রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

আগের সংবাদ

সিসিক মেয়রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : মেয়র নয়, সেবক হিসেবে কাজ কর

পরের সংবাদ

বাজবল-অজিবলের বিতর্ক জমে উঠেছে

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে এজবাস্টনে নিজেদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার ধরনকেই তাদের হারের কারণ হিসেবে দেখছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটাররা। দর্শকদের চার ছক্কা হাঁকিয়ে বিনোদন দেয়ার চেয়ে দলের জয়কে বড় করে দেখছেন মাইকেল ভন, জিওফ বয়কটসহ অনেক কিংবদন্তিই।
গত বছর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের টেস্ট কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দলটির খেলার ধরনে বিশেষ পরিবর্তন আসে। ব্যাটিং-ফিল্ডিং ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আক্রমণাত্মক ও অতি ইতিবাচক মানসিকতার এই ক্রিকেটকে বলা হচ্ছে ‘বাজবল’। অ্যাশেজের আগে এই ধারায় ১৩টি টেস্ট খেলে ১১টিতে জয়ও পায় স্টোকস বাহিনী। তবে এজবাস্টনে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ের পরও ফলটা পক্ষে যায়নি ইংল্যান্ডের। শেষ দিনের শেষ ঘণ্টায় রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির ম্যাচে প্যাট কামিন্সদের কাছে ২ উইকেটে হেরে**যায় তারা। ম্যাচে হারলেও নিজেদের আগ্রাসী বাজবল ক্রিকেট অব্যাহত রাখার পক্ষে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক জো রুট। জয়ের প্রয়োজনে আগ্রাসী মনোভাব আরো বাড়িয়ে দেয়ার কথাও জানালেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে নিজের যুগে ফিরে যেতে পারলে বর্তমান দলনেতা বেন স্টোকসের আগ্রাসী ক্রিকেটকে বেছে নেয়ার কথাও বললেন রুট। এদিকে জয়ের এত কাছে গিয়ে পরাজয়ে হতাশ ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। জয়-পরাজয় একপাশে রেখে আরো একবার নিজেদের এই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট উপহার দিতে পেরে আনন্দিত স্টোকস বলেন, ‘টেস্টটাকে পঞ্চম দিনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থায় নিয়ে যেতে পেরে আমরা গর্বিত। অনেক ধরনের আবেগের মধ্য দিয়ে গেছি আমরা, অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েও। আমরা দর্শকদের খেলা দেখার জন্য সিট আঁকড়ে বসিয়ে রাখতে চাই। আশা করি, অ্যাশেজে পরের চারটা টেস্টের জন্য আমরা কিছু মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পেরেছি।’ তবে অ্যাশেজ জয়ের জন্য নিজেদের সর্বোচ্চটা বের করে আনার প্রতিশ্রæতিও দেন স্টোকস।
ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্টে হারের পরেই সিরিজ শুরুর আগে বাজবল নিয়ে যে আওয়াজ উঠেছিল, সেটার সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে যায় ব্রিটিশ গণমাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়ানরা নিজেদের প্রথাগত ক্রিকেট খেলে ম্যাচ জিতে নিয়েছে, কিন্তু বাজবল খেলে ইংল্যান্ড পারেনি, সেটার নিন্দা করতে বাদ যায়নি কেউই। এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের হারের কারণ হিসেবে অনেক কারণই আলোচনায় উঠে আসছে। এর মধ্যে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৭৮ ওভার ব্যাট করে চারশ রান তোলার আগেই ইনিংস ঘোষণা করে দেয়াটা স্টোকসের ভুল ছিল বলে বেশির ভাগেরই অভিমত। তবে ডেভিড লয়েড শুধু বাজবলকে দোষ দিতে রাজি নন। তিনি কলামে লিখেছেন, ‘ইংল্যান্ডের হারের কারণ মূলত তিনটি। এজবাস্টনের পিচ বোলারদের জন্য সহায়ক ছিল না, মঈন আলীর আঙুলে চোট এবং ইংল্যান্ডের জলদি ইনিংস ঘোষণা, যার কারণে অন্তত ৪০টি রান কম হয়েছে।’
আরেক সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন অবশ্য প্রথম ইনিংস আগেভাগে ঘোষণা করে দেয়া কিংবা বোলারদের যথেষ্ট জ্বলে উঠতে না পারা নয়, ভনের চোখে ইংল্যান্ডের খুঁতটা ছিল ফিল্ডিংয়ে। ম্যাচে ৬টা ক্যাচ মিস করে ইংল্যান্ড। ম্যাচের একদম শেষদিকে লায়নের একটি কঠিন ক্যাচ হাতে নিয়েও ফেলে দেন স্টোকস। তা না হলে জয় পাওয়ার সুযোগ বেড়ে যেত ইংল্যান্ডেরই।
এদিকে জিওফ বয়কট বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড নিজেদের বাজবলে সঁপে দিয়েছে। তাদের খেলা দেখে মনে হচ্ছে জয়ের চেয়ে আনন্দদায়ক খেলাটাকেই ওরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা বাউন্ডারির আনন্দের বদলে সবচেয়ে বেশি চায় অ্যাশেজে জয়। দ্রুত রান তোলা, প্রচুর পরিমাণে বড় বড় চার-ছয় মারাটা চমৎকার ব্যাপার। আর সেটা তখনই দারুণ ব্যাপার, যখন অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর দিক থেকে ইংল্যান্ড চোখ সরাবে না। সিরিজ শেষে অস্ট্রেলিয়া যদি অ্যাশেজ নিয়ে দেশে ফিরে যায়, তাহলে খেলা দেখে যত আনন্দই পাই না কেন, তা আমাদের পীড়াই দেবে।’
সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন অবশ্য ইংল্যান্ডের ভুল নিয়ে সমালোচনায় আগ্রহী নন। অ্যাশেজে ধারাভাষ্যকার হিসেবে নিযুক্ত নাসের বলেছেন, ‘ভিন্নধারার টেস্ট ক্রিকেটের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দেয়া ও খেলাকে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টায় ইংল্যান্ড যা করেছে, তার জন্য আমি সমালোচনার পথে হাঁটতে রাজি নই। কিছু একটা প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ার পরই তা ছুড়ে ফেলা যায় না।’ টেলিগ্রাফের প্রধান ক্রিকেট লেখক নিক হল্ট অবশ্য ২০০৫ পরবর্তী উদাহরণ টেনে এনেছেন। একই সঙ্গে স্টোকস-রুটদের সামর্থ্যওে আস্থা রেখে তিনি বলেন, ‘২০০৫ সালের পর আর কোনো অ্যাশেজে প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়া দল ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তবে এটাও সত্যি যে, সেই দলগুলোর মধ্যে তুলনা করলে তাদের মধ্যে এই বাজবলের ইংল্যান্ড দলই ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য রাখে।’
এজবাস্টনে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কামিন্স বলেছেন, ‘আমি তো ভালো সুযোগই দেখছিলাম। উইকেটে তো ভয়ংকর কিছু ছিল না। আমার মনে হয়েছিল, ম্যাচ আমাদের হাতের মুঠোতেই আছে।’ জয়টা কামিন্স আর লায়নের অবিচ্ছিন্ন ৫৫ রানের জুটিতে হলেও অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে রেখেছেন আসলে উসমান খাজাই। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে খাজা করেছেন ৬৫ রান। অধিনায়ক কামিন্স খাজার ধারাবাহিকতায় মুগ্ধ হয়ে বলেন, ‘দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছে খাজা। নিজের মতো খেলেছে। কয়েক বছর ধরেই সে অসাধারণ পারফর্ম করছে। আসলে সবাই নিজেদের ভূমিকাটা পালনের চেষ্টা করেছে।’
অ্যাশেজে বাজবল জিতবে নাকি অস্ট্রেলিয়ার প্রথাগত ক্রিকেট অজিবল তা জানা যাবে সিরিজ শেষেই। লর্ডসে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২৮ জুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়