সন্তান জন্ম দিলেন ভারসাম্যহীন ভবঘুরে নারী

আগের সংবাদ

নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন

পরের সংবাদ

ছাত্র সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী : স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাণ্ডারি হবে ছাত্রলীগ > বিএনপির উদ্দেশ্য ভোট নয়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ , ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নিজের নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে দেশে এসেছি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ সময় বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ইলেকশন তাদের লক্ষ্য নয়। তারা ভোট করতে আসে না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আবারো তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। গতকাল শুক্রবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এসে হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া শুরু করেছিল। ওরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস করে। মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। লুটেরা সন্ত্রাসে বিশ্বাসী, এরা মানুষের কল্যাণে বিশ্বাস করে না। তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে জিতেছিল পেয়েছিল ২৯ টিতে। পরে উপনির্বাচনে আরো একটি, মোট ৩০টি। তাদের উদ্দেশ্য এতিমের টাকা আত্মসাৎ, ১০ ট্রাক অস্ত্র, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা আর ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।
মিথ্যা অপবাদে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া এবং নিজের টাকায় তা বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য, সেটাও সরকারি, সেই সরকারি বেতনধারী। আইনে আছে ৬০ বছরের বেশি থাকতে পারবে না। তারপরও ১০ বছর বেআইনিভাবে থেকে আরো থাকতে হবে। এ নিয়ে একটি বড় দেশের চাপ আমাদের ওপর। এমডি না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে সেই লোক মামলাও করেছে; কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারেন না। মামলায় হেরে যায়। হিলারী ক্লিনটন বিশ্বব্যাংকের সভাপতিকে দিয়ে বন্ধ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে বিশ্বকে দেখিয়েছি এদেশের মানুষ পারে, তা করে দেখিয়েছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালি জাতিতে দাবায়ে রাখতে পারে নাই। দেখিয়েছি, চাইলে আমরা নিজের টাকায় করতে পারি। এরপরই এ দেশের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, তাদের জন্ম হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। তারা নাকি এখন গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে; জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে; সেই ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে তৈরি ওই বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশের কল্যাণ কখনো চাইতে পারে না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়।
সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এসব উন্নয়ন অনেকের ভালো লাগে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য দেশের আরো উন্নয়ন করা। অনেকের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। যাদের চোখ অন্ধ। আমি অত্যন্ত আধুনিক চক্ষু ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি, আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান; আমি নিজে সেখানে চোখ দেখাই। ১০ টাকার টিকেট কাটলে সেখানে চোখ দেখানো যায়। তাদের বলব, সেখানে গিয়ে চোখটা দেখিয়ে আসুক। আসলে তাদের মনের দরজাই অন্ধকার। আর পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী। সে জন্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন তারা দেখে না। হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া খেতে পারছে না বলে তাদের যত দুঃখ।
স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্বাধীনতার পরপরই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়। স্বাধীনতা যাতে নস্যাৎ হয়, সেই চেষ্টা করেছিল কিছু লোক। স্বাধীনতার পর তারা সময় দেয়নি। বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ছিলেন, তখন দেখেছি একশ্রেণি ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। পাটের গুদামে আগুন দেয়া, থানা লুট করা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে হত্যা করা। তারা যে চক্রান্ত স্বাধীনতার পরপর ?শুরু করেছিল, সেটা তো শেষ হয়ে যায়নি। বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিলেন। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, যাতে এই সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তার সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছিল। তিনি জানুয়ারিতে বাকশাল করলেন, দুর্ভাগ্য আগস্ট মাসে তাকে হত্যা করা হলো। হত্যা করে আবার সেই বাংলাদেশে মিলিটারি ডিকটেটর। এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে বন্দী করা হলো। আমরা জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে অনেক সংগঠন মানবাধিকারের কথা বলে। ৮১ সালে যখন আমি ফিরে এসেছি, তখন তো আমি মা-বাবা-ভাইবোন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। জিয়াউর রহমান খুনিদের ক্ষমতায় বসায়। প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি নিজের ভাগ্য নয়; বাবার স্বপ্নপূরণ ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করে দেশে এসেছি। মাঠের পর মাঠ হেঁটেছি। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছি। দেখতে চেয়েছি, এদেশের মানুষের কী অবস্থা? আমার বাবা-মার রক্ত নিয়ে তারা দেশের কী করেছে?
আওয়ামী লীগ সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে ছাত্রলীগ কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করবে- এমন প্রত্যাশা রেখে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশকে উন্নত করা। ৪১-এর স্মার্ট বাংলাদেশের কাণ্ডারি হবে ছাত্রলীগ, সেটাই আমি তোমাদের কাছে চাই। শুধু ’৪১ সালে থেমে থাকবে না, ডেল্টা প্ল্যানও করে দিয়েছি। কেউ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। এজন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকতে হবে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদের খাতায় নাম দেখতে চাইলে দেখব- ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে সব সংগ্রামে ছিল। এমনকি ৭৫-এর পর ছাত্রলীগই প্রথম প্রতিবাদ করে। বাংলাদেশের যে কোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ছিল, অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ২০০৭ সালে আমাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন ছাত্রলীগই মাঠে নেমেছিল। এ ছাত্রলীগই হচ্ছে সেই শক্তি, যারা একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। করোনায়ও ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদের সময় আমার নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাস্তে হাতে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস এবং আস্থা।
খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছিল, ছাত্রদল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর আমি ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম খাতা-কলম। বলেছিলাম, পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ না হলে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। অশিক্ষিত-মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে তার অগ্রযাত্রা হতে পারে না।
তিনি বলেন, যে কোনো প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সঠিক নেতৃত্ব দরকার। আশা করি ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের সেই নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবেন। যেখানে থাকবে, সেখানে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দেবে, সেটাই আমরা চাই। সরকারপ্রধান বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে ফিক্সড ইনকামের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। প্রত্যেকে উৎপাদনে নজর দিলে কারো কাছে হাত পাততে হবে না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে নিজের নগদ টাকায় কেনা খাদ্যশস্য আসতে দেয়নি। কৃত্রিম উপায়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। সেই কথা মাথায় রেখে আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব এবং উৎপাদন বাড়ানোর ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। পেনশন স্কিম নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। বিএনপির কিছু নেতা বলছেন এটা নাকি আমাদের নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করার জন্য। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে। নিজেরা কিছু করতে পারেনি। মানুষকে কিছু দিতে পারেনি। মানুষের ভালোর জন্য যখন আমরা কিছু করি, তখন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এই বিভ্রান্তিতে কেউ যেন কান না দেন। ছাত্রলীগকে বলব, নিজের এলাকায় গিয়ে এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
এর আগে বেলা ৩টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল। সমাবেশস্থলের প্রবেশ করতে নেতাকর্মীদের দীর্ঘ লাইন ছিল। সমাবেশ শুরুর আগেই সারাদেশ থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশের মঞ্চে আসেন। স্লোগানে স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করেন নেতাকর্মীরা। এরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। এরপর ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত এবং দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে মাতৃভূমি সাংস্কৃতিক সংসদ। এরপর জাতির পিতার ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। শোক জানানো হয় এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে। প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্রসমাবেশে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্মারক উপহার দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে স্মারকটি তুলে দেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের অভিভাবক শেখ হাসিনাকে ব্যাজ পরিয়ে দেন সংগঠনের চার নারী নেত্রী। এ সময় ছাত্রলীগের ম্যাগাজিন ‘মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উন্মুক্ত করা হয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ছাত্রলীগের পোস্টার।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ লাখো নেতাকর্মী অংশ নেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়