রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

আগের সংবাদ

সিসিক মেয়রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : মেয়র নয়, সেবক হিসেবে কাজ কর

পরের সংবাদ

লোকসানে পড়ার শঙ্কায় খামারিরা : গরু আসছে অবৈধ পথে

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও কুরবানির আগে একাধিক চোরাচালন চক্র সীমান্ত পথে গরু এনে থাকে। এবারো ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে দেশে গরু ঢুকছে। চোরাচালানিদের সঙ্গে গরু ব্যাপারিদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পার করার পর ব্যাপারি ও দালালদের মাধ্যমে গরু একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলে যাচ্ছে। আনা হচ্ছে কিছুৃ মহিষও। এতে দেশের খামারীরা লোকসানের মুখে পড়তে পারেন। অবশ্য সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি ও কোষ্টগার্ড ভারত এবং মিয়ানমার থেকে গরু ঢোকার বিষয়টি অভিযোগ

অস্বীকার করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ একাধিক উপজেলায় বিপুলসংখ্যক মিয়ানমারের পশু ঢুকেছে। এসব পশুর অধিকাংশ রাখা হচ্ছে রামুর গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন এবং চকরিয়ার বিভিন্ন স্থানে। এসব পশু বেচাকেনা চলছে প্রকাশ্যে। প্রতিটি গরু ও মহিষ মিয়ানমার থেকে ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। গত ৮ জুন নাইক্ষ?্যংছড়ি ১১ বিজিবির আলাদা অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের ৪০টি গরু জব্দ করে।
বান্দারবানের লামা সীমান্তের একাধিক বাসিন্দা দাবি করেছেন, মিয়ানমার থেকে গরু আসার কারণে দেশীয় পশুর চাহিদা ও দাম কমে গেছে। তাই এক থেকে দেড় বছর পশু লালন পালনের পর বিক্রি করলে লাভের মুখ দেখতে পারছেন না খামারিরা। অভিযোগ আছে, কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ছড়ারকুলে আছে অবৈধ গরুর হাট। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে কক্সবাজারের রামুর ঈদগড় হয়ে গত কয়েক মাসে পাচার হয়েছে ১০ হাজার গরু। নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তের ফুলতলী, ভাল্লুকখাইয়া, জারুলিয়াছড়ি, জামছড়ি, দোছড়িসহ ৮ পয়েন্ট দিয়ে গরু এনে গর্জনিয়া বাজারের আশপাশে বা কচ্ছপিয়া ইউপির বিভিন্ন স্থানে রেখে টাকার বিনিময়ে ইজারাদারের কাছ থেকে রসিদ নিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র।
কুমিল্লার বড় এলাকাজুড়ে ভারতীয় সীমান্ত। এছাড়া পাশের জেলাগুলোর সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে এবার অবৈধভাবে পশু ঢুকছে। কুমিল্লা অঞ্চলে প্রতিদিন ৩০০-৩৫০টি গরু হাতবদল হচ্ছে।
সিলেটের সীমান্ত দিয়েও প্রতিদিন আসছে ভারত থেকে গরু। কোম্পানীগঞ্জ সীমানার ১২৬০ নম্বর পিলারসংলগ্ন হয়ে দমদমা নালা দিয়ে গরু ঢুকছে। পরে সেগুলো গোয়াইনঘাট এলাকার ভিতরগুল ও বিছনাকান্দি হয়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে যায়। ভারতের খাসিয়া নাগরিকরা দিনে গরুগুলো নির্জন স্থানে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে এনে রাখে। রাতের আঁধারে সেগুলো কাঁটাতারের নিচ দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকানো হয়। এছাড়া সিলেটের জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট সীমান্ত দিয়েও পশু ঢুকছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে ভারত সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর পাশে বাগানবাজারে। একদিকে ভারত, অন্যদিকে খাগড়াছড়ির রামগড়ের মাঝে এ পশুর হাট। সপ্তাহের শুক্র ও রবিবার সকাল থেকে হাটে কেনাবেচা শুরু হয়। ভারত থেকে গরু এসে এ বাজার ভরে গেছে। খুব কম দামে এখানে গরু বিক্রি হওয়ায় সারাদেশ থেকে ব্যাপারি এ বাজারে ছুটে যাচ্ছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শত শত ভারতীয় গরু চোরাপথে বাংলাদেশে ঢুকছে। সম্প্রতি ভারতের ১০১ ফুল কাবাডাবরী ও বাংলাদেশের আঙ্গরপোতা সীমান্ত দিয়ে গরু পারাপারের সময় বিএসএফের গুলিতে গৌতম বর্মণ নামের ভারতীয় যুবক মারা যান।
একাধিক পশুর হাটের ইজারাদার জানিয়েছেন, দেশে বলদ গরুর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি না হওয়ায় বদল হাটে কম দেখা যায়। এর মধ্যে যেসব দেখা যাচ্ছে তার সবই অবৈধভাবে আসা। এমনকি, দেশের নামকরা এগ্রোফার্মে এবার বলদ দেখা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, অবৈধভাবে দেশে পশু আসলে দেশের টাকা বাইরে চলে যায়। খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সীমান্তপথে অবৈধভাবে গরু আসার সুযোগ নেই। সীমান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এ ব্যাপারে সবসময় সতর্ক রয়েছে। তিনি জানান, দেশে এবারো চাহিদার চেয়ে ২১ লাখ ৪১ হাজার বেশি পশু প্রস্তুত আছে। তাই ভারত বা মিয়ানমারের গরু ঢুকলে দেশের বাজার নষ্ট হবে।
বাংলাদেশ গবাদি পশু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, কুরবানির জন্য দেশের গরু যথেষ্ট। গ্রামে ও খামারে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। খাবারের দাম বেশি হওয়ায় সবাই নায্য দাম চাচ্ছে। যদি বাইরে থেকে গরু-মহিষ আসে তবে দেশে যারা পালন করেছেন তারা লোকসানের সম্মুখীন হবেন। আগামিতে তারা গরু পালনে নিরুৎসাহিত হবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়