ বছর কেটে গেছে; আমেরিকার দিকে তাকিয়ে ছিল তারা। একটা সেলফি দেখেই চোখমুখ শুকিয়ে গেছে তাদের। রাতের ঘুম শেষ হয়ে গেল। এখন কে নিষেধাজ্ঞা দেবে? ওসব ভয় পায় না আওয়ামী লীগ।
এদিকে বাংলাদেশ নিয়ে আর মার্কিন চাপ নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরাও। তারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যখন একের পর এক নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল তৈরি করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওই সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিজের হাতে তোলা সেলফি সম্ভাবনা এবং বন্ধুত্বের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষকে যে আমেরিকান ‘জুজু’র ভয় দেখানোর জন্য রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি সব সময় উদ্গ্রীব থাকতো, জো বাইডেনের সেলফির পর এসব ভয় দেখিয়ে ফায়দা হাসিলের সুযোগ থাকল না।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, চীন সবাই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে এটি বিশ্ব নেতারা আস্থায় নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে অর্থনৈতিক ভিত, শাসনতন্ত্র তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ সোনার বাংলা গড়ার আগেই ঘাতকের নির্মম বুলেট তাকে হত্যা করে। সেই সোনার বাংলা গড়ার অসমাপ্ত কাজ করছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। এক সময় দারিদ্র্যের তলাবিহীন ঝুড়ি, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোনে মৃত্যু না হলে যে দেশটির খবর হতো না, দরিদ্র, ভিক্ষার থালা আর বিদেশিদের করুণায় যে দেশকে চলতে হতো সেই বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্ব সভায়। সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
সতর্ক আ.লীগ : ক্ষমতাসীনদের মতে, তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হলো আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এটি এখন সবচেয়ে বড় মাথাব্যথায় রূপ নিয়েছে। দল গোছাতেই আওয়ামী লীগকে এখন মনোযোগ দিতে হবে। জানা গেছে, আজ বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষে সংসদ সদস্যরা এলাকায় চলে যাবেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো, এলাকায় এলাকায় নৌকার উন্নয়ন ও সাফল্যগাথা তুলে ধরা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন তারা। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা যদি সজাগ না থাকি তাহলে কিন্তু মহাবিপদ। ষড়যন্ত্র চলছে, গভীর ষড়যন্ত্র। এর ডালপালা চারদিকে বেষ্টিত। নির্বাচন বানচাল করে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র চলছে এরশাদের কায়দায় কিংবা জিয়ার কায়দায় সরকার আনা যায় কিনা। তারা বাংলাদেশকে আবার পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশি বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়