সংসদে বিল উত্থাপন : আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

আগের সংবাদ

খুলনা-বরিশালে ‘উন্নয়ন’ ম্যাজিক : খুলনার উন্নয়ন ভাবনা ও ব্যক্তি ইমেজেই খালেকের বাজিমাত

পরের সংবাদ

খুলনায় খালেকের হ্যাটট্রিক, বরিশালে খোকন : খুলনায় শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম > তালুকদার আবদুল খালেক ১,৫৪,৮২৫ ভোট, আবদুল আউয়াল ৬০,০৫৪ ভোট

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খুলনায় শান্তিপূর্ণ ও বরিশালে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন। খুলনায় তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা মার্কা) প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। বরিশালে নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবত)। ভোটের পরিবেশ ও সবশেষ ফলাফল নিয়ে দুই সিটি থেকে আমাদের পৃথক দুটি প্রতিবেদন।

দেব দুলাল মিত্র, বাবুল আকতার ও বাকী তালুকদার, খুলনা থেকে : তৃতীয়বারের মতো খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রের ফলাফলে তিনি বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল সোমবার খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন।
ঘোষিত ফলাফলে খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৮৯ কেন্দ্রের সবগুলোর ফলাফলে তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা মার্কার প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। এছাড়া টেবিল ঘড়ি মার্কার নিয়ে এস এম শফিকুর রহমান পেয়েছেন ১৭ হাজার ২১৮ ভোট, গোলাপ ফুল মার্কা নিয়ে এস এম সাব্বির হোসেন পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৬ ভোট, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে শফিকুল ইসলাম মধু পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৪ ভোট।
নির্বাচিত হওয়ার পর শিল্পকলা একাডেমির ঘোষণা মঞ্চে উপস্থিত নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, আমি খুলনাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই আমাকে আবার নির্বাচিত করার জন্য। জনগণ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। আমি খুলনাবাসীর প্রত্যাশা পূরণে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে কাজ করে যাবে। আমার দায়িত্বকালে খুলনাকে একটি আধুনিক ও স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।
খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ শুরু হয় গতকাল সকাল ৮টায়। শেষ হয় বিকাল ৪টায়। সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। বেলা বাড়ার পর দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি বাড়লেও ২টার পরে আবার উপস্থিতি কমে যায়।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টা পর থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। সব ভোটকেন্দ্রে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য মহিলাদের দীর্ঘ লাইন ছিল।
নগরীর সব ভোটকেন্দ্রেই নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া গেছে। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রে লাঙ্গল এবং হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীদের এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট ও প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে না আসলে প্রিজাইডিং অফিসারের কিছু করার নেই। সকালে যেসব এজেন্ট এসে কেন্দ্রে পৌঁছেছেন তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটের মাঠ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সব কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। তবে সব কেন্দ্রেই মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিল বেশি। অনেক ভোট কেন্দ্রে মহিলাদের দীর্ঘ লাইন ধরে ভোট দিতে দেখা গেছে। সোনাডাঙ্গা এলাকার মেহমানে আলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মহিলাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ২ হাজার ৪০১ ভোটের মধ্যে সকাল ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ৩৩০টি ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানান এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শেখ কামাল হোসেন।
সোনাডাঙ্গার মহাম্মদ নগর মহিলা আলিম মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে ভবনের সামনেই ছিল মহিলাদের দীর্ঘ লাইন। ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না পেরে নুরজাহান বেগম আনসার সদস্যদের সঙ্গে চেঁচামেচি করছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভোটার স্লিপ দিয়ে

এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ভোট দিতে পারছেন না। পুলিশ সদস্য রফিকুল জানান, ভেতরে বুথের সামনে লাইন থাকায় বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে অল্প অল্প করে ভোটারদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে এই ভোট কেন্দ্রটিতে ভোটার উপস্থিতি এবং কাস্টিং ভোট অনেক কেন্দ্রের চেয়ে বেশি।
আবার যশোর রোডের পোর্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র একেবারেই ফাঁকা ছিল। প্রথমবার ভোট দিয়ে কলেজছাত্রী সুমাইয়া ও অরণি জানান, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেয়ার পদ্ধতি জানা থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিসমিল্লাহ মহল্লা এলাকার গৃহবধূ সুলতানা রহমান বলেন, আমি সকাল ৭টায় ভোটকেন্দ্রে এসে দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ইভিএমএ ভোট দিতে অনেকেই দেরি করছে। ফলে সবারই ভোট দেয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এই কেন্দ্রের ভোটার আছিয়া বেগম জানান, ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে ধীরগতির কারণে ভোটারদের সমস্যা হচ্ছে। এ কারণেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে।
খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ভোটকেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৭। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন অফিসার সত্য দেবনাথ। সোনাডাঙ্গা এলাকার খুলনা কলেজ ও পল্লীমঙ্গল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। একই এলাকার ইসলামাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৪১% ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম।
নিরালা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ২২ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার সুশান্ত কুমার সাহা। ২৯নং ওয়ার্ডের খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ড. মো. হাফিজুর রহমান জানান, তার কেন্দ্রের ১ হাজার ৯৮২টি ভোটের মধ্যে ৮৪০ ভোট কাস্ট হয়েছে।
নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ন্যাশনাল গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্রে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন ধরে। নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ছিল ভোটারদের দীর্ঘ লাইন।
গতকাল বিকাল ৫টায় খুলনা সিটি করপোরেশনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন। ফলাফল ঘোষণার শুরুতে তিনি বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা আবার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলাকালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে হয়নি। আমরা কোনো অভিযোগও পাইনি।
প্রসঙ্গত, মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। এই সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন পাঁচজন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের শফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের আবদুল আউয়াল, জাকের পার্টির গোলাপফুল প্রতীকের এস এম সাব্বির হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ালঘড়ি প্রতীকের এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক। এছাড়া ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৬ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। যার মধ্যে নগরীর ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়