কাছেই ছিল বাবা-মা : হাতিরঝিলে ঝাঁপ দিয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা

আগের সংবাদ

উত্তাপ উদ্বেগ অনিশ্চয়তা : বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সতর্ক সরকার, পাল্টা কর্মসূচি যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের

পরের সংবাদ

নুরের কেএনএফ কানেকশন! বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনটির সঙ্গে নুরুল হক নুরের সংযোগ খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা

প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) যোগাযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। কেন বা কী উদ্দেশে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটির সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকতে পারেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও কেএনএফের প্রধান নাথান বম রাজধানীর বাসাবো এলাকায় থাকাকালীন সময় নুরের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ বা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের বৈঠক হয়েছিল কিনা- তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ডাকসুর সাবেক এই ভিপির বিরুদ্ধে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। যা নিষ্পত্তি হতে না হতেই কেএনএফ কানেকশনের অভিযোগ ওঠে। মোসাদের কাছ থেকে আসলেই তিনি অর্থ পেয়েছিলেন কিনা এবং পেলে তা তিনি কেএনএফের সঙ্গে লেনদেন করেছেন কিনা- সে বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে। এ তদন্ত কাজে তার সংগঠনের অনেকের সঙ্গেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যোগাযোগ রাখছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যেই গতকাল সোমবার র‌্যাবের মুখপাত্র জানিয়েছেন নুরের কেএনএফ কানেকশনের বিষয়ে তদন্ত করেছে গোয়েন্দারা।
সম্প্রতি গণঅধিকার পরিষদের নেতৃত্ব নিয়ে দ্ব›দ্ব শুরু হলে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে নুরের বৈঠক ও টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। এর সঙ্গে কেএনএফকে অস্ত্র সরবরাহের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন স্ক্রিনশট সামাজিকমাধ্যমে ফাঁস নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ করা হয়। তাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে ফাঁস হওয়া নুরের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের বরাত দিয়ে বলা হয়, অজ্ঞাত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে নুর বলেন, ভাই, আপনি চিন্তা করবেন না, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সরকার আর থাকছে না। ভাই, এক লাখ কার্তুজের গুলি পাঠিয়েছি। তবে যে ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন নুর, হোয়াটসঅ্যাপের ‘ডিসঅ্যাপিয়ারিং ম্যাসেজেস’ চালু থাকার কারণে তার বক্তব্য উধাও হয়ে যায়। এ ছাড়াও অপর একটি হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে বান্দরবানের পাহাড়ে নতুন আতঙ্ক কুকি-চিনের পুঁতে রাখা বোমা! শিরোনামের নুর একটি নিউজ শেয়ার দিয়ে বলেন, ভাই, আমি কি অস্ত্র পাঠিয়েছি, দেখেন আপনি…। ভাই ঠিক আছে? ভাই দেখেছেন?’ অপর পাশ থেকে তখন জবাব এসেছে, ‘ দেখছি’। এসব নিয়ে যোগাযোগ মাধ্যম সরব থাকার মধ্যেই কেএনএফের বিভিন্ন পেজে নুরের বক্তব্য পোস্ট করতে দেখা যায়। এই পেজগুলো ভেরিফাইড কিনা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও গতকাল রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন কেএনএফ শীর্ষ নেতা নাথান বমের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরের ‘যোগাযোগ’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান। এছাড়াও কেএনএফের ভেরিফায়েড পেজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে (নুর) নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। সেখানে নুরের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, কেএনএফের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আমরা বিভিন্ন আলামত দেখেছি। তার সঙ্গে যোগাযোগ বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাচাইয়ের কাজ করছেন আমাদের গোয়েন্দারা। যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে এ বিষয়ে বলা যাবে। বাহ্যিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কেএনএফের ভেরিফায়েড পেজে যেহেতু এ বিষয়ে মন্তব্য করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে যোগাযোগ থাকতেই পারে। এ বিষয়ে নুর বলেন, এগুলো একবারে আজগুবি কথাবার্তা। এ ধরনের কোনো যোগাযোগ আমার নেই। এসব একেবারে অসত্য, উদ্ভট ও বানোয়াট কথাবার্তা।
জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদসহ ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে গতকাল সোমবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে র‌্যাব মুখপাত্র মঈন জানান, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়াকে সবচেয়ে শক্তিশালী জঙ্গি দল বানাতে চেয়েছিলেন সংগঠনটির আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। বাইরে হামলার কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও দেশের মধ্যে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তাদের টার্গেট ছিল কিলিং মিশন। এজন্য সমাজের মুক্ত মনা প্রগতীশিল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টার্গেট বানানোর পরিকল্পনা করছিল তারা। এছাড়াও আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা জঙ্গি মেজর জিয়ার সঙ্গে জঙ্গি দলটির আমির মাহমুদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল। গত বছর কিশোরগঞ্জে একটি সভায় আইটি ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করা হয়। এ জন্য আনিসুর ১৫ লাখ টাকাও দেন আনসার আল ইসলামকে। এছাড়াও অনিসুর এখন মিজোরামে থাকা কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে অবহিত করাসহ প্রয়োজনীয় সমন্বয় সম্পাদনা করে আসছিলেন।

যেভাবে গ্রেপ্তার জঙ্গি : তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, স¤প্রতি র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসহ মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকায় একটি বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে গত রবিবার ভোর রাতে ৩টার দিকে সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে আমিরসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার অপর ২ সহযোগী হলেন- কাজী সিরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ (৩৪) ও মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুল ওরফে জাম্বুলি (২৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদি বই ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তার আনিসুর রহমান মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের একটি সিএনজি রিফুয়েলিং পাম্পে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি ইতোপূর্বে হুজির সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কুমিল্লার একটি রেস্টুরেন্টে আনসার আল ইসলামের রক্সি ও ফেলানীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে তারা যাত্রাবাড়ীতে একটি বৈঠকে নতুন একটি সংগঠন তৈরি ও বিস্তারের লক্ষ্যে শারক্বীয়ার কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকেই আনিসুর কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। ২০১৬ সালের পর বিভিন্ন সময় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তিনি। ২০২০ সালে বান্দরবানের গহীন এলাকায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশে যান। সেখানে আসলাম নামক এক ব্যক্তির কাছে প্রায় ১ মাস সামরিক বিভিন্ন কৌশল, অস্ত্র চালনা, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নেন। এক পর্যায়ে আনিসুর কুমিল্লার প্রতাপপুরে তার বাড়িসহ জমি এক ব্যক্তির কাছে ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। জমি বিক্রির কিছু টাকা সংগঠনে দিয়ে অবশিষ্ট টাকায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে ৩ বিঘা জমি কিনেন। ওই বছরই সেখানে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস ও পোল্ট্রি ফার্ম, চাষাবাদ, গবাদি পশুর খামার পরিচালনা শুরু করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আগে আমির ছিলেন মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি। গত ২০২১ সালে রক্সি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হলে সংগঠনের অন্যান্য সূরা সদস্য ও সদস্যদের সিদ্ধান্তে মাহমুদকে আমির হিসেবে নির্বাচন করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানের সময় মাহমুদের সঙ্গে কেএনএফ সদস্যদের পরিচয় হয় ও দলটির প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে গত ২০২১ সালে কেএনএফের ছত্রছায়ায় বান্দরবানের গহীন পাহাড়ে শারক্বীয়ার সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ বিষয়ে তাদের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী কেএনএফ ২০২৩ সাল পর্যন্ত সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেবে। এ জন্য প্রতিমাসে কেএনএফ সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও খাবার খরচ বাবদ ৩-৪ লাখ টাকা দেয়া হতো। আমির আনিসুরের নির্দেশনায় দেশে ও দেশের বাইরে থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হতো। সংগ্রহকৃত অর্থ দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের খরচ ও সারাদেশে অন্যান্য সাংগঠনিক কাজের ব্যয় মেটানো হতো। এছাড়াও, তার নির্দেশনায় কেএনএফ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরণের ভারি অস্ত্র ও বিদেশি অগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয় যা প্রশিক্ষণের উদ্দেশে ব্যবহৃত হচ্ছিল। আমির মাহমুদের নির্দেশনায় কেএনএফ প্রধান নাথান বমকে রাজধানীর বাসাবো এলাকায় সংগঠনের অর্থায়নে একটি বাসা ভাড়া করে দেয়া হয়; যেখানে নাথাম বম পরিবারসহ মাঝে মধ্যে অবস্থান করতেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা জঙ্গি মেজর জিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েকবার আমির মাহমুদের দেখা হয়েছিল। গত বছরও কিশোরগঞ্জে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে একটি মিটিংয়ে আমির মাহমুদের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী শারক্বীয়ার সদস্যদের আনসার আল ইসলাম আইটি ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে। বিনিময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের শারক্বীয়ার পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করবে বলে জানা যায়। পাহাড়ে অভিযান শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান আনিসুর। সংগঠনকে পুনরায় সংগঠিত করার জন্য তিনি পলায়নকৃত সূরা সদস্য ও অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে; ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। তার মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের ভাড়া বাসায় অনেকেই আসা-যাওয়া করত। নিরাপত্তার জন্য তিনি সবসময় তার সঙ্গে দুজন সশস্ত্র দেহরক্ষী রাখতেন। গ্রেপ্তারকৃত অপর দুজন সেই দেহরক্ষী হিসেবেই কাজ করছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়