শাহজালালে ১২ কোটি টাকার কোকেনসহ ভারতীয় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

খুলনায় খালেকের হ্যাটট্রিক, বরিশালে খোকন : খুলনায় শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম > তালুকদার আবদুল খালেক ১,৫৪,৮২৫ ভোট, আবদুল আউয়াল ৬০,০৫৪ ভোট

পরের সংবাদ

জামায়াত নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দীর্ঘ এক দশক পর প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে রাজধানী ঢাকায় প্রকাশ্যে সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটির হঠাৎ প্রকাশ্যে রাজনীতিতে পুর্নবাসন নিয়ে গত দুই দিনে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন। সব জায়গায় একই আলোচনা- কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী এই সংগঠনটি প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি পেল। সবার মনে প্রশ্ন, তাহলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত কি আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরছে? নাকি মার্কিন নতুন ভিসানীতির কারণে সরকার তার কৌশলে পরিবর্তন এনেছে? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো সমীকরণ রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বিষয়টি নিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন।
যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচন সামনে রেখে আবারো আগুনসন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিতে বিএনপিই জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াতের বিষয়ে চিরমিত্র দল বিএনপি কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। দলটি বলছে, সব রাজনৈতিক দলেরই সভা-সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজধানীতে এক শান্তি সমাবেশে বলেছেন, জামায়াত মাঠে নামেনি, তাদের নামানো হয়েছে। তাদের মাঠে নামিয়েছে তাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি। তিনি বলেন, জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল নয়। এরপরও তাদের মাঠে নামানোর অর্থ হচ্ছে, বিএনপি আবারো আগুনসন্ত্রাসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগুনসন্ত্রাস ও সা¤প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি।
এদিকে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীকে দোষী বলা যাবে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। এ-সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনের জন্য কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। বিচার করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত জামায়াতকে নিষিদ্ধ বলা যাবে না। এ সময় জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। আমি কিছু জানি না।
জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক কারণে দেয়া হয়েছে। দেখা যাক, এটি সময়ই আমাদের বলে দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে রাজ্জাক বলেন, তারা (জামায়াত) রাজনৈতিক দল। সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক ও গ্রহণযোগ্য না থাকায় তাদের (জামায়াত) নিবন্ধন বাতিল করেছিল হাইকোর্ট। নিবন্ধন বাতিল হলেও তাদের সংবিধান অনুযায়ী সভা-সমাবেশ করার সুযোগ আছে। এছাড়া তাদের তো অনেক জনসমর্থন আছে। এই পরিস্থিতির আলোকে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন, সামনে কী হয় দেখতে পাবেন।
গতকাল সচিবালয়ে তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জামায়াতের সমাবেশ থেকে যেভাবে আস্ফালন করা হয়েছে তা আসলে জামায়াতের বক্তব্য নয়, বিএনপির বক্তব্য। তারা নির্বাচন প্রতিহত করার কথা বলেছে। অর্থাৎ ২০১৪ সালে যেভাবে নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, সেটারই ইঙ্গিত তারা দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান শরিক হচ্ছে জামায়াত। বিএনপি-জামায়াতকে দিয়ে এসব কথা বলিয়েছে। জামায়াতকে মাঠে নামার সুযোগ দেয়া হলো কেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক দল সমাবেশ করতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হলে তাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার থাকে না। জামায়াত যেহেতু নিষিদ্ধ দল নয়, তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে সমাবেশের জন্য আবেদন করেছিল, সেজন্য তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, দীর্ঘ বছর পর হঠাৎ জামায়াতকে

সমাবেশের অনুমতি দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, জামায়াতের বিষয়টা বিস্ময়কর। সরকার এতটাই দ্বিধান্বিত, কী করবে বুঝতেই পারছে না। কারণ জামায়াত যখন অনুমতি চাইতে গেছে, তখন তাদের গ্রেপ্তার করা হলো। আবার দেড় ঘণ্টার মধ্যে ছেড়েও দিয়েছে। পরে সমাবেশের অনুমতিও দিয়েছে। এর চাইতে সরকারের অস্থিরতা বেশি কী দেখবেন? রাজনৈতিকভাবে তারা একটা সমস্যাও মোকাবিলা করতে পারেনি। জামায়াতকে তারা এতদিন কেন অনুমতি দেয়নি? এই প্রশ্নগুলো মানুষের মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে এর উত্তর চাই। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বললেন- বিএনপির উসকানি ও মদদ পেয়ে জামায়াত সমাবেশ করেছে। প্রশ্ন হলো- আপনারাই তাদের ১০ বছর পর অনুমতি (সমাবেশ) দিয়েছেন, আবার বলছেন বিএনপি তাকে উসকানি দিয়ে রাজপথে নামাচ্ছে। সরকার যে অসংলগ্ন আচরণ করছে, নানা বিষয়ে সরকারের যে অস্বস্তি, এটা তার বহিঃপ্রকাশ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবার আছে। কাউকে না করতে দেয়া সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ। এখানে প্রশ্নটা হলো- গত ১৫ বছর ধরে সরকার জামায়াতকে তাদের শত্রæ বলে চিহ্নিত করে আসছে। তারা যে কোনো আন্দোলনকে জামায়াতি নাম দিয়ে ব্র্যান্ডিং করেছে। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের আন্দোলন হলো- ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে ফের জামায়াতি ব্র্যান্ডিং (সামনে) দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। অর্থাৎ বিরোধী দলের পুরো আন্দোলনকে সন্ত্রাসের ব্র্যান্ডিং করে সরকার তার দেশি এবং বিদেশি পক্ষগুলোকে তুষ্ট করতে চাইছে।
এদিকে এক সময়ের সাবেক ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। সমাবেশ করতে কেন অনুমতি লাগবে? জামায়াতকে এত বছর অনুমতি না দেয়ার বিষয়টি অগণতান্ত্রিক। জামায়াতও কেন এতদিন সমাবেশ বা রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি চায়নি সেটা তারা বলতে পারবেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমকে বলেন, একাত্তরের গণহত্যার দায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলটি দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না। এই দলকে সরকার কেন সমাবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে তা বোধগম্য নয়। আমরা ক্ষুব্ধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়েও জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় দলটির অবিলম্বে বিচার হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, গঠনতন্ত্রে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধান থাকায় উচ্চ আদালত কর্তৃক নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর প্রকাশ্যে গত শনিবার রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করে। ডিএমপির অনুমতি সাপেক্ষে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশ করে সংগঠনটি। যদিও যুদ্ধাপরাধসহ নানা কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়া জামায়াত প্রায় এক যুগ প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ পায়নি। তবে বিভিন্ন সময় তারা ঝটিকা মিটিং-মিছিল করেছে। একই সময়ে ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলোও বন্ধ রয়েছে। এমনকি ঘরোয়াভাবেও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মিটিং করতে গেলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচার শেষে দলটির সিনিয়র কয়েকজন নেতার মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধেরও দাবি আছে বিভিন্ন মহলের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়