নাজিরাবাজারে দুই দোকানে আগুন শর্টসার্কিটে

আগের সংবাদ

তিস্তায় জল গড়ানোর আশা! জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে হাসিনা-মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করবে বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : পাখির চোখে তাকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত দেখা মিলবে এক নতুন পথের। আন্তর্জাতিক মানের উন্নত প্রযুক্তি এবং একেবারে ভিন্নধর্মী নির্মাণশৈলীর ব্যবহারে তৈরি মনোরম উড়াল সেতু দেখে ইট-কংক্রিটের জঞ্জাল রাজধানী ঢাকা নয়, বরং ইউরোপ কিংবা আমেরিকার মতো উন্নত দেশের একটা অনুভূতি জাগবে। আর এমন অনুভূতি জাগানিয়া স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যোগাযোগ খাতে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের পালকে যুক্ত হলো আরো একটি মাইলফলক। নানা সংকটে বারবার সময় বাড়িয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রথম ভাগ। রাজধানীর যানজট এড়িয়ে দূর পাল্লার যানবাহনগুলো যাতে দ্রুত সময়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে পারে- সেটিই দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লক্ষ্য। এতে রাজধানীর ভেতরে গাড়ির চাপ যেমন কমবে; তেমনি যানজটে নষ্ট হবে না কর্মঘণ্টা।
সাধারণ যানবাহন উড়ালসড়কে চলাচল করতে পারবে আজ রবিবার সকাল ছয়টা থেকে। আর তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত বাকি অংশ আগামী বছরের জুনে চালু করার লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়ালসড়ক। পুরো উড়ালসড়কে ৩১টি স্থান দিয়ে যানবাহন ওঠানামা (র‌্যাম্প) করার ব্যবস্থা থাকছে। র‌্যাম্পসহ উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। উড়ালসড়কে ১১টি টোল প্লাজা থাকছে। পুরো পথ চালু হলে তা যানবাহনে পাড়ি দিতে লাগবে ২০ মিনিট। কাওলা থেকে তেজগাঁও অংশ পাড়ি দিতে লাগবে ১২ মিনিট।
গতকাল শনিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর হযরত শাহজালাল

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের কাছে উড়াল সড়কের কাওলা প্রান্তের টোল প্লাজায় টোল দিয়ে ফলক উন্মোচন মঞ্চে ওঠেন। এরপর বোতাম চেপে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন এবং এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর বিকাল ৩টা ৪৪ মিনিটে দক্ষিণ কাওলা প্রান্ত থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর রওনা হয়। পরে বিকাল ৩টা ৫৮ মিনিটে ফার্মগেট প্রান্তে এসে পৌঁছায়। ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে পার হতে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরের লেগেছে মাত্র ১৪ মিনিট। এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম টোল দেন প্রধানমন্ত্রী। ৮০ টাকার টোল স্লাবে ২৫টি গাড়ির জন্য ২ হাজার টাকা টোল দেন তিনি। পরে আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে সুধী সমাবেশ অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশীয় উপকরণে অনুপম নির্মাণশৈলী : বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশেই এখন আন্তর্জাতিক মানের রড-সিমেন্টসহ নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপকরণ তৈরি হচ্ছে। তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগাপ্রকল্পগুলোতে এখন দেশে তৈরি রড-সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে বিশ্বমানের যেসব স্থাপনা, সুউচ্চ ভবন, সড়ক অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে এজন্য খুব একটা নির্মাণসামগ্রী আমদানি করতে হচ্ছে না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, মেট্রোরেল, ঢাকা-চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলীতে বঙ্গবন্ধু টানেলসহ চলমান মেগা প্রকল্পগুলোতে নির্মাণসামগ্রীর জোগান দিচ্ছে দেশীয় কারখানাগুলো। সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন জানান, তাদের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়েছে।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) সমন্বয়কারী মিসবাহিল মোকার রাবিন জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি আন্তর্জাতিক মান মেনে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এটি মেগা প্রকল্প, তাই এখানে আন্তর্জাতিক মানের রড-সিমেন্ট ব্যবহার হয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজের দায়িত্বে রয়েছে চীন ও থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান। তাদের দেশে এমন অনেক এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে। তারা সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করছে। প্রাথমিকভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির স্থায়িত্বকাল ১০০ বছর ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠানামা : ঢাকা উড়ালসড়কে ওঠানামার আরো পথ রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এই উড়ালসড়কে ওঠা যাবে এবং নামা যাবে। যানজট পেরিয়ে একবার উঠতে পারলে খুব কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে উড়ালসড়কের আরেক প্রান্তে। যারা ফার্মগেট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কাঁঠালবাগান, গ্রিনরোড অথবা শাহবাগ, সেগুনবাগিচা ও পুরান ঢাকা থেকে এসে উড়ালসড়কে উঠতে চান, তাদের যেতে হবে বিজয় সরণি ওভারপাস অথবা তেজগাঁও এলাকায়। বিজয় সরণি হয়ে র?্যাংগস ভবন ভেঙে যে ওভারপাসটি তৈরি হয়েছে, সেটিতে উঠে তেজগাঁওয়ে যাওয়ার আগেই উড়ালসড়কের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। তেজগাঁও থেকে বিজয় সরণির দিকে আসতে ওভারপাসে আরেকটি সংযোগ রয়েছে ওঠার জন্য। রাজধানীর দক্ষিণ, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাংশের মানুষের জন্য উড়াল সড়কে ওঠার এই পথটিই সহজ। তবে যারা বনানী যেতে পারবেন, তারা বনানী রেলস্টেশনের সামনে দিয়ে উড়ালসড়কে উঠতে পারবেন। উত্তর দিক থেকে এসে নামার জন্য সহজ পথ ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেটগামী যানবাহনের ইন্দিরা রোডে নামাই সুবিধাজনক।
মূলত. বিমানবন্দরের সামনে থেকে বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, কমলাপুর হয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এ পথে গাড়ি ওঠানামায় থাকছে ৩১টি র?্যাম্প। নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ সেতু বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ এবং র?্যাম্পে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলতে পারবে। এদিকে উড়াল সড়কের টোল নির্ধারণ করে কয়েকদিন আগে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেতু বিভাগ। এ টোল শুধু প্রথম ফেজের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ অংশ ব্যবহারের জন্য যানবাহনগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে টোল দিতে হবে। সর্বনি¤œ টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার বলেন, আমাদের যে অংশ রবিবার থেকে জনসাধারণের জন্য খুলছে- সেখানে আমরা ৬টি টোল প্লাজা স্থাপন করেছি। যা ওঠার সময়ই পথে পড়বে।
প্রসঙ্গত. সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের (পিপিপি) ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা সরকার ব্যয় করছে। বাকিটা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খরচ করছে। এর বাইরে জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও পরামর্শকদের পেছনে ব্যয়ে আলাদা একটি প্রকল্প আছে। এর পুরো অর্থই ব্যয় করছে সরকার। বর্তমানে এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে দুটি প্রকল্পে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে নেয়া প্রকল্পটির নির্মাণের চুক্তি হয় ২০১১ সালে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়