রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

আগের সংবাদ

সিসিক মেয়রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : মেয়র নয়, সেবক হিসেবে কাজ কর

পরের সংবাদ

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা : অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই পুড়ে মৃত্যু সাতজনের

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. রমজান সিকদার, ভাঙ্গা (ফরিদপুর) থেকে : ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ে ধাক্কার পর আগুনের ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় একটি ফ্লাইওভারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই আগুনে পুড়ে মারা যান একই পরিবারের ৭ জন। গাড়িচালককে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর ভাঙ্গা ও ফরিদপুর হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি।

মৃত্যুর আগে তিনি বলে গেছেন, বেপরোয়া গতিতে আঁকাবাঁকাভাবে যাওয়া ৪-৫টি মোটরসাইকেলের কারণে তিনি অ্যাম্বুলেন্সের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মোছাম্মৎ বিউটি বেগম (৩২), তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান রিফাত (১১), শাশুড়ি তাসলিমা বেগম (৫০), ছোট বোন বোয়ালমারীর উপজেলার ফেলাননগর গ্রামের নাসরিন বেগম (৩৮), বড় বোনের ছেলে মো. আরিফ হোসেন (১৩), ছোট ছেলে মো. হাসিব হোসেন (৮), মেয়ে মোছা. রাফসানা খাতুন (২২) এবং গাড়িচালক সদর উপজেলার মৃণাল মালো (২৮)।
বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম ফ্লাইওভারে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ে ধাক্কা খায়। এ সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অ্যাম্বুলেন্সের চারদিক থেকে আগুন ধরে যায়। চালক মৃদুল মালো লাফ দিয়ে বের হতে পারলেও ভেতরে থাকা সবাই শত শত মানুষের চোখের সামনেই আগুনে পুড়তে থাকেন। খবর পেয়ে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থেকে ৭ জনের কঙ্কাল বের করে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৈমুর আলম জানান, আগুনের তীব্রতার কারণে স্থানীয় জনতা অ্যাম্বুলেন্সটির কাছে যেতে পারেনি। পরে ফায়ার সার্ভিস, ভাঙ্গা থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনতা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অ্যাম্বুলেন্স থেকে মোট ৭ জনের পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল বের করা হয়। গুরুতর আহত চালক মৃদুলকে উদ্ধার করে প্রথমে ভাঙ্গা ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় চালক মৃদুলের সঙ্গে কথা বলেছেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল। চালকের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা থেকে ভাড়া নিয়ে গত শুক্রবার ঢাকায় এসেছিলেন মৃদুল মালো। গতকাল ফেরার সময় ঢাকার কদমতলী থেকে তিনি ওই যাত্রীদের অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছিলেন। এরপর রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে যাত্রীদের নিয়ে ফরিদপুরে ফিরছিলেন। তাদের মধ্যে এক নারী, তার দুই সন্তান ও বৃদ্ধ মাসহ আত্মীয়স্বজনেরা ছিলেন।
দুর্ঘটনার বিষয়ে চালক মৃদুল মালো পুলিশকে জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতিতে আঁকাবাঁকাভাবে ৪-৫টি মোটরসাইকেল আসতে দেখে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সেটি এক্সপ্রেসওয়ের সড়ক বিভাজকের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তবে নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণেই, নাকি পেছন থেকে অন্য কোনো গাড়ির ধাক্কায় রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।
দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার, মাদারীপুর জেলার হাইওয়ে পুলিশ সুপার ও ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফনের জন্য প্রত্যেককে ২০ হাজার করে টাকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। নিহতদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭ জনের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর প্রায় ২ ঘণ্টা ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় সার্ভিস লেন দিয়ে শত শত গাড়ির যানজট নিরসন করা হয়।
তদন্ত কমিটি গঠন : ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিপুলচন্দ্র দের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়