শাহজালালে ১২ কোটি টাকার কোকেনসহ ভারতীয় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

খুলনায় খালেকের হ্যাটট্রিক, বরিশালে খোকন : খুলনায় শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম > তালুকদার আবদুল খালেক ১,৫৪,৮২৫ ভোট, আবদুল আউয়াল ৬০,০৫৪ ভোট

পরের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক : রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আরো দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে সমর্থন ও সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। অপরদিকে বৈঠকে অংশ নেয়া জাতিসংঘের প্রতিনিধি বলেছেন, বছর শেষে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা আরো কমে যাবে। তবে তা সত্ত্বেও পাইলট প্রকল্পের অধীনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ থেকে বাংলাদেশে ফিরছে না বলে ওই বৈঠকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মিয়ানমারের নাগরিকদের মানবিক সহায়তায় সাড়াদান সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের এক সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
বৈঠকে অংশ নেয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- একমাত্র প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে। এটি ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তাও কমানো যাবে না। বাংলাদেশের তরফ থেকে এমন প্রস্তাব পেয়ে বৈঠকে অংশ নেয়া জাতিসংঘের প্রতিনিধি বলেন, সংস্থাটি মানবিক সহায়তা খাতে এখন পর্যন্ত ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ঘাটতিতে রয়েছে। যদি এমনধারা চলতে থাকে তাহলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ রোহিঙ্গাদের

খাদ্য সহায়তা আরো কমানো হবে। প্রসঙ্গত, গত ১ জুন থেকে রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি মাসিক খাদ্য সহায়তা ১০ থেকে কমিয়ে ৮ ডলার করা হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেয়া আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে উপসাগরীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ওপরই জোর দেন। তিনি বলেন, যারা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে কাজ করছে তারা ঠিক করছে না। তবে কারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধার সৃষ্টি করেছে তাদের নাম প্রকাশ করেননি বৈঠকে অংশ নেয়া চীনের প্রতিনিধি।
বৈঠকে অংশ নেয়া আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, রবিবারের বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বেশ কিছু দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে সৌদি আরব, ইরান, ফিলিস্তিন, তুরস্ক, কাতার, কুয়েতের রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গা সংকটে আরো কী কী সহায়তা করা যায় তা নিজ নিজ দেশের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশের যে কোনো উদ্যোগে পাশে থেকে সমর্থন ও সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিকে, বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, তুরস্ক, কাতার, কুয়েত, ওমান, ইরাক, ইরান ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশন এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মিশন প্রধানরা এ সভায় যোগ দেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংকটের একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী প্রত্যাবাসনের মধ্যে নিহিত, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করেন। এ সময় তোফাজ্জল হোসেন মিয়া স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, রোহিঙ্গাদের স্থানীয় অন্তর্ভুক্তির কোনোরূপ সুযোগ নেই।
রোহিঙ্গাদের জন্য ভাষানচরে স¤প্রসারিত সাময়িক শেল্টার তৈরিতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করেন মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। বৈঠকে সৌদি আরব, ইরান, প্যালেস্টাইন, তুরস্ক, কাতার, কুয়েত ও চীনের রাষ্ট্রদূতরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের যে কোনো উদ্যোগে পাশে থেকে সমর্থন ও সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। জিসিসি প্লাস ফোরামের এ সভায় বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা দেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক ও খাদ্য সহায়তায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ সাহায্যকারী সংগঠনগুলোর মাথাপিছু বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি তুলে ধরে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও ডব্লিউএফপির প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট সকলকে সহায়তার আহ্বান জানান।
এর আগে রবিবার সকালে নিজ মন্ত্রণালয়ে পাইলট প্রকল্পের অধীনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করার কোনো কারণ দেখছেন না বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে পাঠানো হবে। তারা যদি সেখানে অস্বস্তিবোধ করে আবার ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি একটি ট্রায়াল প্রক্রিয়া। বড় ধরনের কোনো প্রত্যাবাসন নয়। এটি যদি সফল না হয়, তাহলে আমরা তাদের ফেরত নিয়ে আসতে পারব। সেক্ষেত্রে এটির বিরুদ্ধে যাওয়ার আমরা কোনো যুক্তি দেখি না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন। এটি দেখার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে যে প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেটি বলবত আছে। তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সার্টিফিকেট নিয়ে রোহিঙ্গাদের যেতে হবে এ ধরনের কোনো চুক্তি করা হয়নি। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা সম্পর্কে তাদের জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মিয়ানমারের পরিস্থিতিবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রæসের বিবৃতি প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, তিনি মিয়ানমারবিষয়ক র‌্যাপোর্টিয়ার। তার কার্যক্রম মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তিনি কক্সবাজার ঘুরে গেছেন। কিন্তু যে বিষয়গুলো তিনি বলেছেন এবং যে ভাষায় বলেছেন, এটি আমাদের প্রচেষ্টাকে খাটো করে এবং অসম্মান প্রকাশ করে। আমরা বিষয়টি জাতিসংঘকে জানাব। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের চার রোহিঙ্গা পরিবারের খাবার সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়কে দুঃখজনক হিসেবে আখ্যা দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ থেকে খাবার পায়নি। জাতিসংঘের সদর দপ্তর এটি নজরে নেবে। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা যেন না ঘটে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়